• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞের সেই দিন

প্রকাশ:  ২১ আগস্ট ২০২২, ০০:০৫
খায়রুল আলম

নিকষ অন্ধকারে ছিল দেশ। ক্ষমতায় তখন বিএনপি জামায়াত জোট সরকার। দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বোমা ও সন্ত্রাসী হামলা। জঙ্গিবাদের ভয়াল থাবায় খামচে ধরেছিল গোটা বাঙালি জাতিকে।

আজ সেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াল বিভীষিকাময় সেই ২১ আগস্ট। ১৮ বছর আগে ২০০৪ সালের আজকের এই দিনে মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠেছিল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। মানুষের আর্তনাদ আর কাতর ছোটাছুটিতে সেখানে তৈরি হয় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। এদিন আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলপূর্ব সমাবেশে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা এবং গুলিবর্ষণ করে ঘাতকরা। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক।

প্রকাশ্য দিবালোকে রাজনৈতিক সমাবেশে এ ধরনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া বিরল। একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভয়াবহ সেই হামলা বাঙালি জাতি কোনোদিনও ভুলবে না।

এই হামলায় অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। কেউ কেউ আজও ফিরে পাননি স্বাভাবিক জীবন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০০৪ সাল থেকে দিনটি ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের মধ্য দিয়ে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, ২১ আগস্টের ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা।

তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সেদিন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী‘ শান্তি মিছিলের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আজকের প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিলের আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর সামনের পিচঢালা পথ। নিহত-আহতদের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভেসে আসে শত শত মানুষের গগনবিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য। সেদিন রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ভাগ্যগুণে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও শেখ হাসিনার দুই কানের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য শেখ হাসিনা বেঁচে গেছেন দেখে তার গাড়ি লক্ষ্য করে ১২ রাউন্ড গুলি করা হয়।

সেদিন ছিল শনিবার, ঘড়ির কাঁটা তখনো সাড়ে পাঁচটা বাজেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালিন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ, মঞ্চ থেকে নেমে যাবেন, ঠিক সেই সময় মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন ‘আওয়ামী লীগের শান্তির সমাবেশ’। মুহূর্তেই চেনা কালো পিচঢালা সড়ক হয়ে উঠে রক্তে রঞ্জিত, চারদিকের মানুষের আহাজারি, চিৎকার, বাঁচাও বাঁচাও, যেন এক মরণক্ষেত্র- মৃত্যুর মিছিল থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরা সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে আসে এমন ভয়াল-বিভীষিকাময় চিত্র।

আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ও শেখ হাসিনাই ছিলো হামলার লক্ষ্য । বিস্ফোরণ শুরু হওয়ার ঠিক আগেই একটি ট্রাকের ওপর বানানো অস্থায়ী মঞ্চে প্রধান অতিথির ভাষণ মাত্র শেষ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। হঠাৎ সমাবেশস্থলের দক্ষিণ দিক থেকে মঞ্চ লক্ষ্য করে ছোড়া হয় গ্রেনেড। সেদিন শেখ হাসিনার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আকস্মিক এসব গ্রেনেড নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রক্তাক্ত মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সেসময়ে দলীয় নেতা এবং হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী তাৎক্ষণিকভাবে এক মানববলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন। হামলায় অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তির গুরুতর ক্ষতি হয়। শুধু গ্রেনেড হামলায় নয়, বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য তার গাড়ি লক্ষ্য করে চালানো হয় ছয় রাউন্ড গুলি। তবে টার্গেট করা গুলি ভেদ করতে পারেনি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাচ। হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে। গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গাড়িতে তোলার সময় গুলিতে নিহত হন তার ব্যক্তিগত সহকারী মাহবুব আলম। সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায় শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেট প্রুফ গাড়িটি।

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঘাতকের ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয় নৃশংস আরেকটি হত্যাকান্ড। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় বর্বরোচিত ও বহুল আলোচিত গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনের নির্মম মৃত্যু হয়। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথমসারির নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে এ ঘৃণ্য হামলা চালানো হয়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্টের এই হত্যাকান্ডের বিচারের ব্যাপারে তৎকালীন বিএনপি সরকার নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেছিল। শুধু তাই নয়, এই হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষা করতে সরকারের কর্মকর্তারা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে।

গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মতিঝিল থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। ২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ে এই মামলাটির তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে, যা পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। এমনকি এই মামলায় তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবরের নির্দেশে সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক।

পাকিস্তানি আর্জেস গ্রেনেড এবং বিএনপি-জামাত ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পরিকল্পনা : গ্রেনেড হামলা মামলায় সিআইডির তদন্তে উদঘাটিত হয় একের পর এক সত্য। হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড ছিল পাকিস্তানি। তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে নেওয়া ১৫টি গ্রেনেড দিয়ে ওই দিন শেখ হাসিনার জনসভায় হামলা চালানো হয়। হাওয়া ভবনে ওই হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বৈঠক হয়। হাওয়া ভবনে বিএনপি চেয়ারপারসনের পুত্র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর নূর, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, আবদুস সালামসহ বিএনপি-জামাতের শীর্ষ নেতা এবং মুফতি হান্নানসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের বৈঠকে গ্রেনেড হামলার চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে যা মুফতি হান্নাসহ অন্য আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বেরিয়ে আসে।

সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সমাবেশে বোমা পুঁতে রেখে শেখ হাসিনাকে হত্যার মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর শেখ হাসিনাকে নিশ্চিতভাবে হত্যা করতেই পাকিস্তান থেকে আর্জেস গ্রেনেড আনা হয়েছিল। ২১ আগস্টের পর সারাদেশ থেকে ৭৫টি ৮৪ মডেলের আর্জেস গ্রেনেড গ্রেনেড উদ্ধার হয়, যা পাকিস্তানের তৈরি অধিক উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক। যার মধ্যে একটি গ্রেনেড ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর এক খুনির সেলের সামনে থেকে কারা কর্তৃপক্ষ ও লালবাগ থানা পুলিশ উদ্ধার করে। শেখ হাসিনা গ্রেনেড হামলায় মারা গেলে গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কারাগারের মূল ফটক উড়িয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

গ্রেনেড হামলা পরিকল্পনার বৈঠকে তারেক রহমান ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাররের দেওয়া হামলায় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সহযোগিতার যে আশ্বাস দেওয়া হয়, তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটায় তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রশাসন। যার প্রমাণ মেলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরদিন ২২ আগস্ট একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উল্টো দিকের বহুতল ভবন ‘সিটি ভবনের’ ছাদ থেকে পুলিশের সহায়তায় এই গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। সিটি ভবনের ছাদ থেকে যখন কয়েকজন জঙ্গি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তখন ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ সদস্যরা তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল।

তৎকালীন সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ সভাস্থলে নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকা মহানগর পুলিশের পূর্ব বিভাগের ডিসি, এডিসি, এসি ও ওসির নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে নিয়ম অনুযায়ী তদারকি করার কথা। কিন্তু তারা কোনো তদারকি করেছেন এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা পাননি। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার ৩০০ কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও সদস্য মোতায়েন ছিল। গ্রেনেড হামলার সময় তাদের কারও আগ্নেয়াস্ত্র থেকেই এক রাউন্ড গুলিও বর্ষণ করা হয়নি। কর্তব্যরত পুলিশ, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও সদস্যরা গ্রেনেড হামলা শুরুর পরপরই দায়িত্ব-কর্তব্য ফেলে দিয়ে দ্রুত নিরাপদ স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি বহুতল ভবনের ছাদের (রুফটপে) সকল স্থানে পুলিশ ডিউটি দেওয়া হয়নি। দু-তিনটি ছাদে যাদের ডিউটি দেওয়া হয়েছিল তারাও গ্রেনেড হামলার শব্দ শুনে ছাদ থেকে পালিয়ে অন্যত্র দিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, গ্রেনেড হামলার আগে সভাস্থলের আশপাশে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হয়নি। এমনকি গ্রেনেড হামলার পাঁচ দিন পরও সভাস্থলে ডগ স্কোয়াডকে নেওয়া হয়নি। গ্রেনেড হামলার পর একাধিক অবিস্ফোরিত গ্রেনেড উদ্ধারের ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ ছিল না। আততায়ীরা এসব ঘটনায় সম্পূর্ণ নিরাপদে নির্বিঘ্নে গ্রেনেড হামলায় হতাহত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে পেরেছে।

ঘাতকচক্রের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বহীন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে রুখে দেওয়া এবং দেশে স্বৈরশাসন ও জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তা হতে দেয়নি। গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে হলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহমর্মিতার পাশাপাশি পরমতসহিষ্ণুতা অপরিহার্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্টসহ ১৯ বার হামলা করা হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, বাঙালি সুখে শান্তিতে থাকবে, এটা যাদের ভালো লাগে না, তারাই ষড়যন্ত্র করছে।

গ্রেনেড হামলা মামলায় দন্ডিতদের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চির অবসান হবে এবং দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জঙ্গি গোষ্ঠীর সহায়তা নিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যাই ছিল ভয়াবহ ওই গ্রেনেড হামলার লক্ষ্য। যুদ্ধে ব্যবহৃত সমরাস্ত্র দিয়ে নিরস্ত্র মানুষ এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সমাবেশে হামলার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না ।

লেখক : যুগ্ম সম্পাদক , ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ( ডিইউজে )

২১ আগস্ট,খায়রুল আলম
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close