• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

অর্ধকোটি টাকা নিয়ে এনজিও উধাও, গ্রাহকদের মাথায় হাত

প্রকাশ:  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩৯
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরে স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও সাউথ প্যাসিফিক বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নামের একটি ভূয়া এনজিও সংস্থা। গ্রাহকদের অভিযোগ, সদর উপজেলার ৩ শতাধিক গ্রাহক থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায় তারা৷ কোনো রশিদ ছাড়াই শুধু একটি ভিজিটিং কার্ড ডকুমেন্টস হিসেবে ধরিয়ে দেয় গ্রাহকদের।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে টাকা ফেরত পেতে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ৮ নং ওয়ার্ডের লামচরী গ্রামে ওই এনজিও কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান গ্রাহকেরা।

গ্রাহকরা জানায়, পৌরসভার লামচরী এলাকায় মাসখানেক আগে ভাড়া বাসা নিয়ে এনজিওর অফিস করেন আব্দুল আসাদ রাসেলসহ কয়েকজন ব্যক্তি। জনৈক ছুট্টির বাড়িতে ভাড়া বাসায় অফিস খুলে সাউথ প্যাসিফিক বিজনেস ডেভলপমেন্ট নামের মাল্টিপারপাস ও এনজিওর কার্যক্রম শুরু করা হয়।

পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র মানুষকে গ্রুপ সদস্য করে সঞ্চয় গ্রহণ করে তারা। গত এক মাসে কথিত এই এনজিও শতাধিক গ্রুপ সদস্যের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা সঞ্চয় গ্রহণ করে। শনিবার থেকে তারা সদস্যদের জনপ্রতি একলাখ টাকা করে ঋণ দেওয়ার কথা জানায়। সদস্যরা শনিবার অফিসে এসে দেখে অফিস তালাবদ্ধ পড়ে আছে। অফিসে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নাই। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আব্দুল আসাদ রাসেলসহ সবার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। দিনভর সদস্যরা অপেক্ষা করে ফিরে যান। রোববার শত শত সদস্যরা অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় অনেক সদস্য সঞ্চিত টাকা হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ গ্রামের রোকেয়া বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, ঘরে বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে। স্বামী ১০ বছর ধরে অসুস্থ। ঘর না থাকায় মেয়ে বিয়ে দিতে পারছি না। ঘর করার জন্য তিন লাখ টাকা ঋণ দিবে বলে আমার থেকে ২৩ হাজার টাকা সঞ্চয় নেয়। ধার দেনা করে আমি এই টাকা দিয়েছি। এখন আমি কী করবো। আমার আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল্যাহ জানান, তাদের ১২ জনের গ্রুপ থেকে ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়েছে। কথা ছিল রোববার তাদের ১২ লখ টাকা ঋণ দিবে। এখন তারা পালিয়ে গেছে। তিনি এখন কী করবেন বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার লাহারকান্দি গ্রামের রজ্জব আলী, মো. ফারুক, মো. মিজান ও সদর উপজেলার টুমচর গ্রামের মো. রাজুসহ অনেকেই তাদের সঞ্চিত টাকা হারিয়ে এখন নিঃস্ব প্রায়। তারা তাদের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন।

ওই অফিসের ঝাড়ুদার লামচরী গ্রামের সুমী জানান, তাকে ছয় হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়ে সদস্য করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে সাত হাজার টাকা মাসিক বেতনে অফিসে ঝাড়ুদারের চাকুরি দেওয়া হয়। এখন তার সঞ্চিত টাকা ও বেতন কোনোটাই নেই।

এ ব্যাপারে বাড়ির মালিক ছুট্টোর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ রয়েছে।

তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরে তালা দিয়ে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে চলে গেছে। কোথায় গেছে তা প্রতিবেশীরা জানাতে পারেনি।

শহর পুলিশ ফাঁড়ি থানার এসআই অখিল পোদ্দার বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। গ্রাহকদের অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা নিবো।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফ উদ্দিন আনোয়ার জানান, গ্রাহকদের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখতেছি। অফিসটি তালাবদ্ধ থাকায় আমরা অফিসটির ভিতরে ঢুকতে পারিনি।

অপরাধ,এনজিও,লক্ষীপুর

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close