• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

প্রশ্নফাঁসের পেছনে শুধুই কি টাকা না রাজনীতি

প্রকাশ:  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০১:০৭ | আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০২:১২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের পেছনে শুধু কি অর্থ লেনদেনই মুখ্য? না এর পেছনে রাজনীতিও কাজ করছে? এ প্রশ্ন এখন অনেকের মনে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত অন্তত ৫টি স্তরের গ্রুপের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রশ্নফাঁসের মূল উৎস কোথায় তা শনাক্ত করতে পারেনি। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, বিজি প্রেসে ছাপানো ও ট্রেজারি থেকে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছায় প্রশ্নপত্র। কিন্তু কোন ধাপ থেকে প্রশ্নপত্র প্রথম ফাঁস হয়েছে তার উৎস এখন পর্যন্ত অজানাই রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে সব পক্ষই অন্ধকারে।

প্রশ্নফাঁস নিয়ে গত ৩ বছর ধরে কাজ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) শেখ নাজমুল আলম এই টিমের তদারক করছেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটিরও সদস্য। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, যারা আমাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে তারা শুধু অর্থ উপার্জনের জন্যই প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িয়েছে। তবে আমাদের মনে হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অপচেষ্টাও এখানে কাজ করছে। এ ব্যাপারে আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত খবর

    সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত যাদের আমরা গ্রেপ্তার করছি তাদের প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে তারা কেউ কেউ সরকারবিরোধী মতাদর্শের। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে প্রশ্নফাঁসের পেছনে অবৈধ অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি রাজনীতিও কাজ করছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটা অপপ্রয়াস থাকতে পারে। তবে রুটে গেলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

    সূত্র জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। তারা ফেসবুক, ইমো, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খুলে প্রশ্নপত্র বিক্রি ও ছড়িয়ে দিচ্ছে। কোনো কোনো চক্র পরীক্ষার আগের রাতেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে। আবার কোনো কোনো চক্র পরীক্ষার ২ থেকে ৩ ঘণ্টা আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ইতোমধ্যে র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে একাধিক গ্রুপের খোঁজ পেয়েছে।

    কোনো কোনো চক্র বিনা পয়সাতেও প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দিয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্য পাচ্ছে। এসব গ্রুপ ঢাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা পর্যন্ত সক্রিয়। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পাঠাচ্ছে। আর বিকাশে নিচ্ছে টাকা। এ চক্রে ছাত্র, ব্যবসায়ী, এমনকি শিক্ষক পর্যন্ত কাজ করছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায় ২০০ জনকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে। তবে মূল উৎসে এখন পর্যন্ত যেতে পারেনি।

    উৎসের সন্ধান বের করতে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক টিম কাজ করছে। মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। কাজ করছে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্যরা তেজগাঁও বিজি প্রেস পরিদর্শন করেছে। সেখানে তারা অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিজি প্রেসে ছাপতে ৭০ দিন লাগে। এর সঙ্গে অন্তত ২৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। প্রশ্নপত্রের প্রুফ দেখা থেকে শুরু করে প্যাকেট করা পর্যন্ত তারা কাজ করে থাকেন। এর পর এখান থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশেষ টিমের সদস্যরা প্রশ্নপত্র বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। জেলায় নেওয়ার পর এ প্রশ্নপত্র রাখা হয় ট্রেজারিতে। পরে পরীক্ষার দিন সকালে ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে আনা হয়।

    বিজি প্রেসের কর্মকর্তারা বলছেন, এক সময় তাদের এখানে বিসিএস, বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা এবং ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানো হতো। এখন শুুধু এসএসসি/এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়। এক সময় বিসিএস থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এখান থেকে ফাঁস হতো। তবে এখন বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না। তাদের এ দাবির সঙ্গে একমত নন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এখনো বিজি প্রেসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন। যে কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দফায় দফায় বিজি প্রেস পরিদর্শন করছে।

    সূত্রঃ আমাদের সময়

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close