• বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শিক্ষার খরচ লুকিয়ে আছে: কাজী নাবিল

প্রকাশ:  ১৩ জুন ২০২৪, ০০:৪৮
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন শিক্ষার ক্ষেত্রে। প্রতিটি বছরই শিক্ষার প্রসারে জোর দেওয়া হয়েছে। বাজেটে বরাদ্দের প্রতিফলন শুধু শিক্ষায় খুঁজলে চলবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, ডিফেন্স মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শিক্ষার খরচগুলো লুকিয়ে আছে।

বুধবার (১২ জুন) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডি আয়োজিত ‘সিপিডি বাজেট সংলাপ ২০২৪’ এর আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সঞ্চালনায় এতে মূল পর্যালোচনা তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান ও রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রমুখ।

কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, জেলায় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। নামিদামি শতাধিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ছাত্ররা বিদেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করছে, গবেষণা করছে, তাদের সাক্ষরতার প্রমাণ রাখছে।

তিনি বলেন, বর্তমান যে নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়েছে যাদের হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট ও উন্নত।

কাজী নাবিল বলেন, দেশের কর্মক্ষম বিশাল যুবসমাজ নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। এই যুবসমাজকে কাজের মধ্যে সম্পৃক্ত করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- যেমন বর্তমানে আইটি সেক্টর থেকে যে কাজগুলো করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সারা দেশে আমাদের ৬ লাখের বেশি ফ্রিল্যান্সার আছে। বর্তমানে প্রায় বিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে এই ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে। ভবিষ্যতে আমাদের এই খাতে আয় আরও বাড়বে। সে জন্য পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রযুক্তির নির্ভর একটি অর্থনীতি পদ্ধতি দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা যদি কৃষি খাত, তৈরি পোশাক খাত ও প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন খাতে প্রবৃদ্ধি করতে না পারি তাহলে সামনের দিনগুলো আমাদের জন্য কঠিন হবে।

কৃষিতে বাংলাদেশ ভালো করছে উল্লেখ করে কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসর্ম্পুণ হয়েছি। এমনকি বর্তমানে আমিষসহ খাদ্য উৎপাদনে আমরা সারা পৃথিবীর মধ্যে সামনের দিকে আছি। একসময় আমিষের চাহিদার জন্য বাইরে থেকে পশু আমদানি করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে আমাদের খামারিরাই দাঁড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমাদের সামনের দিকে এগোতে গেলে কর্মক্ষম যুব সমাজকে কাজ দিতে হবে। তাদের কাজে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের কোনও বিকল্প নেই।

তার মতে, পাবলিক সেক্টরে যে কাজ করা হচ্ছে, অবকাঠামো নির্মাণ, যোগাযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষার প্রসারসহ সব কিছুই করা হচ্ছে বেসরকারি খাতকে ভবিষতে বেগবান ও গতিশীল করার জন্য। সেখানে অবশ্যই আমাদের আরও বেশি কাজ করতে হবে।

কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, আমাদের বেসরকারি খাতে যেসব সমস্যা হচ্ছে, বিভিন্ন উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করার জন্য সামনের দিকে আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া লাগবে। ইতোমধ্যে সেখানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কদিন আগেও এই বিষয়ে একাধিক বিল পাশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের বিদেশের নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে, ভবিষ্যতে যাতে প্রবাসী আয় বাড়ানো সম্ভব হয়। বাংলাদেশেও আমরা যেন ভালো কাজ করতে পারি। আমাদের অর্থনৈতিক সূচকগুলোর মধ্যে নিম্ন স্তর থেকে আমরা যেন উঁচু স্তরে উঠতে পারি। আমরা যদি তাকিয়ে দেখি, কেবলমাত্র পোশাক খাত এগিয়েছে। ২০/৩০ বছর আগের চেয়ে বর্তমানে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক খ্যাতিমান ব্র্যান্ডের পোশাক বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের সেই পরিমাণ উন্নতি হয়েছে। একইভাবে অন্যান্য সেক্টরেও উন্নতি করা লাগবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের প্রথমে উপলব্ধি করতে হবে বর্তমানে আমরা কোথায় আছি। বাংলাদেশ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালে দায়িত্ব নেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধারে ১৫ বছর সরকারে আছেন। আমরা যদি ফিরে তাকাই ২০০৯ সালে, তাহলে দেখতে পাবো কোথায় ছিলাম। ২০০১ থেকে ২০০৬ ছিল বিএনপি জামায়াতের দুঃশাসন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমরা দেখলাম শিল্প উৎপাদনের জন্য, শিক্ষার জন্য, স্বাস্থ্যসেবার জন্য, বিভিন্ন অবকাঠানো নিমার্ণের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। তখন প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ছিল না, যোগাযোগ ব্যবস্থাও সেই অর্থে ছিল না। বাংলাদেশের তখন বার্ষিক বাজেট ছিল মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৬০০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে এটি বেড়ে হয়েছে ২৮০০ মার্কিন ডলার। তখন আমাদের জিডিপি ছিল ৬৫ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে আমরা যে চিত্র তুলে ধরছি এর মধ্যেও আমাদের অনেক কিছু কাজ করার আছে। আরও সামনে যাওয়ার সুযোগ আছে।

কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, আজকের আলোচনায় যে প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি সুধিজনেরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের বলবো- তারা যেন গ্লাসটি অর্ধেক খালি না দেখে অর্ধেক ভর্তি আছে সেটাও দেখার চেষ্টা করেন।

শিক্ষার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষায় যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে একইভাবে স্বাস্থ্যেও তার অত্যন্ত সংবেদনশীলতা আমরা লক্ষ্য করি।

অর্থনীতি নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা ৪ বছর আগে যদি তাকিয়ে দেখি, যখন করোনা মহামারি হয়েছিল। একাধিক সংস্থা আশংকা প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশে বিশাল বিপর্যয় হতে যাচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের পাশাপাশি তার সুবিবেচনা ও সুদক্ষতা কারণে আমরা সফলভাবে কোভিড মোকাবিলা করতে পেরেছিলাম। খুব দ্রুত সময়ে ১০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অনেকের ভবিষ্যত বাণী তখন বাস্তবায়িত হয়নি। একইভাবে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের বাজেটকে সেভাবে তৈরি করা হয়েছে। আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিলসহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থার পরামর্শে যে বাজেট পেশ করা হয়েছে সেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, সাধারণত বাজেট বৃদ্ধি করা হতো প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে। এবার বৃদ্ধি করা হয়েছে ৫ শতাংশ। আগের চেয়ে ঘাটতির লক্ষমাত্রা কমানো হয়েছে। এটার বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, আন্তজার্তিক যেসব সংস্থার সঙ্গে আমরা কাজ করছি তারা কিন্তু আশাবাদী, বাংলাদেশ সঠিক পথে আছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় আমরা এর থেকে উত্তরণ করতে পারবো।

এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, বাজেটের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সামাজিক খাতগুলোতে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতের কথা উঠে এসেছে। আমাদের শ্রমজীবী মানুষ ও কৃষক ভাইদের কথাও আলোচনায় উঠে এসেছে। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক। তিনি প্রান্তিক মানুষের কথা চিন্তা করেন। গতকালও আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮ হাজার গৃহহীন মানুষকে ঘর দেওয়া হয়েছে। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ ধরনের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে সেখানকার ভূমিহীনদের। আমার দৃঢ় বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান বাজেট যেভাবে বাস্তবায়ন করছি ভবিষ্যতেও তার অনুসৃত অর্থনৈতিক নীতিগুলো বাস্তবায়িত হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, আমরা যেভাবে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গঠন করেছি, একইভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।

কাজী নাবিল আহমেদ,বাজেট ২০২৪-২৫
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close