• শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১
  • ||

পাঠ্যবইয়ে নতুন গল্পের সুপারিশ, হিজড়াদের ভিন্ন চোখে দেখা যাবে না

প্রকাশ:  ০২ জুলাই ২০২৪, ২২:০২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

নতুন শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে আলোচিত ‘শরীফার গল্প’ বাদ দেওয়া হলেও নতুন করে হিজড়াদের পরিচিতি তুলে ধরে গল্প সংযুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ে পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘কুসংস্কার বা কোনও বোধেই তাদেরকে ভিন্ন চোখে দেখা যাবে না।’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহপাঠী কেউ হিজড়া হলে শিক্ষার্থীরা যেন তাকে নিজ পরিবারভুক্ত ভাইবোনের মতো মনে করে, আচার-আচরণ করে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে।

নতুন কারিকুলামে ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ তুলে ধরতে ‘শরীফার গল্প’ উপস্থান করা হয়েছিল সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে। এই গল্পটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এর এক পর্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ পর্যালোচনায় উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত জানুয়ারিতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রশীদকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিম এবং ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ।

কমিটি জুন মাসের শেষ দিকে ‘শরীফার গল্প’টি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে। একইসঙ্গে পাঠ্যবইয়ে হিজড়াদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরার সুপারিশ করা হয়।

জানতে চাইলে কমিটির সদস্য এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) ও এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে শরীফার গল্পটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির জন্য এই গল্পটা বইয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। অন্য কোনও গল্পের মাধ্যমে এই বিষয়টি অ্যাড্রেস করতে সুপারিশ করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে যা কার্যকর করা হবে। সুতরাং, আমাদের লার্নিং মিস হচ্ছে না। আমাদের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে না। আগামী বছর পাঠ্যবইয়ে হিজড়াদের নিয়ে একটি লেখা থাকবে।’

অধ্যাপক মশিউজ্জামান আরও বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিখন অর্জন। শিখন অর্জনে কোনও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি, প্রতিবন্ধকতাও তৈরি হচ্ছে না। যেহেতু এটা নিয়ে বিতর্ক আছে, আপত্তি আছে, সুতরাং শরীফার গল্পটি পরিবর্তন করে অন্য গল্পের মাধ্যমে হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা যাবে।’

কমিটির সুনির্দিষ্ট সুপারিশে বলা হয়, ‘হিজড়ারা অন্যান্য শিশুর মতোই পরিবারেই জন্মগ্রহণ করে। মায়ের সন্তান, পুত্র অথবা কন্যা অথবা হিজড়া হিসেবেও জন্মলাভ করতে পারে। তারা পরিবারেরই সদস্য। হিজড়াদেরকেও পরিবারের অন্যান্য শিশু তথা পুত্র-কন্যাদের মতোই মায়া-মমতায় লালন পালন করতে হবে। আত্মীয়-স্বজন ও সমাজের সবাইকে তাদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মিলেমিশে চলতে হবে, ইসলাম এ নির্দেশনা দিয়েছে। কুসংস্কার অথবা অন্য কোনও বোধে তাদের ভিন্ন চোখে দেখা যাবে না। শিক্ষার্থীদের সহপাঠী যদি হিজড়া হয়, তাহলে তাদেরকে নিজ পরিবারভুক্ত ভাইবোনের মতো মনে করে আচার-আচরণ করার জন্য নির্দেশনা দিতে হবে। মূলত পাঠ্যপুস্তকে উপস্থাপিত যেকোনও কনটেন্টের মুখ্য উদ্দেশ্য এটিই হওয়া উচিত। অতএব, এই আলোকে ইসলামি চিন্তাবিদদের মাধ্যমে যাচাই করে পাঠ্যপুস্তকে সংক্ষিপ্তভাবে হিজড়াদের পরিচিতি উল্লেখ করা যেতে পারে।’

হিজড়া,পাঠ্যবই,নতুন গল্প
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close