নিহত একরামের উদ্দেশ্যে দুই মেয়ের আবগঘন খোলাচিঠি
কক্সবাজারের টেকনাফে কথিত বন্দুকযুদ্ধে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে। এলাকাবাসীর দাবি, কাউন্সিলর একরামুল হক ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ছিলেন না। তার অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব খারাপ ছিল।
এদিকে একরামুল হক মৃত্যুর ঘটনায় তার দুই কন্যা তাহিয়াদ আর নাহিয়ান এখনও শোকে কাতর। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। কিছুতেই মানতে পারছেন না, তাদের প্রিয় বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই। তাই বাবার উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকুতি আর আবেগ মেশানো এক খোলাচিঠি লিখেছেন তারা।
সম্পর্কিত খবর
চিঠিতে লেখা, ‘প্রিয় বাবা, কেমন আছো তুমি! নিশ্চয় অনেক ভালো আছো। আমরা কিন্তু ভালো নেই। কারণ আমাদের পুরো পৃথিবীটা যে তোমাকে ঘিরেই ছিল।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে তোমার কাজ ছিল তোমার রাজকন্যাদের রেডি করা। বাইকে করে প্রাইভেট পড়তে নিয়ে যাওয়া। স্কুলে পৌঁছে দেওয়া। জান বাবা, বাড়িতে অনেক মানুষ চাচা-চাচি, জেঠু-জেঠিমা, ফুফি-ফুফা আর বাড়িভর্তি কাজিনরা। সবার মাঝে তোমার ছায়া খুঁজে চলছি আমরা দুই অনাথ রাজকন্যা। বারবার রাজকন্যা বলছি, কারণ তোমার চোখে আমরা রাজকন্যাই ছিলাম।
হয়তো খুব বেশি প্রাচুর্যপূর্ণ ছিল না আমাদের জীবন, কিন্তু কখনো কোনো কিছুর অভাব তুমি বুঝতে দাওনি আমাদের। আমাদের ছোট বড় সব চাওয়া তোমার কাছে প্রাধান্য পেয়েছে সবার আগে।
সবার মুখে শুনেছি, তোমার জানাজায় প্রচুর মানুষের জমায়েত হয়েছিল, ইসলাম ধর্মে মেয়েরা সেখানে যেতে পারে না, তাই আমাদের দেখা হলো না স্বচক্ষে, তুমি কতটা জনপ্রিয় ছিলে সবার কাছে।
হয়তো ঈদের পর থেকে আমাদের স্কুলবাস নিয়ে যাতায়াত করতে হবে। সে সময় তোমাকে অনেক মিস করব। তোমার শরীর থেকে বাবা-বাবা একটা ঘ্রাণ আসত, খুব মিস করব সে ঘ্রাণ।
তোমার গানের গলা যথেষ্ট প্রশংসনীয় ছিল। আমাদের আবদারে সব গান গেয়ে শুনাতে। মিস করব সে দরাজ ভরা কণ্ঠের গান।
তোমার ভালো মানের চশমার প্রতি লোভ ছিল। তোমার রেখে যাওয়া সে সব চশমা আমাদের দিকে জ্বলজ্বল করে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
এই কিশোর বয়সে হারিয়ে ফেলব, তা কল্পনাতীত ছিল। কিন্তু আল্লাহ্ তোমাকে নিয়ে গেলেন। হয়তো উনি তোমাকে আমাদের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন।
বাবা, তোমার অসমাপ্ত স্বপ্ন আমরা পুরো করব। তোমার দেখিয়ে দেওয়া পথে আমরা আজীবন চলব।
তোমাকে কথা দিলাম, আমরা তোমার সত্যিকার রাজকন্যা হয়ে তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। ওপরে অনেক ভালো থেকো বাবা।’