• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া আমির হামজা ‘যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি’

প্রকাশ:  ১৭ মার্চ ২০২২, ১৩:৫৪ | আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২২, ১৪:০৩
ডেস্ক রিপোর্ট

এ বছর সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন মাগুরার বাসিন্দা আমির হামজা। এমনিতেই সাহিত্যাঙ্গনে অপরিচিত আমির হামজার সর্বোচ্চ খেতাব পাওয়া নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে জানা গেল তিনি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও।

জানা যায়, মাগুরার শ্রীপুরের বরিশাট বরিশাট গ্রামে ১৯৭৮ সালে শাহাদত ফকির নামে একজন কৃষক এবং শিল্পী নামে আড়াই বছরের একটি শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সর্বশেষ ২০০৭ সালেও স্থানীয় একটি গ্রাম্য মারামারির ঘটনায় তিনি আসামি ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে

নিহত শিল্পীর বাবা শাবান মোল্লা জানান, ঘটনার দিন তাঁর মেয়ে নানাবাড়িতে (একই গ্রাম) ছিল। মারামারি চলাকালে নানির কোলে থাকা অবস্থায় শিশু শিল্পির পাঁজরে সড়কি বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশুটি। তাঁর মেয়ে হত্যার ঘটনায়ও মো. আমির হামজাসহ ওই ছয়জনকে দণ্ড দেন আদালত। তবে এ মামলায় আমির হামজাসহ অন্যরা অভিযুক্ত ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শাহাদাত ফকিরের ছেলে দিয়ানত ফকির বলেন, গরুতে ক্ষেতের ফসল খাওয়ার ঘটনা নিয়ে আমির হামজার পরিবারের সঙ্গে আমাদের বিরোধ হয়। ওই বিরোধের জের ধরে আমির হামজা এবং তার ভাই রব্বানী সরদারের নেতৃত্বে আমার বাবার উপর হামলা চালানো হয়। তারা নির্মমভাবে আমার বাবাকে কুপিয়ে খুন করে। একই সময়ে সাবান মোল্যার আড়াই বছরের শিশু শিল্পীকে সড়কির আঘাতে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তারা দুই ভাইসহ মোট ৬ জনের কারাদণ্ড হয়। আট বছর জেল খাটার পর ১৯৯১ সালের দিকে বিএনপি সরকার গঠন করলে মাগুরার মন্ত্রী মজিদুল হকের সহায়তায় বেরিয়ে আসেন তারা।

দিয়ানত ফকিরের এই বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় আরও অনেকের কাছ থেকে। ওই মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাভোগ করেন একই গ্রামের আফজাল মোল্যা। তিনি বলেন, আমির হামজাদের সঙ্গে দল করায় আমি আসামি হয়েছিলাম। এই হত্যা মামলার কারণে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।

গত ১৫ মার্চ ঘোষণা করা হয় স্বাধীনতা পুরস্কার। এ বছর ১০ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কারটি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মরহুম আমির হামজাও আছেন।

সাহিত্যে তাঁর পুরস্কার পাওয়ার ঘোষণা নিয়ে গতকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা ক্ষেত্রে বিতর্ক ওঠে। দেশের সাহিত্য অঙ্গনে তিনি একেবারেই পরিচিত নয়। স্বাধীনতা পুরস্কারের মতো সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার মতো সাহিত্যকর্ম করার নজিরও নেই। ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে আমির হামজা মারা যান। এখন তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলার সাজা পাওয়ার কথা জানা গেল।

জাতীয় পুরস্কারসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, একটি খুনের মামলায় আমির হামজার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি শুনেছি। এ নিয়ে খোঁজখবর করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন জায়গায় গানবাজনা ছাড়াও ব্যবসা ও স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন আমির হামজা। তিনি অন্তত দুই মেয়াদে শ্রীকোল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য ছিলেন। জেলার সক্রিয় কয়েকজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটা সময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন আমির হামজা। ওই সময় মাগুরায় বিএনপির এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ ছিল। স্থানীয় অনেকের ধারণা, ওই মন্ত্রীর ‘তদবিরেই’ জেল থেকে ছাড়া পান আমির হামজাসহ অন্যরা।

খুনের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মো. আমির হামজার বড় ছেলে মো. আলী মর্তুজা বলেন, তিনি মামলার আসামি হয়েছিলেন এবং কিছুদিন জেল খেটেছিলেন। তবে খালাস পেয়ে যান। মিথ্যা অভিযোগে মামলা হয়েছিল। গ্রামে এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা প্রায়ই ঘটে।

শাহাদত হোসেন ফকির হত্যা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুকদেব রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এত বছর আগের ঘটনা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। থানায় এত পুরোনো মামলার নথি আছে কি না, খুঁজে দেখতে হবে।

পূর্বপশ্চিম/এনএন

স্বাধীনতা পুরস্কার

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close