বছরজুড়ে দিনে ২০ টাকা করে জমানো সঞ্চয়ে হতদরিদ্র সমিতির কোরবানি
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের মূল সতাল গ্রামের ২২ জন হতদরিদ্র মানুষের সংগঠন “হতদরিদ্র সমিতি”। এই সমিতি গড়ে তোলার অন্যতম কারণ কারো কাছে হাত না পেতে নিজেদের অর্থেই কোরবানি দেওয়া। সেই লক্ষ্যে সমিতির প্রত্যেক সদস্য প্রতিদিন ২০ টাকা করে জমিয়েছেন। এবার এক লাখ ৬৬ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির গরু কিনেছেন তারা।
সাত বছর ধরে সক্রিয় এই সমিতি। সমিতির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিদিন টাকা সংগ্রহ করেন। তিনিসহ সমিতির তিন সদস্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সবাই দিনমজুর শ্রেণির।
সম্পর্কিত খবর
সমিতির সদস্যরা জানান, এ বছর এক লাখ ৬৬ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির গরু কিনেছেন তারা। তবে গরু কিনতে গিয়ে ছয় হাজার টাকার মতো কম পড়েছিল। পরে সমিতির সবাই আরও কিছু টাকা দিয়ে সেটি পরিশোধ করেছেন। তাছাড়া প্রতি বছরই গরু কিনে টাকা উদ্বৃত্ত থাকলে, সেটা কোরবানির মাংসের সঙ্গে সব সদস্যকে সমানভাবে বণ্টন করা হয়।
তারা আরও জানান, কোরবানির ঈদের পরদিন থেকে আবারও ২০ টাকা করে জমানো শুরু হয়। সমিতির শুরুতে তারা ১০ টাকা করে জমা করে কোরবানি দিতেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জিনিসপত্রসহ পশুর দাম বেড়ে যাওয়ায় দৈনিক জমার টাকা বাড়িয়েছেন।
সমিতির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন বলেন, “সাত বছর ধইরা আমরা এই সমিতি করছি। নিজেরার টেহা জমাইয়া সাত বছর ধইরা কোরবানি দিতাছি। প্রতিদিন আমরা ২০ টেহা কইরা সঞ্চয় করি। বছর শেষ অইলে, সেই টেহা দিয়া কোরবানির গরু কিনি। আমরা নিজেরার টেহা দিয়া কোরবানি দেই, পরিবারের বউ-পুলাপাইনও অনেক খুশি হয়। কারও কাছে হাত পাততে অয় না, এইডাই আমরার তৃপ্তি। আল্লাহ আমরার সহায়, হেইডাই অনেক কিছু।”
নানা প্রতিকূলতা আর তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই এসব হতদরিদ্র মানুষরা, নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য বদলেছেন। এখন আর কোরবানিতে কারও মুখের দিকে তাকাতে হয় না। পরিবারের সদস্যরাও ঈদের দিনটি আনন্দে কাটাতে পারেন। সবার মাঝেই ঈদ আনন্দের কোনো ঘাটতি থাকে না।