• বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১
  • ||

খুলনায় খাল খননের নামে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন

প্রকাশ:  ০১ জুন ২০২৪, ২১:৪৮ | আপডেট : ০১ জুন ২০২৪, ২১:৫০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারাদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী বৃক্ষ রোপণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ঠিক তখনই খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাইকিং করে স্থানীয় নাককাটি নামক একটি খালের উভয় পাড়ের গাছ কেটে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে অনেক গাছ কেটেও ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খান মাসুম বিল্লাহ বলেন, বিষয়টি অবগত হওয়ার পরই গাছ কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জীবন্ত বৃক্ষ নিধন রোধে পরিবেশবাদী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এলাকাবাসী জানান, মৎস্য অফিসের তত্ত্বাবধায়নে ‘শরীফ এন্ড ফিলামেন্ট’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ব্রহ্মগাতি গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নাককাটি খালটি খননের জন্য কার্যাদেশ পেয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে কাজ সমাপ্তির মেয়াদ রয়েছে। খালের দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার। ৫৬ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬৮ টাকার কার্যাদেশ পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর আগেই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলামের মাধ্যমে এলাকায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার করে নাককাটি খালের উভয়পাড়ের ব্যক্তি মালিকানা জমির বিভিন্ন প্রজাতির জীবন্ত গাছ, ঘরবাড়ি ও মৎস্য ঘের সরিয়ে ফেলার জন্য। তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার এ নির্দেশনা দেওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস্কেভেটর মেশিন চালিয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয়দের বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫ হাজার জীবন্ত গাছ কেটে ফেলেছে। মৎস্য ঘেরের বেড়িবাঁধও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ কাজে স্থানীয়রা বাধা দিলে তাদের ভয় ও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নওয়াব আলী বলেন, মৎস্য অফিসের মাইকিংয়ের ফলে এস্কেভেটর চালকরা জোর করে আমাদের গাছগুলি উপড়ে ফেলে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা আমার বিভিন্ন প্রজাতির ১০০ গাছ ইতোমধ্যে উপড়ে ফেলেছে।

অপর বাসিন্দা সাবর আলী বলেন, নিজের জমি থেকে ঘর সরিয়ে নিতে ঠিকাদারের লোক ও এসকেভেটর চালকরা চাপ দিচ্ছেন। ঘর সরানো না হলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ভয়ও দেখানো হচ্ছে।

কামাল হোসেন, নিতাই দাস, হামিদ শেখসহ স্থানীয় অন্য বাসিন্দাদের অভিযোগ, মৎস্য কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলামের করা মাইকিংয়ের কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। এ সুযোগে ঠিকাদারের লোক ও এস্কেভেটর চালক জোর করে খালের উভয়পাড় থেকে জীবন্ত গাছ উপড়ে ফেলে দিচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইবনুল হাসান মিনার জানান, তার পাশের একটি জায়গা থেকে জোর করে এস্কেভেটর চালক জীবন্ত গাছ উপড়ে ফেলেছে। তার জায়গার গাছ কাটতে বাঁধা দিলে তারা সরকারি কাজে বাঁধা প্রদানের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম মাইকিং করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, খালের উভয় পার্ট (অংশ) থেকে গাছগুলো সরিয়ে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মাসুম বিল্লাহ বলেন, পরিবেশবান্ধব গাছ কোনভাবেই কাটা যাবে না। খাল খনন করতে খালের দুই পাড়ের গাছ কোনভাবেই কাটা ও ঘর ভাঙা যাবে না।

তিনি আরো বলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাইকিংয়ের মাধ্যমে জীবন্ত গাছ কেটে ফেলার নির্দেশনা দিতে পারেন না। তিনি মাইকে প্রচারের মাধ্যমে কেন গাছ কাটার নির্দেশনা দিয়েছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

মৎস্য বিভাগের ডেপুটি প্রজেক্ট ডাইরেক্টর সরোজ কুমার মিস্ত্রি বলেন, খাল খনন করতে দুই পাড়ের গাছ ও ঘর নষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কেন মাইকিং করছেন বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।

তিনি আরও বলেন, গত বছর দিঘলিয়ায় একটি খালের টেন্ডার হয়েছিল। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, খালের দুই পাড়ের গাছ কাটার দরকার। এজন্য সেই টেন্ডার বাতিল করা হয়েছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রোপ্রাইটার আরিফুর রহমান বলেন, আমাদের গাছ কাটার কোনো নির্দেশনা নেই। আমরা কাটতেও পারি না। গাছ না কেটে যদি খাল খনন করতে বলে তাও আমরা করবো। আমার কোনো লোক, ম্যানেজার বা এস্কেভেটর চালক এলাকাবাসীর গাছ কাটা ও ঘর ভাঙার যদি হুমকি দিয়ে থাকেন তাহলে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।

খুলনা,খাল,অভিযোগ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close