• সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

অভিযান শুরু হলেই, দুর্নীতিবাজরা ‘নিখোঁজ’ হয়

প্রকাশ:  ২৯ জুন ২০২৪, ০০:২০
সৈয়দ বোরহান কবীর

ছোট বেলায় অনেক গুলো প্রবাদের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম। ইংরেজি অনুবাদ করার জন্য কিছু পরিচিত বাক্য দেয়া হতো। সে বাক্যগুলো ছিলো বেশ মজার। ছোট বেলার দুষ্টুমি ভরা অবসরে সে বাক্যগুলো নিয়ে নানারকম চর্চা হতো। ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা গেল’ এমন বাংলার ইংরেজি কি হবে তা নিয়ে শিক্ষকের কানমলা খায়নি এমন বালক খুবই কমই ছিলো আমাদের সময়। সেসময় বিভিন্ন প্রবাদের সঙ্গেও আমাদের পরিচিত ঘটেছিল। প্রবাদগুলোর মধ্যে আজ একটি বেশ মনে পড়ছে। প্রবাদটি হলো ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’। তবে, এখন যদি কেউ প্রবাদ-প্রবচন লেখেন তাহলে লিখতে পারেন ‘অভিযান শুরু হলেই দুর্নীতিবাজরা নিখোঁজ হয়।’

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক ধরনের জাগরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গণমাধ্যমের পাতা জুড়ে দুর্নীতিবাজ, দুর্বৃত্তদের অপকর্মের ফিরিস্তি প্রকাশিত হচ্ছে। কার কত সম্পদ সেই হিসেব কষতে গিয়ে অনেকে হিমশিম খাচ্ছেন। একজন মানুষ এক জীবনে কীভাবে এতো সম্পদের মালিক হতে পারে তা নিয়েও অনেকের কপালে চোখ উঠে গেছে। কিন্তু এ সমস্ত দুর্নীতিবাজদের কেউই গ্রেপ্তার হননি। কেউই আইনের আওতায় আসেনি। তারা এখন দূর দেশে অবস্থান করছেন। কেউ মাথা ন্যাড়া করে পালিয়েছেন, কেউ বিদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সেখানে বহাল তবিয়তে নতুন পরিচয় নিয়েছেন। এখান থেকেই ধারনা করা যায়, দেশে তাদের যে সম্পদ ছিলো তা খুবই নগন্য, তুচ্ছ এবং এই পরিমাণ সম্পদ ফেলে দিলেও তাদের কোন ক্ষতি হতো না। বরং বিদেশে যে সম্পদ আছে সেই সম্পদই তাদের আসল সম্পদ। সেই সম্পদ থেকে জনগণের দৃষ্টি আড়ালের জন্যই তারা দেশে কিঞ্চিত সম্পদ রেখেছিলেন। বিদেশে পাচার করা অর্থ-সম্পদ দিয়ে তারা এবং তাদের চৌদ্দ পুরুষ আরাম আয়েশে খেতে পারবে। এখন তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

বেনজীরকে নিয়ে কথা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। প্রথমে ‘কালের কণ্ঠ’ পত্রিকা বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশ করে। তাও মাস তিনেক আগে। এই সংবাদ প্রকাশের পর দুর্নীতি দমন কমিশন বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কিছুই করেনি। হাত-পা গুটিয়ে বসে ছিলো। যেন এধরনের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করাটা এক ধরনের অন্যায়। কেউ কেউ সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ধৃষ্টতার সীমা লঙ্ঘন করলো কিনা সে প্রশ্নও তুলেছিল। এনিয়ে কোন মহলেরই কোন ধরনের তৎপরতা না দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। আমরা মনে করেছি, এটিও আর দশটি খবরের মতো একটি খবর, যে খবর কাউকে স্পর্শ করবে না, কাউকে তাড়িত করবে না। কিন্তু বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালো। প্রথমবারের এমপি ব্যারিস্টার সুমন বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। তিনি এব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত দাবি করলেন। ব্যারিস্টার সুমনের সাহসী উদ্যোগের ফলে হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দিলেন, দুদক যেন দ্রুততম সময়ে এবিষয়টি তদন্ত করে। দুই মাস সময়ের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দেয়া হলো। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরই দুর্নীতি দমন কমিশন নড়ে-চড়ে বসলো। তাহলে দুদকের কাজটা কি? যখন কালের কণ্ঠে সিরিজ প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত হলো তখন কেনো দুর্নীতি দমন কমিশন চুপচাপ বসে থাকলো, তারা কেন কিছুই করলো না? দুর্নীতি দমন কমিশন কি চোখ-কান বন্ধ রেখে কাজ করে? কারণ বেনজীর আহমেদের এই দুর্নীতির খবর সকলেই জানতো। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার আগে থেকেই জানা ছিলো যে, চাকরী জীবনে বেপরোয়াভাবে লুণ্ঠন করেছেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। তার প্রতারণা মূলক পরিচয়ে নেয়া একাধিক পাসপোর্ট জালিয়াতির খবরও দুর্নীতি দমন কমিশন রাখতে পারেনি। তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজটি কি সেটি একটি বড় প্রশ্ন। পাসপোর্ট অধিদপ্তর বা অন্যরাও কি ঘুমিয়েছিলো? যতক্ষণে দুর্নীতি দমন কমিশন নড়ে-চড়ে বসলো, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তদন্ত শুরু করলো। ততক্ষণে ‘চোর’ পালিয়ে গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তার সম্পত্তি ক্রোক করলো। ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করলো। ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করে দেখা গেলো ব্যাংক একাউন্ট খালি। সব টাকা তিনি আগেই উঠিয়ে নিয়েছেন। এরপর শুরু হলো বেনজীর আহমেদকে সমনের নাটক। তাকে ডাকা হয় তিনি আসেন না। দুই বার দুর্নীতি দমন কমিশনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি লাপাত্তা হয়ে থাকলেন। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা সরকার বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কি জানতো না যে বেনজীর আহমেদ পালিয়ে গেছেন? প্রথমেই তাকে আইনের আওতায় আনা হলোনা কেন? তার বিদেশ যাবার পথ কেন বন্ধ করা হলোনা?

যা কিছু হচ্ছে তার সবই কি আসলে নাটক? বেনজীর আহমেদ যখন বুঝতে পেরেছেন তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে, তার অবৈধ সম্পদের খবর সকলেই জেনে ফেলেছে, তার গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে তখন তিনি সটকে পরেছেন। শুধু সটকেই পরেননি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উঠিয়েছেন, সরিয়েছেন। হুন্ডির মাধ্যমে সেই টাকা তিনি বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন, স্বপরিবারে বিদেশেও চলে গেছেন। তাহলে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কি করলো? তারা কি প্রকারান্তরে বেনজীরকে পালাতে সহযোগিতা করলো না? চোর পালিয়ে যাওয়ার পর এখন আলোচনা, উত্তেজনা, সাজ-সাজ রব করে কি হবে? এখন কি বেনজীরকে ধরা যাবে? বেনজীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে? বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে বেনজীর এখন তুরস্কে অবস্থান করছে। কেউ বলছেন, সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। কারও কারও মতে তিনি দুবাইয়ে । যেখানেই থাকুন না কেন তিনি বিদেশি পাসপোর্ট যে নিয়েছেন তা হলফ করেই বলা যায়। কারণ বেনজীর আহমেদ বিদেশি পাসপোর্ট এবং বিদেশি নাগরিকত্ব নেয়ার জন্যই তার চাকরি জীবনেও কখনো সরকারি পাসপোর্ট গ্রহণ করেননি। নিজের পেশাগত পরিচয় নিয়েও তিনি প্রতারণা করেছেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি জালিয়াতি করেছেন। সংশ্লিষ্ট সবাই শুধু তামাশা দেখেছে।

আমাদের দেশের পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে নিয়ে অনেক কথাই শুনি। কিন্তু এসব কথা আমলে নিতে ইচ্ছে করে না। পাসপোর্ট অধিদপ্তর কীভাবে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাকে বেসরকারি চাকরিজীবি হিসেবে পাসপোর্ট দেয়। এই যদি হয় আমাদের ‘সিস্টেম’ তাহলে পুরো সিস্টেমটিই পঁচে গেছে, ঘুঁণে ধরে গেছে। এটা একটা ভয়ংকর ব্যাপার। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠান গুলোর ব্যপারে অনাস্থা তৈরি হবে। যা হচ্ছেও।

মতিউরকে নিয়েও একই অবস্থা। ‘ছাগলকাণ্ডে’ মতিউর যখন হুংকার দিয়ে উঠলেন, বললেন ‘ইফাত আমার ছেলে নয়’ তখনই বোঝা গিয়েছিলো ‘ডালমে কুছ কালা হ্যায়’। মতিউরের নিশ্চয়ই অন্য কোন দুরভিসন্ধি আছে। এরপর মতিউরকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখা শুরু হলো। একসময় জানা গেল মতিউর রহমান দেশে নেই। কেউ বলছেন তিনি মাথা ন্যাড়া করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। কেউ বলছেন বহাল তবিয়তেই বীরের বেশে তিনি তার স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য তার কোন বাঁধা ছিলো না। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একজন ব্যক্তিকে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি বিদেশে যেতে পারবেন। তবে সরকারি চাকরিজীবি বলে কথা। মতিউর রহমান যদি বিদেশে যেতে চান তাহলে তাকে সরকারের অনুমতি নিতে হবে, তার বিদেশ যাওয়া সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হতে হবে এবং সবচেয়ে বড় কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি বা কোন সরকারি কর্মচারীই বিদেশ যেতে পারবেন না। মতিউর রহমান সেরকম কোন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েছেন বলে জানা যায়নি। তাহলে তো আমরা জানতাম। এতো বড় পদের একজন কর্মকর্তা সরকারের অনুমোদন ছাড়া যদি দেশ ত্যাগ করতে পারেন, তাহলে এদেশে সব সম্ভব।

বেনজীরের সাথে মতিউর রহমানের একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। বেনজীর চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। তিনি একজন সাধারণ নাগরিক। তিনি যেকোন সময়, যেকোন ভাবে বিদেশ যেতে পারেন। তার বিদেশি পাসপোর্ট ছিলো বিদেশি পাসপোর্ট নিয়েও তিনি বিদেশে যেতে পারেন। কিভাবে তিনি বিদেশে গেছেন তা তদন্তের দায়িত্ব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। কিন্তু মতিউর রহমান একজন সরকারি চাকরিজীবি। উচ্চপদে আসীন ব্যক্তি। তিনি দেশত্যাগ করেন কিভাবে? তাহলে কি মতিউর রহমানও কি জালিয়াতি করে পাসপোর্ট গ্রহণ করেছিলেন? সেই পাসপোর্ট দিয়ে কি তিনি সটকে পড়েছেন? মতিউর রহমান যদি শেষ পর্যন্ত বিদেশ গিয়ে থাকেন তাহলে এটি হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের আরেকটি পরাজয়। নাকি সরকারের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজরা তার পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করছে? এরকম দুর্বৃত্তরা যদি বিচারের আগে এভাবে দেশ থেকে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে সেক্ষেত্রে সেটি এটি খারাপ উদহারণ হবে। এধরনের খারাপ উদহারণ অবশ্য আমাদের সামনে আগেও এসেছে। পি কে হালদারের কথা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে যখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলো, পি কে হালদারের সম্পত্তি যখন ক্রোক করার নির্দেশ দেয়া হলো তার আগেই তিনি দেশত্যাগ করলেন। পরবর্তীতে তথ্য উদ্ধার করা হয় কিভাবে এবং কার সহযোগিতায় তিনি দেশত্যাগ করেছিলেন। পি কে হালদারের দেশত্যাগের বিষয়টি তাও জানা গিয়েছিল, কোন বর্ডার দিয়ে তিনি দেশত্যাগ করেছিলেন সে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু বেনজীর এবং মতি যেন ‘ইনভিজিবল ম্যান’। তারা ‘অদৃশ্য মানব’ হয়ে গেছেন। তারা কিভাবে দেশত্যাগ করেছিলেন সে খবর কারো কাছে নেই। আমাদের দেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। এ দেশ থেকে একজন নাগরিকের বাইরে যেতে হলে সুনির্দিষ্ট কতোগুলো নিয়ম-কানুন মানতে হয়। সীমান্ত পার হতে গেলে ইমিগ্রেশনের শরণাপন্ন হতে হয়। তাহলে এই সবকিছু ফাঁকি দিয়ে বেনজীর-মতিউররা কিভাবে দেশত্যাগ করেন সেটি একটি বড় প্রশ্ন। নাকি একটি সংঘবদ্ধ চক্র দুর্নীতিবাজদের লালন করে বা দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে একটি যোগসূত্র রয়েছে বিভিন্ন মহলের। এখন যা হচ্ছে, বেনজীর ও মতিউরের সম্পদের হিসেব গ্রহণ করা বেনজীর-মতিউর রহমানের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা, তার বিদেশ যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা সে সবই সাজানো নাটক কিনা বা পাতানো খেলা কিনা তা প্রমাণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। কারণ যেসমস্ত ব্যক্তিদের অবৈধ সম্পদের বিবরণ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেসমস্ত ব্যক্তিরা কেউই দেশে থাকছেন না। এ যেন এক অদ্ভুত ম্যাজিক। যখনই কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে এবং প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা রয়েছে, তখনই তিনি ‘উধাও’ হয়ে যাচ্ছেন। এই উধাও কিভাবে হচ্ছেন, কারা করছেন ‘উধাও’ সেটি খুঁজে বের করা দরকার। কারণ একজন এরকম দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের জন্য অত্যন্ত জরুরী। না হলে কদিন পর মানবাধিকার ব্যবসায়ীরা দাবী করবেন বেনজীর-মতিকে গুম করা হয়েছে। গুম দিবসে তাদের ছবি দিয়ে পোষ্টার হবে। মতি এবং বেনজীররা যদি আইনের ফাঁক-ফোঁকড় দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে তাহলে অন্যদের মধ্যেও একই প্রবণতা দেখা যাবে। আরেকটি আতংকের দিক রয়েছে। এর ফলে অর্থ পাচার বাড়বে। যারা দুর্নীতিবাজ, যারা এখন বিপুল বিত্তের মালিক তারা দেশে সম্পদ কেনার দিকে আর মনোযোগী হবে না। সব টাকা বিদেশে পাচার করবেন। তারা বেনজীর এবং মতির পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন। তারা বুঝবেন যে, টাকা দেশে রাখলে বিপদ আছে, টাকাগুলো বাজেয়াপ্ত হতে পারে, দুর্নীতি দমন কমিশন তার হিসেব তলব করতে পারে। নানা রকম ঝুট ঝামেলা। এসব ঝুট-ঝামেলার থেকে টাকা সরিয়ে দিবেন তারা দুবাই, সিঙ্গাপুর অথবা মালয়েশিয়াতে, কিংবা বেগম পাড়ায়। ঝামেলা হলেই তারা সটকে পড়বেন নিরাপদ স্থানে। ইদানিং অনেক আমলা স্বেচ্ছা নির্বাসনে বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। এরা দাপুটে সচিব ছিলেন। এখন এদের কেউ কানাডা, কেউ ইংল্যান্ডে অবসরে বিলাসী জীবন কাটাচ্ছেন। দুর্নীতিবাজরা দেশ ত্যাগ করছেন, এ খবরে খুশী হতে পারছি না। কারণ তারা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের রত্ন ভান্ডার। মতি এবং বেনজীরের ঘটনা দুর্নীতিবাজদের নিরুৎসাহিত করবে না করছেও না। দুর্নীতিবাজদের বরং এটি উৎসাহিত করবে। দুর্নীতিবাজরা এখন মনে করছে টাকা লুণ্ঠন করে দেশে রাখা নিরাপদ নয়, বিদেশে পাচার করাটা সর্বোত্তম। আর এই সর্বনাশী তৎপরতার ফলে দেশের অর্থনীতির আরো বারোটা বাড়বে। ধরার আগেই যদি চোর পালিয়ে যায় তাহলে সেই চোর হয়ে উঠে বিপদজ্জনক। আমরা সেইরকম বিপদজ্জনক চোরদেরকে নিজের অজান্তে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছি কিনা তা ভেবে দেখতে হবে আমাদেরকে। অন্তত একজন স্বীকৃত দুর্নীতিবাজের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।

সৈয়দ বোরহান কবীর
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close