• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর ছবি ফেসবুকে দিলেন রাঙ্গামাটির এসপি!

প্রকাশ:  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২৩:১৯ | আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২৩:২৫
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

রাঙামাটির বিলাইছড়িতে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার মারমা দুই তরুণীর ছবি নিজের ফেসবুকে প্রকাশ করেন পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তারিকুল হাসান। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ছবিগুলো ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

যৌন নির্যাতনের শিকার কোনও নারীর ছবি প্রকাশ করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে এধরনের আইনবিরোধী কাজের সমালোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি তদন্ত করেও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সম্পর্কিত খবর

    শুক্রবার বেলা ১২টা ৩২ মিনিটে এসপি রাঙামাটি (ইংরেজিতে) ফেসবুক আইডি থেকে ওই দুই তরুণীর ছবি প্রকাশ করা হয়। তখন থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ছবিগুলো ফেসবুকে ছিল। সেখানে সর্বশেষ ২১টির মতো কমেন্টসও দেখা গিয়েছিল। সেখান থেকে এছবি নিয়ে অনেকেই নিজ নিজ ফেসবুক আইডিতে শেয়ার দিয়েছেন।

    এছাড়া, বিভিন্ন নেটওয়ার্কে ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে। ছবির ক্যাপশনে দুই তরুণীর নাম,পরিচয় ও পিতামাতার নামও লেখা হয়েছে। তারা বর্তমানে কোথায় রয়েছেন, কী করছেন তাও ক্যাপশনে লেখা হয়।

    পুলিশ সুপারের প্রকাশ করা ছবির সঙ্গে আরও লেখা হয়েছে, আজ সকাল ৯টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান ও পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তারিকুল হাসান তাদের দেখতে যান। এসময় কুশল বিনিময় করেন।

    দুপুরে ছবিগুলো ফেসবুকে দেখা গেলেও শুক্রবার বিকালে আর দেখা যায়নি। এবিষয়ে রাঙামাটির এসপি সাঈদ তারিকুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‌এসপি ‌রাঙামাটি আইডিটি তার। তবে তিনি সেটি পরিচালনা করার সময় পান না। উপপরিদর্শক (এসআই) পদের একজন কর্মকর্তা আইডিটি পরিচালনা করেন।

    ভুক্তভোগীর ছবি এভাবে প্রকাশ করা যায় কিনা? জানতে চাইলে এসপি বলেন, তারা তো ভিকটিম না। তারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে কিনা, এখনও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে জানা যাবে, আসলে কী ঘটেছিল। আমরা একটা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিয়েছি। সেটা আদালতকে জানিয়েছি। ধর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকলে মামলা হবে। পুলিশ তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পুলিশ যদি নিতো তাহলে বিষয়টি অন্যরকম হতো।আমরা তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি।তারা নিরাপদে আছে।

    যদি ধর্ষণের প্রমাণ মেলে তখন কী হবে প্রশ্নে পুলিশ সুপার নিরুত্তর থাকেন।

    আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, ধর্ষণ ছাড়াও কোনও নারী যদি ইভটিজিং,লাঞ্ছিত,শারীরিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে ভিকটিম হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের ছবি প্রকাশে আইনগতভাবে নিষেধ রয়েছে।

    উল্লেখ্য,গত ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের ওড়াছড়ি গ্রামে মারমা দুই বোন যৌন নিপীড়নের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। বড় বোনকে ধর্ষণ ও ছোট বোনকে যৌন নির্যাতন করা হয়। পরদিন তাদের রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে ১৫ ফব্রুয়ারি তাদেরকে একজন ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তারা পুলিশ পাহারায় রয়েছেন। শুক্রবার এসপি ও জেলা প্রশাসক ওই বাড়িতেই দুই তরুণীকে দেখতে যান। সেখানেই ছবিগুলো তোলা হয়।

    জেলার সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তার আইডি থেকে এভাবে দুই তরুণীর ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করা ঠিক হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে এসপি বলেন,‘এটা হয়তো ভুলে করেছে। পরে কেউ কমেন্টস করায় তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’

    নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ভিকটিমদের ছবি কোনও মাধ্যমে প্রকাশের ক্ষেত্রে নিষেধ করা হয়েছে। নির্যাতিতা নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের ব্যাপারে বাধা-নিষেধ স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আইনে বলা আছে, ‘অপরাধের শিকার হয়েছেন এমন নারী বা শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অপরাধ বা এসম্পর্কিত আইনগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম-ঠিকানা বা অন্যবিধ তথ্য কোনও সংবাদপত্রে বা অন্যকোনও সংবাদ মাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাবে, যাতে উক্ত নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়।’ আইনে আরও বলা হয়, ‘এই বিধান লঙ্ঘন করা হলে দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের প্রত্যেকে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ডে বা অনুর্ধ্ব একলাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।’

    মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী এলিনা খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘ভিকটিমের ছবি প্রকাশ করা আইনগত নিষিদ্ধ। কেউ তা করলে আইনে তাদের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। জেলার সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তা এটা করেছেন,সুতরাং তার বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।’

    তিনি বলেন, ‘এই (দুই মারমা তরুণীর) অভিযোগের পরই মামলা নেওয়া উচিত ছিল। মামলা না নিয়ে জিডি নেওয়া হলো কেন? ধর্ষণ হয়েছে কী হয়নি? তা মামলা নিয়েও তদন্ত করা যায়। এটা আমলযোগ্য অপরাধ, আমলে নিয়ে মামলা নেওয়ার কথা। রাঙামাটির পুলিশ তাও করেনি।’

    পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া ও প্ল্যানিং বিভাগের উপমহাপরিদর্শক আব্দুল আলিম মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এধরনের ছবি ফেসবুকে দেওয়া ঠিক না। তিনি (এসপি) হয়তো সেটা জানতেন না। জানার পরে ছবি সরিয়ে ফেলেছেন।’

    সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close