• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

শাটলের চবি এক চলন্ত বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ:  ০৫ আগস্ট ২০১৮, ২০:২৩
রুমান হাফিজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পৃথিবীতে মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেন সার্ভিস থাকলেও এখন শুধু চালু আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। চবিতে শাটল ট্রেন সার্ভিস চালু হয় ১৯৮০ সালে।

চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে চবি ক্যাম্পাসে পৌছতে সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা।প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত জোড়া ট্রেন চলাচল করে নগরী ও ক্যাম্পাসে। প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার শিক্ষার্থীদের যাতায়াত এই শাটল দিয়েই। যদিওবা শিক্ষার্থীদের তুলনায় শাটল ট্রেনের বগি সংখ্যা কম। অনেক কষ্টে গাদাগাদি করে যেতে হয়। তবু শাটলের উপর বিরক্ত হয়েছেন এমন লোক পাওয়া ভার।

শাটল ট্রেনকে শুধুমাত্র ট্রেন বললে ভুল হবে। শাটল কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ বলা যায়। শাটল কে ঘিরে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কত যে সুখ-দুঃখের গল্প জড়িয়ে আছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই। তবে এটি যে সবার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। শাটল হলো বিনোদনের স্বর্গ আর ভালোবাসার রাজ্য। যেখানে প্রেম, গল্প, গান, পড়াশোনা একসঙ্গে চলে।

প্রতিটি বগিতে আছে নিজস্ব বাদক ও গায়কদল। এই খ্যাত-অখ্যাত গায়ক ও বাদকদল প্রতিদিন আসা যাওয়ার সময় ট্রেনের দেয়াল চাপরিয়ে উচ্চস্বরে গান গেয়ে সারা বগি মাতিয়ে রাখে। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজী ,প্যারোডিসহ সব ধরনের গান চলতে থাকে। কেউ কেউ ফোক, ভাটিয়ালি, আধুনিক, মাইজভান্ডারীও গায়। সর্বোপরি, এসব শাটল সিঙ্গারদের সুরের মূর্ছনায় মুখরিত থাকে শাটল ট্রেন।

যেমনটা বলছিলেন ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের মোঃ রিপন সরকার, "আমরা কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন চলাচল করি এই ট্রেনে। শাটল ট্রেন কে আমি চলন্ত বা ভ্রাম্যমাণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মনে করি। স্বপ্নিল হাজারো তরুণ - তরুণীর সুখ,দুঃখ, হাসি - কান্না, প্রেম, বিচ্ছেদ, খুনসুটির চিরন্তন সাক্ষী হয়ে গ্রাম- নগর পেরিয়ে ছুটে চলেছে প্রতিনিয়ত। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের চবি ক্যাম্পাসের ঘুম ভাঙ্গে শাটলের হুইসেলে। প্রতিটা চবিয়ানের মতো আমার কাছে শাটল মানে এক ভালোবাসার নাম।"

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুরাইয়া ইসলাম মিমির অনুভূতিটা এমন, "সবুজে ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হলেও অন্যতম প্রধান আকর্ষণ শাটল ট্রেন। প্রতিদিন হাসি,গল্প,আড্ডা,গান বাজনা নিয়ে ছুটতে ছুটতে উপস্থিত হয় প্রিয় ক্যাম্পাসে। এই শাটল ট্রেন এই গড়ে ওঠে আমাদের একেঅপরের বন্ধুত্ব,প্রেম, ভালোবাসা। কেউ কেউ এখানে গান গাইতে গাইতে হয়ে যায় বিখ্যাত গায়ক ও,শাটল ট্রেন এমনই এক শিল্প। অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন এই শাটল ট্রেনের যাত্রী হওয়ার। পৃথিবীর একমাত্র শাটল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং শাটল ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী হতে পেরে আমি গর্বিত। ভালোবাসি শাটল ট্রেন।"

তবে পরিসংখ্যান বিভাগের কানিজ ফাতেমা অনেকটা অভিযোগের সুরে বলছিলেন, "শাটল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণসঞ্চারক,হাজারো শিক্ষার্থীর জীবনের জানা-অজানা অসংখ্য গল্পের আঁতুড়ঘর; যেখানে হয়েছে নতুন নতুন ব্যাণ্ডের হাতেখড়ি,চবির বহুবছরের ঐতিহ্য। বর্তমানে শাটলের সাথে যুক্ত করা মালবগি,সিট ধরার প্রতিযোগিতা, তদারককারীর অভাব আর অসতর্কভাবে ছাদে,ইঞ্জিনে,দরজায় ঝুলে যাতায়াত করতে গিয়ে ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ফলে প্রশ্ন উঠে নিরাপত্তার, পরিচ্ছন্নতার এবং প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় বগি-সংযোজনের। প্রতিটি চবিয়ানের এখন দাবী -বগিবৃদ্ধিসহ শাটলের ত্রুটিসমূহ পর্যবেক্ষণ ও দূরীকরণ এবং নিরাপদ শাটল বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ।"

আরবি বিভাগের হাবিব আযাদের অনুভূতিটা আরেকটু ভিন্ন, "চট্টগ্রাম শহরেই বসবাস হওয়াতে শাটল ট্রেনের সাথে পরিচয়। ইচ্ছাটা ওখান থেকেই।এখন তো নিয়মিত চড়েই ক্যাম্পাসে যাই।একটু কষ্ট হলেও আমি উপভোগ করি। সিট ধরার জন্য ক্লাস শেষ করেই দৌড় কিংবা কাউকে অনুরোধ একটা সিলের জন্য। আবার কখনো কখনো অন্যদের জন্য সিট ধরা।সেজন্য ট্রিট দাবী। ট্রেনে বসে বন্ধুদের সাথে হাসি,গান,গল্প সে এক ভিন্নরকম ভালো লাগা..!"

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর নিজের অজান্তেই মনের সঙ্গে মিশে গেছে শাটল যা তারা নিজেরাই জানে না। ভাবতে ভাবতে কখন যে ট্রেন চলে আসে চবি জংশনে তা টেরই পাওয়া যায় না। এখানে জন্ম নেয় হাজারো স্মৃতি।

/এসএফ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close