• বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সরকারের ভেতর কী হচ্ছে?

প্রকাশ:  ০১ জুন ২০২৪, ০০:৩৮
সৈয়দ বোরহান কবীর

বুধবার (২৯ মে) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর দুইজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছাটাই হয়েছেন। একজন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২, অন্যজন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব। টানা চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের চুক্তি নবায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু চার মাসের মাথায় তাদের চুক্তি বাতিল হলো। সাবেক সেনাপ্রধান এবং সাবেক পুলিশ প্রধানের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যখন দেশজুড়ে তোলপাড় তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই দুই কর্মকর্তার ছাটাই নানা প্রশ্ন সামনে এনেছে। এটি কী সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের একটি অংশ নাকি অস্থিরতার প্রকাশ? হঠাৎ করেই দুর্নীতির ইস্যু জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে এসেছে। এটি কী সরকারের জন্য চাপ না কৌশলের অংশ? একের পর এক ঘটনার পর আকাশে বাতাসে না প্রশ্ন। সরকারের ভেতর কী হচ্ছে?

টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের বয়স মতে সাড়ে চার মাস। কিন্তু এর মধ্যেই সরকারের ভেতর সমন্বয়হীনতা প্রকট হয়ে উঠেছে। সরকারের কাজ-কর্মে স্ববিরোধিতাও স্পষ্ট। সরকারের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা। কোথায় যেন ছন্দপতন। এর মধ্যেই দুর্নীতির ইস্যু সবার আলোচনার প্রধান বিষয়। সব কিছু কী ঠিক আছে?

সম্পর্কিত খবর

২০ মে, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের কথাই ধরা যাক। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। তিনি বললেন, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ঢাকায় চলবে না, এ সিদ্ধান্ত তাকে জানানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বললেন, স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকার একটি উপায় হলো ব্যাটারি চালিত এই অটোরিকশা। তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে হুট করে এভাবে রাজধানীতে অটো রিকশা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এদের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়নেরও নির্দেশনা দিলেন।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলে। এগুলোর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, কোন আইন, রুট পারমিট নেই। কীভাবে অটোরিকশা গুলো শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন প্রশ্ন ছিল। বিশেষ করে বিদ্যুৎ সংকটের এই সময়ে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা গুলো অবৈধভাবে বিপুল বিদ্যুৎ ব্যবহার করতো। এটি বন্ধের জন্য আইন প্রণয়ন এবং ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাকে রাস্তা থেকে প্রত্যাহারের একটি সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। কিন্তু তা না করে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান নেতা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে না। ১৭ মে থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছিলো। হুট করে নেয়া এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অটোরিকশা চালকরা রাজপথে নেমে আসেন। তাদের দাবি, তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অটোরিকশা চালাচ্ছেন। এটিই তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়।

অটোরিকশা চালকদের মূল দাবি ছিল যে, বিকল্প ব্যবস্থা না করে অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত তাদেরকে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেবে। জীবিকা এবং কর্মসংস্থানকে হুমকির মুখে ফেলবে। এই অবস্থা চলে দুইদিন। দুই দিনের মধ্যেও সরকারের পক্ষ থেকে অটোরিকশা চালকদের আন্দোলন বন্ধের জন্য কোন সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে এলেন। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী এবং বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের কারণে ঢাকা শহরে একটি আসন্ন শ্রেণী পেশার আন্দোলন থেকে সরকার রক্ষা পেল। প্রশ্ন হলো প্রধানমন্ত্রী যদি বোঝেন যে, স্বল্প আয়ের মানুষকে কর্মহীন করে হুটহাট এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। তাহলে মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেন বোঝেন না। ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত কে নিয়েছিল? তাহলে কী প্রধানমন্ত্রীর অগোচরে এরকম অনেক জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়?

সরকারের মন্ত্রীরা প্রায় বলেন তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া ভাঁজা মাছটিও উল্টে খান না। বাজারে এমন একটি আবহ তৈরি করা হয় যে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া কোন মন্ত্রী যেন কোন কাজই করেন না। কিন্তু এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর অগোচরে কীভাবে হলো?

শুধু যে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার ক্ষেত্রে এ রকম ঘটনা ঘটছে, তা না। হর হামেশাই সমন্বয়ের সংকট এখন দৃশ্যমান। দেশে অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে এখন লুকোচুরি কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী সব ক্ষেত্রে কৃচ্ছতার নীতি অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। সংসদ সদস্যদের বিনা শুল্কে গাড়ী কেনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যেই ডিসি-ইউএনওদের জন্য ২৬১ টি বিলাস বহুল গাড়ী কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কার স্বার্থে এই গাড়ী কেনা? কৃচ্ছতা নীতি কী তাহলে আমলাদের জন্য প্রযোজ্য নয়? বিনা প্রয়োজনে বিদেশে না যাওয়ার অনুশাসন দেয়া হয়েছে। অথচ আমলাদের বিদেশ যাত্রার উৎসব অর্থবছরের শেষে প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাজেটে বিদেশ ভ্রমণের খাত আছে, তাই টাকা উড়াও। প্রয়োজন থাক আর না থাক।

টানা চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করা আওয়ামী লীগ সরকারের সমন্বয়ের সংকট ক্রমশ একটি ব্যাধি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। কদিন আগেই শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী চাকরির বয়স সীমা ৩৫ বছর করার পক্ষে একটি চিঠি দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে। চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বাড়বে কী কমবে, বা চাকরিতে অবসরের মেয়াদ কত হবে এটি সরকারের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত। আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে কোথাও ঘোষণা করেনি যে, তারা ক্ষমতায় এলে চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বৃদ্ধি করবে। কিন্তু হুট করেই তরুণ শিক্ষা মন্ত্রী চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বৃদ্ধির জন্য একটি চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দিলেন। সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি দলের পরামর্শ ছাড়া এধরনের চিঠি তার সহকর্মীকে নিতে পারে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। একজন মন্ত্রী সরকার পরিচালনায় একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি একদিকে যেমন গোপনীয়তার শপথ নেন। তেমনি পক্ষপাতহীন দায়িত্ব পালনেরও শপথ গ্রহণ করেন। তাই শিক্ষা মন্ত্রী যখন এধরনের কোন চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দেন এখন তা সরকারের ভেতর এক ধরনের সমন্বয়হীনতারই প্রকাশ। এই ঘটনার ফলে সরকারি চাকরিতে আগ্রহী তরুণরা উৎসাহিত হয়েছে, তাদের আন্দোলনের গতি বেড়েছে। গত কিছুদিন ধরে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। শিক্ষা মন্ত্রীর প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। সরকার আপাতত চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা করছে না বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।

নানা কারণে এখন সরকার চাকরির বয়সসীমা বাড়াতে চায় না। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সঠিক কী ভুল সেটি আলাদা বিষয়। কিন্তু একজন মন্ত্রী, যিনি সরকারের একজন নীতিনির্ধারকও বটে, তিনি সরকারের অবস্থানের বিরুদ্ধে চিঠি লিখেন কীভাবে? সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর নিজস্ব মতামত থাকতেই পারে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ এ করার ক্ষেত্রে তার অসংখ্য যুক্তি থাকতে পারে। এটি দলীয় ফোরাম বা মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি উত্থাপন করতে পারতেন। দলীয় ফোরামে এটি নিয়ে আলোচনা হলেই বিষয়টি সুষ্ঠু এবং গণতান্ত্রিক হতো। এতে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতো। কিন্তু মন্ত্রী যখন সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য বিষয়টি প্রকাশ্যে উত্থাপন করেন তখন জনগণের মধ্যে প্রশ্ন উঠে সরকারের ভেতর কী হচ্ছে? সরকার কী ফ্রি স্টাইলে চলতে পারে?

সমন্বয়হীনতার এরকম নজীর অনেক। সাম্প্রতিক সময়ে মেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপ করা হবে কি না এ নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। ইতোমধ্যে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এনবিআরের কাছে এক চিঠি লিখে মেট্রোরেলের ভাড়ার উপর এখনই যাতে ভ্যাট আদায় না করা হয় সেজন্য অনুরোধ জানায়। এনবিআর সেই অনুরোধ নাকচ করে দেয়। এনবিআরের বক্তব্য হলো এখন মেট্রোরেল জনপ্রিয় হয়েছে কাজেই এখান থেকে ১৫% হারে ভ্যাট আদায় করাই সঠিক হবে। এনবিআরের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, এনবিআর এর এই সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে সাংবাদিকদের জানান। এনবিআর আর সেতু মন্ত্রীর লড়াই এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এবারের বাজেটে এনবিআরের পক্ষ থেকে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির জন্য যে সমস্ত প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে মেট্রোরেলে ১৫% ভ্যাটের বিষয়টিও অন্তর্ভূক্ত। এটি জানার পর সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এনবিআরের সিদ্ধান্তকে ভুল হিসেবে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। প্রশ্ন হলো, এনবিআর কি সরকারের বাইরের কিছু? এনবিআর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। সরকারের দুই প্রতিষ্ঠানের প্রকাশ্য যুদ্ধ কেন? এতে কার লাভ? এর ফলে জনগণের মধ্যে ধারণা হচ্ছে, সরকারের চেইন অব কমান্ড নেই।

এনবিআর এবং সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। এটিই গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই মত পার্থক্য মাঠে আলোচনার বিষয় না। মত পার্থক্য প্রকাশ্যে বিতর্কেরও কোন বিষয় নয়। এনবিআর বা সড়ক পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রণালয় কী অনুধাবন করত পেরেছে এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সরকারের সমন্বয়হীনতা জাতির সামনে উন্মোচিত হয়। এই বিষয়টি অনেক শোভন এবং সুন্দরভাবে করা যেতে পারতো। এনবিআরের চেয়ারম্যান, অর্থমন্ত্রী, সেতু মন্ত্রী এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আলাদা ভাবে বৈঠক করতে পারতেন। যে যার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে পারতেন এবং শেষ পর্যন্ত যদি তারা ঐক্যমতে না হয় তাহলে সকলে মিলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে পারতেন। আমাদের সৌভাগ্য হলো আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণ, দায়িত্বশীল একজন মানুষ। তিনি দিনরাত ২৪ ঘণ্টা দেশের কল্যাণের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেন। তার একটি অভাবনীয় ক্ষমতা রয়েছে। তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়। এরকম একজন প্রধানমন্ত্রী পাওয়ার পর কেন দু’টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ প্রকাশ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করে জনগণের বিভ্রান্ত করেন?

গত ২০ মে মধ্যরাতের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেয়। মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে দায়িত্বশীল প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, এটি ব্যক্তির বিষয়। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আগেই সরকারকে অবহিত করা হয়েছিল বলেই তিনি উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হবে না। কিন্তু তার পরদিনই হুমকি দিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বললেন, নিশিরাতের স্যাংশনের পরোয়া করি না। আজিজ আহমেদের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তাহলে কার বক্তব্য সঠিক? কোনটি সরকারের বক্তব্য? এখন আজিজ আহমেদ বেনজীররকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের কথায় বাহাস চলছে। তারা যেন একেকজন ধোঁয়া তুলসীর পাতা। কারো কারো অতি কথনে জাতি বিভ্রান্ত। আসলে কী হচ্ছে?

একটি সরকার সামষ্টিক রূপ। সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগ, মন্ত্রণালয় এবং নানারকম প্রতিষ্ঠান জড়িত। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমন্বয় থাকা উচিত। মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে একে অন্যের মধ্যে সমন্বয় থাকা উচিত এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকা জরুরী। সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় যদি কেউ তার ভিন্ন মত বা অবস্থান প্রকাশ্যে বলেন সেক্ষেত্রে তার লাভ হতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী করে। যেটি এখন আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছি। যেমন পেঁয়াজের মজুত কত বা পেঁয়াজের উৎপাদন কত এ নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবের সাথে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব নাই। বাজারে কাঁচা মরিচের দাম হু হু করে বাড়ছে। কাঁচা মরিচের চাহিদা কত তা নিয়ে একেক মন্ত্রণালয়ের একেক হিসেব। বাজার এখন সিন্ডিকেটের দখলে বলে চিৎকার চেঁচামেচি করা হচ্ছে। কিন্তু সিন্ডিকেট বন্ধ করা কার দায়িত্ব এবং সিন্ডিকেট বন্ধের জন্য কারা কাজ করবে সেটা নিয়ে এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের ‘পিলো পাসিং’ খেলা চলে। সরকারের মধ্যে যদি ছোট ছোট অনেকগুলো সরকারের উদ্ভব ঘটে তাহলে সেটি বিপজ্জনক। মন্ত্রীরা যদি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেন, তাহলে প্রশ্ন ওঠে সরকার কে চালায়? টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের মধ্যে একটি বেপরোয়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা যেকোন সংকট সমাধানের জন্য নিজেরা দায়িত্ব নিচ্ছে না এবং একে অন্যকে দোষারোপ করার একটি প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। আত্মতুষ্টিতে বলীয়ান সরকার বেনজীরের সম্পদ জব্দ করা নিয়েও তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে। কিন্তু বেনজীর তো একদিনে এই বিপুল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেনি। তখন তো কেউ কিছু করেনি। এখন এতো হৈ চৈ কেন? সরকার কি নিজের ফাঁদে পা দিচ্ছে? অন্ধকারে সরকার কী লক্ষ্যহীন ভাবে পথ হাতড়াচ্ছে?

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

সৈয়দ বোরহান কবীর×
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close