• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

সিটি নির্বাচন নিয়ে অগ্নিপরীক্ষায় ইসি

প্রকাশ:  ০৭ মে ২০২৩, ১৩:১৪
নিউজ ডেস্ক

পাঁচ সিটি নির্বাচন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী জোট এসব নির্বাচনে সরাসরি অংশ না নিলেও নির্বাচনী পরিবেশ রক্ষা ও বিধি পালনে হিমশিম খাচ্ছেন ইসির কর্মকর্তারা। আচরণবিধি ভঙ্গে একের পর এক নির্দেশনা জারি ও সতর্ক করার পরও তা আমলে নিচ্ছেন না প্রার্থীরা। ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব নির্বাচনকে ইসির জন্য অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী গাজীপুর ছাড়া বাকি চার সিটিতে এখনো ভোটের বেশ বাকি। আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে এ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাই এবং আপিলের সময় শেষ হয়েছে। আর আপিল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আপিল নিষ্পত্তি হবে আজ রোববার। আগামীকাল সোমবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। সব শেষে ৯ মে প্রতীক বরাদ্দ হবে। এ ছাড়া ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তপশিল ঘোষণার পর থেকেই গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে রীতিমতো হিমশিম অবস্থায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো নির্দেশনা, বিজ্ঞপ্তি ও বক্তব্য দিচ্ছে কমিশন। কখনো কখনো সরকারদলীয় প্রার্থীকে তলব, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে সতর্ক আবার কখনো স্থানীয় প্রশাসনকে আচরণবিধি মানাতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখা, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সাহসের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে ইসি। এরপরও নির্বাচনী বিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে পারছে না কমিশন। শুধু তাই নয়, গাজীপুরের পাশাপাশি বাকি চার সিটির ভোট নিয়েও নির্দেশনা জারি করতে হচ্ছে ইসিকে। সম্প্রতি বিধি পরিপালনে বাকি চার সিটির কমিশনার ও ডিসিদের নির্দেশনা নিশ্চিত করতে চিঠি দিয়েছে কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে এসব নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো ধরনের বিতর্কের মুখে পড়তে না হয় সে ব্যাপারে বেশ সতর্ক রয়েছে কমিশন। ফলে সিটি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করা নিয়ে বেশ তৎপর ইসির কর্মকর্তারা। ক্ষমতাসীনদের অসহযোগিতায় বারবার বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে কমিশনকে। সিটি নির্বাচনে সরকার প্রণীত আইন কোনোভাবেই মানছেন না দলটির প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। বারবার সতর্ক করার পরও আচরণবিধি ভঙ্গ করে চলেছেন তারা। এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগিতা চেয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিঠি দেওয়া হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। ফলে বিষয়টি নেয়ে চরম উদ্বিগ্ন ইসির কর্মকর্তারা।

জানা যায়, বারবার অনুরোধ ও সতর্ক করার পরও ইসিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার গাজীপুরের ছুটি রিসোর্টে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে নিয়ে প্রতিনিধি সভা করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। মন্ত্রীরা যৌথসভার নামে নৌকার প্রার্থীর উপস্থিতিতে ভোট প্রার্থনা করেছেন। এটি সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) ২০১৬ বিধি-৫-এর পরিপন্থি। এজন্য বিধির ৩২ ধারা অনুযায়ী প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগও রয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির। আজ রোববার বিকেল ৩টায় এই বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।

এর আগে এই দুই মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে সতর্ক করা হয়। এ ছাড়া আচরণবিধি ভঙ্গ করায় দুই দফা নির্বাচন কমিশনে তলব করা হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাকে।

নির্বাচন কমিশনের জারি করা একাধিক নির্দেশনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সরকারদলীয় প্রার্থীদের নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তা তাদের। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের আচরণবিধি ভঙ্গের প্রবণতা বেশি। কারণ মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে শোডাউন না করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েও ঠেকানো যায়নি গাজীপুরে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের শোডাউন। পরে দিতে হয়েছে শোকজের চিঠি। এই সিটিতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ও সিনিয়র মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার খবর পেয়ে তাদেরও নিবৃত করতে আলাদা চিঠি দিতে হয়েছে কমিশনকে।

অন্যদিকে, বরিশাল সিটি করপোরেশনে আগামী জুনে নির্বাচন হলেও এখনই দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মাঠে নেমে গেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তার পক্ষে ব্যানার-পোস্টার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে বরিশাল। নিয়মের বাইরে হওয়ায় তা অপসারণে নির্দেশনা দিতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে।

এর আগে, ২৭ এপ্রিল সিটি নির্বাচনে সহায়তা দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে নির্দেশনা দেয় ইসি। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে দেওয়া ওই চিঠিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতার পাশাপাশি নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা আবশ্যিকভাবে পালনের জন্য বলা হয়। এর দুদিন পর নির্বাচনের আগে অনুমতি ছাড়া ভোটের এলাকা থেকে কাউকে বদলি করতে বা ছুটি না দিতে সরকারকে নির্দেশনা দেয় ইসি।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সচিবকে দেওয়া সেই চিঠিতে বলা হয়, এই নির্দেশনা ভোটের ১৫ দিন পর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। সেইসঙ্গে একই চিঠিতে ভোটে আচরণবিধি লঙ্ঘন না করতে মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ন্ত্রণের জন্য মন্ত্রিপরিষদকে অনুরোধ করা হয়। শুধু তাই নয়, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যাতে প্রচারে অংশ নিতে না পারেন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকেও চিঠি দেওয়া হয়।

অন্যদিকে সময়ের আগে প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নেমে যাওয়ায় তা-ও সামাল দিতে হচ্ছে ইসিকে। গত মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দের আগে কেউ যাতে প্রচার চালাতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয় ইসি। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মহানগরের পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের ইসির নির্দেশনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার জন্যও আলাদা চিঠি দিয়েছে ইসি। এসব নির্দেশনা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ইসি। সব কাজ নির্বিঘ্নে করতে সাপ্তাহিক এবং সরকারি ছুটির দিনেও অফিস খোলা রাখতে বলা হয়েছে। শুধু নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় কার্যালয় নয়, সংশ্লিষ্ট সরকারি অন্যান্য দপ্তরও প্রয়োজনে খোলা রাখতে বলেছে ইসি। সর্বশেষ বুধবার জারি করা চিঠিতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশনা দেয় ইসি।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এই ভোটকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি না হয় সেজন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার না চাইলে কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত এসব সিটি নির্বাচন ইসির জন্য নিঃসন্দেহে একটি অগ্নিপরীক্ষা। যদিও ইসির প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা নেই, তারপরও তারা ভোটের মাঠে পুরো ক্ষমতা প্রয়োগ করলে কিছুটা হলেও সুষ্ঠু ভোট করে তাদের আন্তরিকতার প্রমাণ দিতে পারে।

সিটি নির্বাচন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close