• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সংসদে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ড. কামাল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

প্রকাশ:  ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৪২
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফাইল ছবি

ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ড. কামাল হোসেন খুনীদের সঙ্গে ঐক্য করেছেন উল্লেখ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন সংসদ সদস্যরা। জাতির সঙ্গে ভণ্ডামি করে কুয়াশার জাল সৃষ্টি করার অপচেষ্টা সফল হবে না বলে মন্তব্য করেন তারা।

মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিকভাবে ইন্টার প্রেসসার্ভিস নিউজ এজেন্সি কর্তৃক ‘হিউম্যানটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড’ এবং গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন কর্তৃক ‘স্পেশাল ডিসটিংশান অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ’ পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাধারণ নোটিশের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।

প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা ধরে চলা আলোচনায় অংশ নেন ৪০ জনেরও বেশি সদস্য। পরে ভোটে ধন্যবাদ প্রস্তাবটি পাস হয়।

সংসদের ২৩তম অধিবেশনে সভপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও মো: ফজলে রাব্বি।

কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ (১) বিধিতে ধন্যবাদ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন হুইপ মো. শহীদুজ্জামান সরকার। প্রস্তাবটি হচ্ছে ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক ও উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, দর্শন-চিন্তা দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও সমাদৃত হচ্ছে। এরই ফলশ্রুতিতে ইন্টার প্রেস সার্ভিস নিউজ এজেন্সি, ইউএন কর্তৃক হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড এবং গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন কর্তৃক স্পেশাল ডিসটিনশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশীপ সন্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। এসকল সন্মাননা অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করায় প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানানো হোক।’

পরে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। এর আগে ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর ৪২ জন এমপি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও প্রশংসা করে বক্তব্য প্রদান করেন। একইসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বিএনপিসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে খুনীদের সঙ্গে নীতিহীন জোট করে ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে অবৈধভাবে ক্ষমতায় যাবার ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তার এই সিদ্ধান্তের প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমর্থন বজায় রেখেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন আমাদের দেশের নেতা নন, তিনি এখন বিশ্বের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে একজন। তার সমস্ত ধ্যান ধারনা জনকল্যানে উৎসগীকৃত। আমারা উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও এখনো তিন কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে আছে। তাদের উত্তোরণ বিশেষ জরুরী। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ড. কামাল বলেছেন তিনি তারেক জিয়ার সঙ্গে ঐক্য করে নাই। যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়াপার্সন তারেক জিয়া সে দলের সঙ্গে ঐক্যের মানে কি? ড. কামাল হোসেন খুনীদের স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে ঐক্য করেছেন। যা নিন্দনীয়। যারা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিচ্ছেন তাদের আশা কখনো পূর্ণ হবে না।

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন,মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি কোন উষ্কানীতে পা না দিয়ে কুটনীতিতে সফলতা অর্জন করে আন্তর্জাতিক বিশ্বে সমর্থন সৃষ্টি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

তিনি আরো বলেন, সংসদ ভাঙবে কেন? নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। তারা নতুন করে যে ষড়যন্ত্র সৃষ্টি করতে চাইছে, তা সফল হবে না।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক নানা ধরনের খেলাধুলা। ড. কামালের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের ঐক্য জোট কোন কাজে লাগবে না। জাতীর সঙ্গে ভণ্ডামী করে আপনারা যে কুয়াশার জাল সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন তা কখনো সফল হবে না।

দীপু মনি বলেন, ড. কামাল হোসেন খুনীদের সঙ্গে জোট করেছেন। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পায়তারা করছে। জোটের তীব্র সমালোচনা করে দীপু মনি বলেন, তারা কোন রবার্টের অপেক্ষায় আছেন, যারা তাদেরকে অবৈধপথে ক্ষমতায় নিয়ে যাবে? রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে ভাল কাজের জন্য ২৯টি পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন, আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া পুরষ্কার তো দূরের কথা এতিমদের টাকা আত্মসাতের অপরাধে জেলে আছেন।

সমাজকল্যানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, সারা পৃথিবীতে আজ উদ্বাস্তু বাড়ছে। সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মায়ের মত আচরণ করে ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে শেখ হাসিনার কুটনৈতিক চালের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ব আজ মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টি করছে, গণহত্যার দায়ে দায়ি করছে। এটা শেখ হাসিনার বড় বিজয়।

আ স ম ফিরোজ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে উন্নয়ন ঘটেছে। কিন্তু কোন কোন ষড়যন্ত্রকারী তা চোখে দেখে না। তারা অগণতন্ত্রান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসার পায়তারা করছে। বাহাউদ্দীন নাসিমও বিএনপি ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের জোটকে এক অশুভ ইঙ্গিত বলে অভিহিত করেন।

মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রভাশালী উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল ছিলেন। তিনি সেই সময় দুই নেত্রীকে গ্রেফতার করার পর বলেছিলেন, আমরা চুনোপুটি নয় রাঘব বোয়ালদের কারাগারে দেব। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। দুঃখ লাগে তিনি এখন কারাগারে। ড. কামাল হোসেনের মেয়ে ও জামাতা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়ায় তারও নিন্দা জানান তিনি ।

ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, বিশ্ব আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবিকতার প্রতীক আর যোগ্য নেতৃত্ব বলছে আর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অপরাধ, লুন্ঠন ও ক্ষমতা অপব্যবহারকারীর নিদর্শন। তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার দাবি জানান।

আলোচনায় আরো অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহম্মুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান, প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক, এমপি আলী আশরাফ, জয়া সেনগুপ্ত, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, জাসদের মঈন উদ্দীন খান বাদল, মনিরুজ্জামান ইসলাম, বিরোধী দলের ফখরুল ইমাম, স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজী, সাবিনা আক্তার তুহিন, ফজিতানুন্নেসা বাপ্পি , খালিদ মাহম্মুদ চৌধুরী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, পীর ফজলুর রহমান, বিএনএফের পেসিডেন্ট এস এম আবুল কালাম আজাদ, নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, এমপি শামীম হায়দায় পাটোয়ারী,জাতীয় পার্টির মো. সেলিম উদ্দীন, এ বি তাজুল ইসলাম, কাজী রোজী, পঙ্কজ দেবনাথ, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, আবদুল মতিন খসরু, আশেক উল্লাহ রফিক প্রমূখ।

-একে

সংসদ,ড. কামাল হোসেন,জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close