• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

দেশে সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত

প্রকাশ:  ০১ জুন ২০১৮, ১২:৪৩ | আপডেট : ০১ জুন ২০১৮, ১২:৪৪
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

দেশের সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত; যা সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। দেশে আশঙ্কাজনক হারে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে হেপাটোলজি সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।

সেমিনারে জানানো হয়, এক গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ লিভারে চর্বি রোগে আক্রান্ত। দেশের সাড়ে ৪ কোটি মানুষ অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশই এ রোগে ভুগছে।

সম্পর্কিত খবর

    সেমিনারে আরো জানানো হয়, গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামের স্থুলকায় নারীরা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন (৭৩.২১ শতাংশ)। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ৭১ শতাংশ এবং উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ লিভারে চর্বি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। যাদের আয় কম তাদের তুলনায় উচ্চ আয়ের ব্যক্তিগণের আক্রান্ত হওয়ার হার প্রায় দেড় গুণ বেশি। তবে নারী-পুরুষ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতাভেদে রোগের প্রাদুর্ভাবে কোনো ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়নি। মূলত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার ধরনের পরিবর্তনের কারণে দিন দিন ফ্যাটি লিভার রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

    এছাড়া দেখা যায়, স্থূলতায় আক্রান্ত হলে ১০ দশমিক ৭১ গুণ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ঝুঁকি প্রায় ২.৭১ গুণ বেশি বলে গবেষণায় উপস্থাপিত হয়েছে। বিবাহিতদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে।

    সেমিনারে জানানো হয়, গবেষক দলটি সারা দেশে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বা লিভারের চর্বি রোগের প্রাদুর্ভাব নির্ণয় করতে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা এবং দেশের বৃহত্তম চার বিভাগের অন্তর্গত চারটি জেলা শহর ও চারটি উপজেলা শহরে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ গবেষণা কর্ম ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয় এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সর্বমোট ২৭৮২ জন সুস্থ ও স্বাভাবিক কর্মক্ষম ব্যক্তি এই গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ১৬৯৪ জন পুরুষ এবং ১০৮৮ জন নারী। অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৮৫ বছর। তাদের গড় বয়স ছিল ৩৪ বছর।

    এ সময় বক্তারা জানান, সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে লিভারে চর্বি জমার কারণে প্রদাহ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে স্টিয়াটোহেপাটাইটিস। অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়ার কারণে লিভার বা যকৃতে যে প্রদাহ সৃষ্টি হয় তাকেই স্টিয়াটোহেপাটাইটিস বা লিভারে চর্বি জমাজনিত প্রদাহ বলে। এই রোগের আগের স্তরের নাম হচ্ছে ফ্যাটি লিভার বা লিভারে চর্বি রোগ। এ রোগ ডায়াবেটিস এবং শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সাথে সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।

    বক্তারা জানান, এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন করতে হবে। দৈনন্দিন এক্সারসাইজ করতে হবে, তাহলে ফ্যাটি লিভার রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

    কেন বাংলাদেশের মানুষের লিভারে চর্বি জমছে প্রশ্নের জবাবে হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহিনুল আলম বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের জীবন-যাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। তারা আগের মতো শারীরিক পরিশ্রম করেন না। এমনকি ব্যায়ামও করেন না। কিন্তু তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খাচ্ছেন। অতিরিক্ত চর্বি লিভারে জমে যাচ্ছে। এটা মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই হুমকির। তাছাড়া বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি ভাত অথবা রুটির মতো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খায়। কার্বোহাইড্রেট পুরোটা শরীর কাজে লাগাতে না পারলে এর অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে লিভারে জমে থাকছে।

    গ্রামের মহিলাদের মধ্যে লিভারে কেন বেশি পরিমাণে চর্বি জমছে এর উত্তরে চিকিৎসকেরা বলেন, গ্রামের অবস্থাপন্ন মহিলাদের এখন আর কোনো কাজ নেই। তারা এখন আর শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগও পান না। ফলে শুয়ে-বসে কেবল টিভি দেখে দিন যাপনের কারণে তারা স্থুলকায় হয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের লিভারে চর্বি জমছে।

    চিকিৎসকেরা বলেছেন, সাধারণত অ্যালকোহল (মদ) পান করলে লিভারে চর্বি জমে। বাংলাদেশের মানুষের একটি সামান্য অংশ ছাড়া বেশির ভাগ অ্যালকোহল পান করেন না। তারা চর্বিযুক্ত খাবার, বেশি করে ভাত খান বলেই তাদের লিভারে চর্বি জমছে।

    হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মবিন খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূরুদ্দিন আহমদ, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আমীর খসরু প্রমুখ।

    অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লিভার সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ডা. বাহার হোসেইন, লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. মোতাহার হোসেন। গবেষকদের মধ্যে ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোলাম আজম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close