• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

চিংড়ি চাষে বিপ্লব ঘটাতে পারে আইওটি ডিভাইস

প্রকাশ:  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৩৪ | আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৩৪
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

দেশে চিংড়ি চাষে আইওটি ডিভাইস ব্যবহার এই খাতের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এরই মধ্যে এই প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ সম্ভব হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জের টাইগার পয়েন্টের সুশীলন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ‘আইওটি বেজড স্মার্ট অ্যাকোয়াকালচার ফর শ্রিম্প কালচার টেকনোলজি ইনোভেশন, পাইলটিং অ্যান্ড কমার্শিয়ালাইজেশন সাব-প্রজেক্ট’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা জানানো হয়।

এতে অর্থায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন সাসটেইনেবল মেরিন অ্যান্ড ফিশারিজ প্রজেক্ট। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাইয়ুম। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব মো: আনিসুর রহমান ও সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট এর উপ-প্রকল্প পরিচালক জনাব সরোজ কুমার মিস্ত্রি।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের প্রধান গবেষক ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নির্মল চন্দ্র রায় ও প্রকল্পের কো-পিআই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রশিদুল হাসান।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্যখাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে ৪ জুলাই ১৯৭২ সালে কুমিল্লার এক জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন, মাছ হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ। বঙ্গবন্ধুর সেই বাণী বাংলাদেশে আজ বাস্তব রূপ নিয়েছে। বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা যদি আমাদের অর্থনীতির ভিতকে আরও শক্তিশালী করতে চাই তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কম জায়গায় বেশি মাছ উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই।

ফলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চিন্তা মাথায় নিয়ে আইওটি-বেজড স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার ও এর উৎকর্ষতা চাষী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া একান্ত প্রয়োজন। আর সেই বাস্তবতার নিরিখে চিংড়িচাষীদের মাঝে এই নতুন প্রযুক্তির প্রসার চিংড়িচাষের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সুচনা।

এতে আরও বলা হয়, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে চিংড়ি শিল্পের ভূমিকা অপরিসীম। চিংড়ি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী সম্পদ। উপক‚লীয় জনগোষ্ঠীর বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পূরণ ও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে চিংড়ি সম্পদের ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত। দেশে মূলত দক্ষিনাঞ্চলে তথা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা ও কক্সবাজার জেলায় চিংড়ি চাষ হচ্ছে।

চিংড়ি চাষের ইতিহাস উল্লেখ করে এতে বলা হয়, স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারে চিংড়ি রপ্তানীকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ চাষক্ষেত্র থেকে প্রায় ৪,০০০ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদনের মাধ্যমে এর জয়যাত্রা শুরু করে, যা বর্তমানে ২০২১-২০২২ সালে ২,৫১,৯৬৪ মে. টন এ উন্নীত হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, চিংড়ি সাদা সোনা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। দেশের রপ্তানী বাণিজ্যে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের অবদান ১.২৪%, যার সিংহভাগই চিংড়ির অবদান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রপ্তানিযোগ্য খাদ্যপণ্যের মধ্যে চিংড়ির অবস্থান সবার শীর্ষে। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে বর্তমান বিশ্বে চিংড়ি সমাদৃত এবং সারা বিশ্বে চিংড়ি জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করায় আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে সারা বিশ্বে চিংড়ির উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে আশির দশকে ক্ষুদ্র পরিসরে চিংড়ি চাষ শুরু হয়ে বিগত তিন দশকে চিংড়ি চাষ এলাকা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হলেও আশানুরূপ উৎপাদন হচ্ছে না। মূলত এখনও এদেশে সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ির চাষ হচ্ছে।

অর্থনীতিতে চিংড়ির গুরুত্ব তুলে ধরে এতে বলা হয়, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) উপক‚লীয় বাগদা চিংড়ি খামারের আয়তন প্রায় ১,৯১,০৫৭ হেক্টর এবং উৎপাদিত বাগদা চিংড়ির পরিমাণ ৭০,২১৯ মে.টন। গলদা খামারের আয়তন ৭১,৯২৩ হেক্টর এবং উৎপাদন ৫৪,৩৫২ মে.টন। বর্তমানে চাষকৃত ও প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে সর্বমোট ২৬১,১৫৪ মে.টন চিংড়ি উৎপাদিত হয়।

এতে আরও বলা হয়, ১৯৮২ সালে চিংড়ি খামারের আয়তন ছিল ৪০,০০০ হেক্টর, আর তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে হয়েছে ২,৬৩,০২৬ হেক্টর (বাগদা ১,৯১,৯৬৪ হেক্টর ও গলদা ৭১,০৬২ হেক্টর)। প্রায় ৩ লাখ ছোট ও মাঝারি চাষী ইকোসিস্টেম সেবা ব্যবহার করে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করছে। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে যেখানে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানী হয়েছিল ৪,০০০ মে.টন, বর্তমানে ২০২০-২১ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬,৬১৫ মে. টনে উন্নীত হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৮১-৮২ সালে চিংড়ি রপ্তানী করে আয় হয়েছিল মাত্র ৯০.৫ কোটি টাকা আর তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০-২১ সালে হয়েছে ২৭৩০.৫৬ কোটি টাকা (মৎস্য অধিদপ্তর, ২০২২)। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৪ হাজার মে.টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পন্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫১৯২ কোটি টাকা, যার ৭০% চিংিড়ির অবদান।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রিমিয়াম মানের বাগদা চিংড়ি উৎপাদনকারী দেশ। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ চিংড়ি চাষের সাথে সম্পৃক্ত। সনাতন পদ্ধতির চাষাবাদ, দুর্বল অবকাঠামো, বিভিন্ন রোগবালাইয়ের সংক্রমণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট্য নানাবিধ কারণে বিগত এক দশক ধরে চিংড়ি উৎপাদন আশানুরূপ হারে বৃদ্ধি পায়নি।

এতে আরও বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে এই প্রযুক্তি চালু হয়েছে চিংড়ি চাষে। আতি সম্প্রতি বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরে চিংড়ি চাষে আইওটি ডিভাইস প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক ভাবে। এই উদ্দ্যোগ চিংড়ি চাষে ৪র্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘দেশ বাঁচাতে হলে আগে কৃষিকে বাঁচাতে হবে। আর মৎস্য ছাড়া কৃষি হয় না। তাই সরকার মাছ উৎপাদনের চতুর্থ বিপ্লব ঘটাতে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত করতে চায়। উন্নত দেশগুলোতে আরও উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে। যেমন রোবটের মাধ্যমে মাছের ক্ষুধা লাগলে খাবার স্প্রে করা, মাছের অসুখ হলে তাৎক্ষণিক তা ছবিতে দেখতে পাওয়াসহ নানাবিধ প্রযুক্তি রয়েছে। ধাপে ধাপে এগুলোও দেশের চাষিদের হাতে চলে আসবে।’

স্মার্ট বাংলাদেশ বানাতে হলে চাষিদেরকেই আগে স্মার্ট হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা মৎস্য অফিসার আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, আইওটি ডিভাইসের সুফল ইতিমধ্যেই চাষিরা পেয়েছেন এবং তার সুফল ভোগ করছেন। এর ব্যবহার যত বেশি হবে মাছ উৎপাদন ততই বাড়বে বলে জানান তিনি।

কর্মশালায় উপস্থিত মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন, বেশকিছু ডিভাইস ইতিমধ্যেই চাষিদেরকে দেয়া হয়েছে। চাষিদের পক্ষে সবসময় ঘের তদারকি করা সম্ভব হয় না। তারা অনেকেই অন্যান্য পেশার সাথেও জড়িত। দূরবর্তী স্থানে থাকার সময় ঘেরের অবস্থা তারা এই ডিভাইসের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছেন। পানির পরিমাণ কতটুকু আছে, অতিরিক্ত পানি লাগবে কিনা, লবণের মাত্রা কম না বেশি, পানিতে ফাইটোপ্ল্যাংটন (মাছের খাবার) কি পরিমাণে আছে, তাপমাত্রা কত আছে এসব তথ্য চাষিরা ঘরে বসে পাচ্ছেন।

চিংড়ি চাষ,ডিভাইস,সাতক্ষীরা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close