• বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১
  • ||

বিএনপি–জামায়াত কর্মী বলে চিৎকার দিয়ে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৩

প্রকাশ:  ১৬ জুন ২০২৪, ২১:৫১
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

রাজধানীতে অভিনব কৌশলে ছিনতাই করা একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। চক্রটি টার্গেট করা ব্যক্তিকে ‘বিএনপি–জামায়াত কর্মী’ আখ্যা দিয়ে চিৎকার দেয়। এতে পথচারীরা বিভ্রান্ত হলে ‘পুলিশ পরিচয়ে’ টার্গেট করা ব্যক্তিকে নিজেদের গাড়িতে তুলে নেয় তারা। এরপর ভুক্তভোগীর কাছ থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় চক্রটি। সম্প্রতি এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মাইনু নামে চক্রের এক সদস্য আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তার জবানবন্দিতে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। ডাকাত দলের হোতা হিরার নামে খুন, মাদকসহ ছিনতাই ও ডাকাতির পাঁচটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া অন্য সদস্যদের নামেও একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশ জানায়, রাজধানী কেন্দ্রিক ডাকাত দলের সরদার হিরা। তার দলে এক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ ৮–১০ জন সদস্য রয়েছে। এই চক্রের সদস্যদের আশ্রয়দাতা রাজধানীর সিদ্দিকবাজার এলাকায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা মো. আসাদ। অভিযান শুরুর পর আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি। তারা দিন–দুপুরেই বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। তাদের কৌশল ভিন্ন হওয়ায় ভুক্তভোগীরা চিৎকার করলেও পথচারীরা সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে না। প্রথমে টার্গেট ব্যক্তিকে ঘিরে ধরে হিরা বলতে থাকে ‘এই জামায়াত–বিএনপির কর্মী ধর ধর, গাড়িতে উঠা’। এসব কথা শুনে পথচারীরা বিভ্রান্ত হলে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ওয়াকি-টকি হাতে পেছন থেকে এভাবে নির্দেশ দিত হিরা।

এই চক্রের সদস্যরা রাজধানীর ব্যাংক পাড়াসহ বাণিজ্যিক এলাকায় ঘুরাফেরা করে। প্রথমে অধিক টাকা লেনদেনকারী ব্যক্তিকে শনাক্ত করে তারা। পরে ওই ব্যক্তিকে নজরে রাখে এবং একপর্যায়ে তার গতিরোধ করে চক্রের সদস্যরা। এর মধ্যে গত ২৬ মার্চ দুপুরে কয়েকজন হজযাত্রী সাড়ে ২২ লাখ টাকা নিয়ে অফিসে ফিরছিলেন। পথে সিদ্দিকবাজার এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ঢাকার বংশাল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন ভুক্তভোগী মাদ্রাসাশিক্ষক মো. মাহফুজ। ঘটনাস্থল থেকে চক্রের তিন সদস্যকে হাতে-নাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- ডাকাত দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড সায়েম হোসেন, মো. মাইনু ও মো. জোবায়ের। তাদের তিনদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ এ চক্রের সন্ধান পায়।

ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই ও ডাকাতি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এ চক্রের প্রধান হোতা হিরার বিষয়টি জানা যায়। আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে অভিযান চালিয়ে তাকে ৭ জুন রাজধানীর কদমতলীর মিরাজ নগর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হিরাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তার কাছ থেকে ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনের নাম জানতে পারে পুলিশ। এর মধ্যে সিদ্দিকবাজারের আসাদ ও তার দুই ভাগিনার নাম রয়েছে। তারা স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। এছাড়া আসাদের নামেও দুটি ডাকাতি মামলা রয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে পলাতক আসাদ।

ভুক্তভোগী মাহফুজ জানান, রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় বসবাস করেন এবং তেজগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক তিনি। ২৬ মার্চ হজযাত্রীদের টাকা সংগ্রহ করে ধানমন্ডিতে বিমানের টিকিট কিনতে একটি ট্রাভেলস অফিসে যাওয়ার কথা ছিল তার। তবে বাসা থেকে বের হওয়ার পর পুরান ঢাকা থেকে আসাদুজ্জামান নামে পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তি তার মোবাইল ফোনে কল দেন। ওমরাহ পালনে যাওয়ার জন্য টাকা দেবেন আসাদুজ্জামান। এ জন্য তার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিতে অনুরোধ করা হয়। সে অনুযায়ী, তেজগাঁও থেকে পুরান ঢাকায় যান মাহফুজ। সেখান থেকে আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেন তিনি। সব মিলিয়ে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে ভাড়া করা মোটরসাইকেলে পুরান ঢাকা থেকে ধানমন্ডির উদ্দেশে রওনা দেন মাহফুজ। আলুবাজারের কাছাকাছি পৌঁছালে তার গতিরোধ করে টাকাগুলো ছিনতাই করে নিয়ে চক্রটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকার বংশাল থানার ওসি মাইনুল ইসলাম বলেন, ডাকাতি মামলার আসামি আসাদকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

রাজধানী,অভিনব,কৌশলে
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close