• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

হিরো আলমের আত্মপরিচয় ও স্বাধীনতা এবং পুলিশ-গোয়েন্দার ম্যান্ডেট

প্রকাশ:  ৩০ জুলাই ২০২২, ১৭:১১
জিয়াউল হক মুক্তা

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একুশ শতকে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমের কতিপয়, বিশেষ করে ফেইসবুক, মানব-প্রজাতির বিহেভেরিয়াল-মডিফিকেশন বা আচরণগত-পরিবর্তনের প্রধানতম টুল বা উপকরণ হিসেবে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। এসব প্রযুক্তির মালিকরা ব্যবহারকারিদের সকল তথ্য বিনামূল্যে পান ও ব্যবহার করেন। কয়েক বিলিয়ন জনগণের বিলিযন-বিলিয়ন তথ্যের বিশাল ভাণ্ডার বা বিগ-ডাটা-জেনারেটেড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান হারের প্রয়োগ মানব প্রজাতির আচরণগত পরিবর্তনকে আরো দ্রুতগতি দেবে।

আচরণগত পরিবর্তনের ভালো ও মন্দ উভয় মাত্রাই রয়েছে; তবে মন্দ মাত্রাটি ভালো মাত্রাটিকে ছাপিয়ে ক্রমে প্রখর, প্রকট ও ক্ষতিকর হয়ে উঠছে। আমাদের আচরণে অসহিষ্ণুতা, অস্থিরতা, বিরোধিতা, পরচর্চা, নিন্দা, কুৎসা, ঘৃণা, নার্সিসিজম ইত্যাদি চারিত্র্যবৈশিস্ট ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। সুশিক্ষা, দীর্ঘমেয়াদি ধারাবাহিক প্রচারণা ও সামাজিক-আইনগত নজরদারি-খবরদারির মাধ্যমে আমাদের আচরণে এসব ঋণাত্মক ও পশ্চাদপদ উপাদানগুলো ধারনের পরিমিতিবোধকে জাগ্রত ও বিকশিত করতে পারে।

এক্ষেত্রে ও অপরাপর সর্বক্ষেত্রে এই পরিমিতিবোধই হচ্ছে আমাদের মানব চরিত্রের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

মানব আচরণের এসব ঋণাত্মক ও পশ্চাদপদ উপাদান আর এতদ্বিষয়ক পরিমিতিবোধ বিষয়ক এ আলোচনার সাথে সাথে এখানে আলোকপাত করা প্রয়োজন বিদ্যমান আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পরিধি বা ম্যান্ডেট নিয়ে।

উদাহরণ হিসেবে বহুল আলোচিত হিরো আলম ওরফে আশরাফুল হোসেনের প্রসঙ্গটি সামনে আনা যেতে পারে। হিরো আলম সম্প্রতি একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন ও ইউটিউবে তা আপলোড করেছেন। ভিন্নতর আঞ্চলিক বাচনভঙ্গির কারণে তার গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতটি বিশুদ্ধ ও প্রচলিত গায়কির রবীন্দ্রসঙ্গীতের শ্রোতাদের কাছে তা এক চরম অত্যাচার হিসেবে অনুভূত হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এমন নয় যে হিরো আলম কাউকে অনুরোধ বা বাধ্য করেছেন তার গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে। বরং এসব শ্রোতারা নিজেরাই উপযাচক হয়ে তার গাওয়া গান শুনেছেন; এবং অসহিষ্ণুতা ও অস্থিরতার সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরোধিতা-নিন্দা-ঘৃণা প্রকাশ-প্রচার-সংগঠিত করেছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসূত্রে আজ এও বলা যায় নির্দ্বিধায় যে— যে যা দেখতে-শুনতে পছন্দ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সেগুলোই তার সামনে উপস্থাপন করে, তাদেরকে নোটিফাই করে। একথা বললে এতটুকু অতিরঞ্জন হবে না যে এরকম তথাকথিত রুচিহীন বিষয়গুলো আধুনিক প্রযুক্তি কেবলমাত্র সমরুচির ভোক্তাদের সামনে হাজির করে; পুরো ক্যাওয়াসটি হলো তথাকথিত রুচিহীনদের ক্যাওয়াস।

এরকম দর্শক-শ্রোতারা এটিএন চ্যানেলের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমানকে নিয়েও করে থাকেন— নিজ মালিকানার চ্যানেল থেকে নিজের ও স্ত্রীর গাওয়া গান প্রচারের জন্য। তারা এমনটি করে থাকেন চ্যানেল আই-এর স্বত্বাধিকারী ফরিদুর রেজা সাগরের বোন কেকা ফেরদৌসিকে নিয়েও— ভাইয়ের চ্যানেল থেকে তার রান্নার অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য। মালিকানাসূত্রে তাদের যথেচ্ছাচারকে দর্শক-শ্রোতারা পাবলিক ন্যুইসেন্স হিসেবে মনে করে থাকেন। আরো অনেককে নিয়ে অনেক কারণে এই অসহিষ্ণু ও অস্থির কমিউনিটি এমনটি করে থাকেন। যদিও এটিএন বা চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ দর্শকদের জেলে পুরে ডান্ডা হাতে উল্লিখিত অনুষ্ঠান দেখতে বাধ্য করেননি; দর্শকরা স্বেচ্ছায় বিজ্ঞাপিত অনুষ্ঠানগুলো দেখেছেন; আর দেখার উদ্দেশ্য ছিল শিল্পের উপভোগ নয়, উদ্দেশ্য ছিল পরছিদ্রান্বেষী হিসেবে বিরোধিতা-নিন্দা-ঘৃণা-কুৎসা-বিদ্বেষ প্রচার ও সংগঠিত করা। এভাবে এই দর্শকরা নিজেদের চারিত্রিক স্খলন ও কলুষতাকেই লালন করেছেন। অবশ্য এক্ষেত্রে প্রতিযোগী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের শিল্পী-কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও জাজমেন্টাল মতামত গঠনে ক্যাম্পেইনারের ভূমিকা রেখেছেন।

হিরো আলম, মাহফুজুর রহমান ও কেকা ফেরদৌসির প্রতি বহুমাত্রিক মানহানিকর আচরণ প্রদর্শন করা হলেও শেষের দুই জনের প্রতি কোন প্রাতিষ্ঠানিক আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, যা করা হয়েছে প্রথমজনের প্রতি। বিবিসি জানিয়েছে যে হিরো আলমকে সম্প্রতি গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ তাকে গান গাইতে নিষেধ করেছে, এমনকি তার নাম পাল্টানোরও নির্দেশ দিয়েছে।

পুলিশের এ আচরণ অগ্রহণযোগ্য; তারা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ম্যান্ডেটের সীমা লংঘন করেছে। উপরন্তু গণমাধ্যমের মালিকদের ক্ষমতার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত পুলিশ-গোয়েন্দা মাহফুজুর রহমান বা কেকা ফেরদৌসিকে পুলিশ কার্যালয়ে না নিয়ে কেবল হিরো আলমকে সেখানে নিয়ে বৈষম্যমূলক আচরণ প্রদর্শন করেছে। হিরো আলমের সাথে অন্যায় করা হয়েছে।

প্রতিবেদন পুলিশের ভাষ্যে জানা যায় তারা তাকে 'বিকৃতভাবে' গান গাইতে নিষেধ করেছে। আমাদের পুলিশ সঙ্গীত বিষয়ে পণ্ডিত হলো কবে? এ বিষয়ে পুলিশ পণ্ডিত হলে ইউটিউব ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত লক্ষ লক্ষ বিকৃত গানের ভিডিও নিয়ে তারা নিরব-নিথর-নিষ্ক্রিয় কেন?

গান অনুভবের শৈল্পিক উপস্থাপন; গানের চেয়ে ভাষা ব্যাপকতর; ভাষা মানবপ্রজাতির যোগাযোগ-মাধ্যমের প্রধানটি। সেই ভাষা (এখানে বাংলা ভাষা) বিকৃত করে এফএম রেডিওগুলো যে ভয়াবহ কুকীর্তি চালিয়ে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে, পুলিশের শুদ্ধতাপ্রীতি তখন কোন আন্ডারপ্যান্টের বুকপকেটে লুকোনো থাকে? ভাষা-বিকৃতি বিষয়ে সরকার ও আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও পুলিশ কীসের ভয়ে নিথর? অনন্ত জলিলের বিকৃত ভাষা কিংবা বিপুলামাংসল ময়ূরীর নাচসমেত যে চলচ্চিত্র তৈরি ও প্রদর্শিত হয়, পুলিশ ও গোয়েন্দারা তখন ঠুলি পরে থাকে কেন? অগণিত প্যারোডি নিয়ে এই পণ্ডিতপুলিশদের মত কী?

হিরো আলমকে নাম পাল্টানোর নির্দেশ দিয়ে তার আত্মপরিচয়ের অধিকারের বিরুদ্ধে পুলিশ চরম অপরাধ সংঘটিত করেছে। পুলিশের এ অপকর্মের জন্য আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা দাবি করছি, পুলিশ প্রধানের কাছ থেকে জাতির প্রতি নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি করছি ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দাবি করছি।

আমি নিজে হিরো আলম, মাহফুজুর রহমান, কেকা ফেরদৌসি, অনন্ত জলিল বা ময়ূরীর পারফরম্যান্স দেখিনা। আমি এদের কার্যক্রমের পক্ষেও নই। সত্যি বলতে কি, এসব আমি অপছন্দই করি। কিন্তু অপছন্দের পরও বৃহত্তর পরিমণ্ডলে এসব নিয়ে আমি কোন জাজমেন্টাল ভিউ প্রকাশ-প্রচার-সংগঠিত করিনা।

ইয়ার্কির সীমা আছে; ফাজলামোর সীমা আছে। অনুরূপ, স্বাধীনতারও সীমা আছে; ব্যক্তিস্বাধীনতারও সীমা আছে। এগুলো অসীম প্রপঞ্চ নয়; সসীম— সসীম এই অর্থে যে এসব স্থান-কাল-পাত্রে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা পায়। এসব ক্ষেত্রে বিধি-আইন-নীতি যতটুকু সীমা নির্ধারণ করে, রীতি-প্রথা-আচারে সে সীমা আরও কিছুটা বিস্তৃত; ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষায় তা বর্ণিত সামষ্টিকতার চেয়ে অধিকতর বিস্তৃত; আর শিল্পীর সৃজনীতে তা সমকালীন ব্যক্তি-সমষ্টি-ব্যবস্থা ছাপিয়ে সুদূরপ্রসারী। আবার সময়ানুক্রমেও এসব সম্প্রসারিত হয়; গতকালের বিন্দু আজ বৃত্তে পরিণত; আজকের বৃত্ত আগামীকালের দিগন্তরেখা; দিগন্তরেখা পরশু ভূগোলক বিস্তৃত; পরদিন তা সৌরজগতপ্রসারী; নিকট ও দূর ভবিষ্যতে ক্রমে তা ছায়াপথ ও ব্রহ্মাণ্ডব্যাপ্ত। এ সীমার বোধ বা আলোচিত পরিমিতিবোধের উদ্ভব ও বিকাশ একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক অবস্থানের একটি নির্দিষ্ট সময়ের একটি জনগোষ্ঠির সামষ্টিক সাংস্কৃতিক পরিসরে— ফ্রানয বোয়াসের ঐতিহাসিক নির্দিষ্টতাবাদ তাই বলে।

হিরো আলমের রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া বিষয়ে পুলিশ ও ক্যাওয়াসের সকল পক্ষকে এ তথ্যটিও মনে রাখতে হবে হবে যে রবীন্দ্রসঙ্গীত এখন আর কপিরাইটের আওতাভুক্ত নয়। আপনার অপছন্দ হলে শোনেন কেন? চুপ করে থাকুন।

পুলিশ-গোয়েন্দার ম্যান্ডেট আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক— বিধি-আইন-নীতি দ্বারা নির্ধারিত। দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশে পুলিশের পূর্ববর্ণিত অপরাধ আরো অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমিত হয়েছে; আর দুঃখজনকভাবে তার ভুরি ভুরি প্রমাণও রয়েছে।

আমাদের পুলিশ আওয়ামী-বিএনপি-জামাতের ভূমি দখলকারী মাস্তানদের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে এদেশের বাউল শিল্পীদের গানের বিষয়বস্তু নিয়ে মন্তব্য করেছে ও বাউলদেরকে নাজেহাল করেছে। বাউল গান ও বাংলা লোকসঙ্গীতের বিবিধ ঘরানা সম্পর্কে জাজমেন্টাল হবার যোগ্যতা ও অধিকার পুলিশ কবে অর্জন করলো? লোকশিল্পীদের প্রতি স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ যে আচরণ প্রদর্শন করেছে গত কয়েক বছরে, তা এমনকি ঔপনিবেশিক ও সামরিক-স্বৈরতান্ত্রিক পুলিশও কখনো করেনি। এদের এমন আচরণের আবহ তৈরি করেছে পশ্চাদপদ সর্বনাশা সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি। একটি পেশাদার বাহিনীর সদস্যরা একটি মতাদর্শের বা ধর্মের অনুসারী হিসেবে বাউল মতের উপর আক্রমণ পরিচালনার সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।

পুলিশের এ জাতীয় অপরাধ-ক্লাস্টারের সবচেয়ে নিকৃষ্ট, ঘৃণ্য, অশ্লীল ও ভয়াবহ রূপটি হলো— পুলিশ ব্যক্তির 'বিশ্বাস' নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, জাজমেন্টাল হয়েছে, নাগরিকদের হয়রানি করেছে। কয়েক বছর আগে এক দম্পতিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ঘরের ভেতর কোরানপাঠ ও মূর্তিপূজার তথাকথিত অপরাধে। গণমাধ্যমে পুলিশ তখনও এমনভাবে বক্তব্য প্রদান করেছে যেন ওই দম্পতি মহাঅপরাধ সংঘটিত করেছেন। ওই দম্পতি যদি অপরাধী হন, তাহলে তো বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বীও মহাঅপরাধী যারা কিনা দেশে বিদেশে অনেক মাজারে যান ও দোয়া-মানত করেন; তাহলে তো বাংলাদেশের সুন্দরবনের চারপাশের সকল উপজেলার লক্ষ লক্ষ মুসলমানও মহাঅপরাধী যারা কিনা বনবিবির পূজা করেন। পুলিশ কি এসব লক্ষ লক্ষ হিন্দু-মুসলিমকে গ্রেফতার করতে পারবে?যারা নিরীশ্বরবাদি ও মানবতাবাদি— তাদেরকেও নাস্তিক আখ্যা দিয়ে মহাঅপরাধী বানানোর প্রবণতা দেখা যায় পুলিশের অনেক সদস্যের মধ্যে।

পুলিশকে তার পেশাগত ম্যান্ডেটের সীমারেখা বুঝে দায়িত্ব পালন করতে হবে। একজন নাগরিকের ধর্মবিম্বাস কী বা তা বিশুদ্ধ না ভেজাল না মিশ্র— তা নিয়ে পুলিশকে সাবধানী হতে হবে; তা এমনকি কোন ধরনের মন্তব্য করার অধিকারও পুলিশের নেই। পুলিশকে মনে রাখতে হবে বিশ্বাসের বৈচিত্র্য ও স্বাধীনতার মতোই বিশ্বাস না করার স্বাধীনতাও ব্যক্তির একান্ত নিজস্বতা— তা পুলিশী এখতিয়ারের বিষয় নয়। বরং, এসব ক্ষেত্রে কোন একজন ব্যক্তি যদি নিজ বিশ্বাসের স্বাতন্ত্র‍্যের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠের টার্গেটেও পরিণত হন, সেই ব্যক্তির নিরাপত্তা প্রদান করা পুলিশের পেশাগত দায়িত্বের অংশ।

বৃটিশ উপনিবেশবাদ-সৃষ্ট পুলিশের গণবিরোধী ভূমিকা বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে বাঙালি জাতি দেখেছে। স্বাধীন দেশে সামরিক-বেসামরিক স্বৈরতন্ত্রের ক্রিড়ণক হিসেবে পুলিশ যে গণবিরোধী ভূমিকা পালন করেছে তাও সমকালীনদের স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি। ১৯৯০ সালের পর সূচিত আংশিক গণতন্ত্রের আবহে পুলিশের ভূমিকা অতীতের চেয়ে পাল্টেছে নিঃসন্দেহে। পুলিশ এখন কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা গণমুখি হলেও এখনও পূর্ণ গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার সাথে প্রত্যাশিত সামঞ্জস্য নিশ্চিত করতে পারেনি। বিকাশমান গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার দিকে পুলিশকে পেরুতে হবে অনেকটা পথ। বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগ এখন অনেক উচ্চশিক্ষিত ও রুচিশীল স্মার্ট কর্মকর্তা ও সিপাহি রয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকে এদেশে স্বৈরাচার-মৌলবাদ-যুদ্ধাপরাধ-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শিক্ষাঙ্গনে ও রাজপথে আমাদের আন্দোলনের সহযোদ্ধা ছিলেন; অনেকে আমাদের সহপাঠিও ছিলেন। পুলিশের শিখন-প্রশিক্ষণ উন্নততর হচ্ছে; তাদের এক্সপোজার ও সুযোগ-সুবিধাও সম্প্রসারিত হয়েছে। অসংখ্য পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন যারা জনগণের সেবা করতে চান। আমরা আশা করতে পারি যে দেশের রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও অর্থায়ন আর গুণি পুলিশ কর্মকর্তাদের সক্রিয় উদ্যোগ ও নেতৃত্বে বাংলাদেশের পুলিশ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অনুগামী হবে ও নিজেদের পেশাগত ম্যান্ডেট সম্পর্কে সচেতন থেকে সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করবে।

বাংলাদেশ পুলিশের প্রশিক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করছি বর্তমান রচনাটিকে একটি কেইসস্টাডি হিসেবে বিবেচনা করে পুলিশের প্রশিক্ষন কর্মসূচিতে আলোচ্য সমকালীন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে পুলিশের দক্ষতা উন্নযনে বিশেষভাবে উদ্যোগী হতে।

* লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সম্পাদক, লড়াই।

পূর্বপশ্চিম- এনই

জিয়াউল হক মুক্তা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close