• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

মাদক উদ্ধারে গিয়ে ৪ পুলিশ হামলার শিকার

প্রকাশ:  ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:১৩
রাজশাহী প্রতিনিধি

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মাদক উদ্ধারের অভিযানে গিয়ে মাদককারবারিদের দুই দফা হামলায় থানার চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে কনস্টেবল মাহবুবকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কনস্টেবল মাহবুবের মাথা ফেটে গেলে হাসপাতালে ভর্তির পর ১২টি সেলাই দিতে হয়েছে বলে জানা গেছে। মাহবুবের একটি হাতও ভেঙে গেছে।

আহত এসআই আতিকুর রহমানসহ অপর তিন পুলিশকে উপজেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় এসব ঘটনা ঘটে উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের বারীনগর ও ময়নারটেক এলাকাসহ চরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামে।

এদিকে পুলিশের দাবি, শুক্রবার বিকালে গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের বারীনগর গ্রামে মাদক উদ্ধারে গেলে সংঘবদ্ধ মাদককারবারি দলের নেতা তোজাম্মেল মেম্বারের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। গ্রামবাসী চার পুলিশকে চারদিক থেকে ঘেরাও দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। রাতভর অভিযান চালিয়ে দুই নারীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অন্যদিকে এলাকাবাসীর দাবি, মাদক উদ্ধারের নামে পুলিশের চার সদস্যের দলটি সাদা পোশাকে বারীনগর গ্রামের রফিকের বাড়িতে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রফিক পালিয়ে যায়। তবে মাদক না পেলেও পুলিশ রফিকের ভাইকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা প্রতিবাদ করলে গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পদ্মার চরাঞ্চলের বারীনগরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশ দুই নারীসহ মোট ছয়জনকে আটক করেছে। উদ্ধার করেছে ১৯ বোতল ফেনসিডিল। পুলিশের ওপর হামলা ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গোদাগাড়ী থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছে। পুলিশ বলছে আটককৃতরা মাদককারবারি।

এলাকাবাসী সূত্রে আরও জানা গেছে, শুক্রবার বিকালে এসআই আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে গোদাগাড়ী থানা পুলিশের চার সদস্যের একটি দল সাদা পোশাকে পদ্মা নদীর পশ্চিমপাড়ের সীমান্তবর্তী গ্রাম বারীনগরে যায় মাদকবিরোধী অভিযানে। এ সময় একজন সোর্সের সহায়তায় বারীনগর গ্রামের রফিকের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এলাকাবাসীর দাবি রফিকও পুলিশের একজন সোর্স।

পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রফিক পালিয়ে গেলে পুলিশ তার ভাইকে আটক করেন। এ সময় রফিকের ভাইয়ের আট বছরের একটি শিশু তার বাবাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশের পা ধরে কান্নাকাটি শুরু করেন। এ সময় একজন পুলিশ ওই শিশুটিকে লাথি মারে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশের দলটিকে ঘেরাও করেন। তারা পুলিশের কাছে জানতে চান কেন তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উদ্ধার করা মাদক কোথায় সেটিও গ্রামবাসী দেখাতে বলে পুলিশকে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্রামবাসী পুলিশ দলটিকে ঘেরাও করে তাদের কাছে জানতে চাইছিলেন মাদক না পাওয়া গেলে কেন তারা একজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তোজাম্মেল মেম্বারের নেতৃত্বে গ্রামবাসী পুলিশের দলটিকে বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। পুলিশের সঙ্গে কিছু সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে এসআই আতিকসহ তিন পুলিশ, কনস্টেবল মাহবুবকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী কনস্টেবল মাহবুবকে বেধড়ক পিটুনি দিলে তার মাথা ফেটে যায়। ভেঙে যায় একটি হাতও।

ইদানিং গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশের মাদকবিরোদী অভিযানের নামে জিম্মি করে চাঁদাবাজির ব্যাপক অভিযোগ উঠছে। পুলিশের একটি বিশ্বস্থ সূত্র বলছে বর্তমান ওসি আসার পর থানার পুলিশ সদস্যদের চাপে রেখে এসব কাজ করানো হচ্ছে। ওসির বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবে এই থানায়, এসআই আতিক, এসআই আকরাম, এএসআই আক্কাস, এসআই জাহিদ, কনেস্টবল মাহাবুবু, শাহিনসহ কয়েকজন মাদক উদ্ধারের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি করছে। পথে ঘাটে তল্লাসীর নামে হয়রানি করছে।

কারো কাছে কোন মাদকদ্রব্য পাওয়া না গেলেও হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ফাঁকা মাঠে বসিয়ে রেখে নির্দিষ্ট অংকের টাকা দাবি করে পরিবারের লোকজন ও আত্নীয়স্বজনদের ফোন করে টাকা আনতে বলছে। আবার গোদাগাড়ী থানার কয়েকজন চিহিৃত দালাল হিসেবে পরিচিত ও জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে পুলিশ টাকা আদায় করছে। এতে ওইসব দাললরা টাকার ভাগও পাচ্ছে।

টাকা না দিলে মাদক দিয়ে মামলা দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আবার গভীর রাতে চিহিৃত মাদককারবারীদের বাড়ীতে গিয়ে মাদক ফেলে দিয়ে মামলার ভয় ভীতি দেখানো হচ্ছে। বিনিময়ে তারা ৫-১০ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করছে। এসব পরিবারগুলো ভয়ে টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে। এসব অভিযানে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা সারা উপজেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশের এসব কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

প্রায় এক সপ্তাহ আগে উপজেলার রেলগেট বাইপাস মোড়ে সাদা পোশাকে এসআই আতিক ও এএসআই আক্কাশ দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে তল্লাসীর নামে থামানোর সংকেত দেয়। এসময় তারা দাঁড়ালে তল্লাসী করে কোন কিছু না পেলে টানা হেঁচড়া শুরু করে। এসময় তারা জানতে চাই আসলেই তারা পুলিশ নাকি অন্য কিছু যদি পুলিশ হয় তাহলে আইডি কার্ড দেখান। তারা আইডি কার্ড না দেখাতে পেরে ও পুলিশের এমন কর্মকান্ড স্থানীয়রা দেখে ক্ষুদ্ধ হয়ে ভুয়া পুলিশ মনে করে ওই দুই পুলিশকে উত্তম মাধ্যম দেয়। এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। তবে ওই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে আসে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ। ইদানিং সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বসাধারণের মাঝে।

পুলিশ সদস্যদের মারধরের বিষয়টি জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল আলম বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে গোদাগাড়ী থানায়। একটি মাদকের মামলা ও অপরটি পুলিশের ওপর হামলার মামলা। মাদকের মামলায় দুজন ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।।

পুলিশ,হামলা,মাদক উদ্ধার,রাজশাহী

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close