• শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১
  • ||

জবিতে সাংবাদিকতার আড়ালে সক্রিয় স্বাধীনতাবিরোধী চক্র!

প্রকাশ:  ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯:১১
জবি প্রতিনিধি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) সাংবাদিকতার আড়ালে সক্রিয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র। সাংবাদিকতাকে ঢাল করে ছাত্র শিবিরের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, সুযোগ পেলেই মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করারও প্রয়াস চলছে।

সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জের ধরে উত্তপ্ত হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ। এ ঘটনার জের ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড নামে একটি সংগঠন।

জানা যায়, ঘটনায় অভিযুক্ত ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহতাব হোসেন লিমন ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত। অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্টের জবি প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত এই ছাত্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সভাপতি ইকবাল হোসেনের পারিবারিক সূত্রে আত্মীয় এই সাংবাদিক বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দিয়ে আসছেন। এছাড়াও, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের বিশেষ এসাইনমেন্ট পালন করেন। ক্যাম্পাসে সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি থাকলেও শিবিরের সাথী স্তরের নেতা হিসেবে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

তার ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে গত ২ জুলাই দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি পালন করে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্র প্রধান করে তারা।

অভিযোগ পত্রে বলা হয়, সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহাতাব লিমন, মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করে তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি (Mahatab Limon) থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করে এবং বোটানি বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মমিনুল হাসান রিজভী, তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি (Momenul Hasan Rizvi) থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করে, যেখানে ক্যাপশনে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মকে অশালীন ভাষায় কটূক্তি করে ।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মাহতাব লিমন তার ফেসবুক পোস্টে মুক্তিযুদ্ধকে 'গন্ডগোলের সময়' উল্লেখ করে পোস্ট করেছে; যা মহান মুক্তিযুদ্ধকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। তিনি সেই পোস্টে লিখেছেন, 'গন্ডগোলের সময় আমার দাদীর পালন করা দুইটি খাসি মিলিটারিরা বারবিকিউ করে খাইছিলো। এটার ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমাকে কি ০.১% কোটা বরাদ্ধ দেয়া যায় না?

অন্যদিকে, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মমিনুল হাসান রিজভী Dcian Freaks নামের একটি ফেসবুক পেইজের পোস্ট শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, 'সাহসী বীর মানুষদের বোকা১৪ ২য় বংশধর। আবার, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানিম ফারহানের শেয়ার করা একটি পোস্টে তার বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও কটূক্তি করে এবং তানিম ফারহানকে হুমকি ধামকি দেয়। যার কারনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।এমন পরিস্থিতিতে আমরা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উপরে উল্লেখিত মাহাতাব লিমন ও মমিনুল হাসান রিজভীকে স্থায়ীভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।

এই বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখার সভাপতি রাকিবুল হাফিজ অন্তর বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি সম্প্রতি কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, কটূক্তি করা হচ্ছে। কোটা বাতিল নাকি সংস্কার সেটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। এই দেশে বাকস্বাধীনতা আছে, সবাই নিজেদের দাবি জানাতে পারে, কথা বলতে পারে। আমাদের বাপ-দাদারা মুক্তিযুদ্ধ করেই আপনাদের এই বাকস্বাধীনতা এনে দিয়েছে৷ আর সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করা হচ্ছে, কটূক্তি করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা এসব শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তিকারীদের বিচার দাবি করছি।

সাধারণ সম্পাদক তানিম ফারহান বলেন, এই দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে নিয়েই কটূক্তি করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্য নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা এমন কাজ করছে, তাদের বহিষ্কারের দাবিতে আমরা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেবো। তাদের বিরুদ্ধে যাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ওরা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে।আমি অভিযোগ গ্রহণ করেছি।আমি একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিবো। বিষয়টা একটু বিচার বিশ্লেষণ করে দেখার প্রয়োজন আছে।আজকেই তো অভিযোগ দিয়েছে।সবই অভিযোগ পত্রে লিখা আছে। আমরা এটার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবো।

মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। শিক্ষার্থীরা এসে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। আমি শৃঙ্খলা কমিটিকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছি। শৃঙ্খলা কমিটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যাল,জবি,মুক্তিযুদ্ধ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close