• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সিলেটে দুই ছাত্রলীগ গ্রুপের সশস্ত্র মহড়া, আতঙ্কে স্থানীয়রা

প্রকাশ:  ১৮ মার্চ ২০২৪, ১৪:৩০ | আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৪, ১৫:৩২
নিজস্ব প্রতিবেদক

গেলো শুক্রবার (১৬ মার্চ) দিবাগত রাতে সিলেট নগরে অন্তত ১০-১২টি পয়েন্টে রাতভর ছাত্রলীগকর্মীরা সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে। এ সময় জিন্দাবাজার এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা পয়েন্টে থাকা দু’টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। কয়েকজন কর্মীদের পিটিয়ে আহত করেছে। পরে অপর অংশের নেতারা নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকায় ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপের একটি আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। রাতভর নগরে উত্তেজনা বিরাজ করায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে ভোর পর্যন্ত অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ নগরে টহল দিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সিলেট ছাত্রলীগের কর্মীরা জানিয়েছেন, মেজরটিলা ছাত্রলীগ নেতা রুহিতকে ঘিরেই নগরে এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আর এই উত্তেজনার মহড়ায় এসে শরীক হয় ছাত্রলীগের সব গ্রুপের কর্মীরা। তবে; কে কোন অংশের হয়ে মহড়া দিয়েছে সেটি বলা মুশকিল। কেউ কেউ বলেছেন; রাতে ভুল বোঝাবুঝির কারণে একপক্ষ অপরপক্ষের বিরুদ্ধে মহড়া, শোডাউন দিয়েছে। তারা জানিয়েছেন; ছাত্রলীগের মেজরটিলা গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতা মুজিবুর রহমান রুহিত টিলাগড় থেকে পূর্বদিকের পরিচিত নেতা। সে স্থানীয় কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ভাগ্নে। মেজরটিলায় রুহিতের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি বলয় রয়েছে। তার সঙ্গে নগরের জল্লারপাড়ের পীযূষ গ্রুপের কর্মী রাশেদের বিরোধ ছিল। এই বিরোধের মধ্যে রাশেদ মেজরটিলা গ্রুপের নেতা রুহিতকে গালিগালাজ করে। এবং জিন্দাবাজার এলে দেখিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হওয়া রুহিত নগরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার এলাকায় নিজের আধিপত্য দেখাতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ গ্রুপের নেতা পিয়াংয়ের সহযোগিতা চায়। জেলা ছাত্রলীগের রণজিত বলয়ের নেতারা এ ব্যাপারে রাহেল সিরাজ বলয়ের নেতাদের সহযোগিতা কামনা করেন। এই অবস্থায় শুক্রবার মধ্যরাতে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে জিন্দাবাজারে আসেন পূর্বাঞ্চলের কর্মী রুহিত। জিন্দাবাজারে তাকে সঙ্গ দেন ছাত্রলীগ কর্মী পিয়াং সহ কয়েকজন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা রুহিতকে সঙ্গে নিয়ে জিন্দাবাজার মোড়ে চা খেতে যান। এমন সময় খবর আসে ছাত্রলীগের সুরমা গ্রুপের নেতা হুমায়ুন আহমেদ জনি কয়েকশো নেতাকর্মী নিয়ে জিন্দাবাজার আসছে। এই সময় পীযুষ গ্রুপের কর্মী রাশেদ সুরমা গ্রুপের জনির সহযোগিতা চায়, এবং একই সময় পীযূষ বলয়ের নেতা রাশেদ ও তার লোকজন জল্লারপাড় দিয়ে জিন্দাবাজার আসছিল। এই দু’পক্ষ জিন্দাবাজার পয়েন্টে আসার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে দু’টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। প্রায় ২০ মিনিট দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় রুহিত এবং পিয়াং এর বন্ধুরা এবং তাদের সহযোগীরা জিন্দাবাজারের পাচ ভাই রেস্টুরেন্টের দিকে পালিয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। পরে কোতোয়ালী থানা পুলিশের তিনটি দল এসে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে মোটরসাইকেলে দেয়া আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

সম্পর্কিত খবর

    এদিকে; এ ঘটনার পর তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে নগরে। সুরমা গ্রুপের কর্মীরা নগরের সুরমা মার্কেটের সামনে থেকে মহড়া শুরু করে। ‘হঠাৎ’ হামলা চালিয়ে সুরমা গ্রুপের এক কর্মীকে মারধরের ঘটনায় তারা দলবদ্ধ হয়ে রাত দেড়টার দিকে জিন্দাবাজার আসে। ওই সময় ছাত্রলীগের আরেক বলয়ের নেতারা পূর্ব-জিন্দাবাজারে অবস্থান করছিলেন। সুরমা গ্রুপের কর্মীরা নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকায় গিয়ে হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়। তাদের ধাওয়া করে ওই এলাকা থেকে রাহেল সিরাজের কর্মীদের তাড়িয়ে দেয়। পরে সুরমা গ্রুপের কর্মীরা পুরান মেডিকেল এলাকা এবং দাড়িয়াপাড়ায় তাদের নেতাদের নিয়ে মহড়া দিয়েছে। মীর্জা জাঙ্গাল এলাকায় অবস্থান ছিল পীযূষ গ্রুপের কর্মীদের। আর রাহেল সিরাজের অংশের নেতারা পূর্ব-জিন্দাবাজারে অবস্থান করেন। এ খবর পেয়ে তেলিহাওর গ্রুপের কর্মীরা তাদের জায়গায় অবস্থান নেয়।

    অন্যদিকে; জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল গ্রুপের কর্মীরা নগরের টিলাগড় থেকে নাইওরপুল এলাকা পর্যন্ত মহড়া দিয়েছে। তারা কুমারপাড়া হয়ে শাহী ঈদগাহ্‌ পর্যন্ত মহড়া দেয়। নগরের জিন্দাবাজার, জল্লারপাড় সহ কয়েকটি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- জিন্দাবাজারের ঘটনার পর রাতভর নগরে সশস্ত্র মহড়া হয়েছে। পয়েন্টে পয়েন্টে ছিল ছাত্রলীগ কর্মীদের অবস্থান। আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেল নিয়েও মহড়া দিয়েছে।

    এদিকে- ছাত্রলীগের উত্তেজনার মধ্যে রাতে নগরের পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি পরিদর্শনে বের হয়েছিলেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। জিন্দাবাজার এলাকা এসে তিনি ছাত্রলীগের মহড়া ও উত্তেজনার বিষয়টি দেখেন। এ সময় তিনি বিক্ষুব্ধ কর্মীদের একাংশের নেতাদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে নিজের বাসায় চলে যান। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মঈন উদ্দিন শিপন গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- জিন্দাবাজার এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় মামলা করেননি।

    পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close