• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

রাণীনগরে মুদ্রাক্ষরিক রেজাউলের অনিয়ম আর ঘুষ বাণিজ্যে নাকাল সেবাগ্রহিতারা

প্রকাশ:  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৫৪
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের মুদ্রাক্ষরিকের ঘুষবাণিজ্য, অনিয়ম ও হয়রানীতে নাকাল সেবাগ্রহিতারা। অফিস সহকারী কাম-মুদ্রাক্ষরিক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগী সেবাগ্রহিতারা।

উপজেলার রাতোয়াল গ্রামের দক্ষিণপাড়ার মৃত-ওসমান সরদারের ছেলে নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন আমি পার্শ্ববর্তী ভাটকৈ মৌজায় একটি জমি ক্রয় করে খাজনা ও খারিজ সম্পন্ন করার পর মালিক আমাকে জমি বুঝে দেয়। আমি নিয়মিত জমিতে ফসল চাষ করে আসছি। এমতাবস্থায় সম্প্রতি জমির মালিকের কথিত ওয়ারিশগণ এসে জমি দখল করে। এই বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করলে সেই অভিযোগপত্রটি আসে রেজাউলের কাছে। রেজাউল তখন নানা বাহানা দেখিয়ে বিষয়টি সম্পন্ন করার খরচ হিসেবে ৩ হাজার টাকা নেয়। এরপর কয়েক মাস পার হলেও রেজাউল অভিযোগটির বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। এর এক পর্যায়ে জানতে পারি যে রেজাউল আমার প্রতিপক্ষের সঙ্গে আঁতাত করে মোটা অংকের অর্থ ঘুষ নিয়ে তাদের উস্কানি দিলে তারা আবার আমার জমি দখল করে আমার লাগানো জমির ধান জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যায়। বিষয়টি আবার রেজাউলকে জানালে তিনি আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু ইউএনও স্যারকে বিষয়টি জানাবেন বলে ঘুরাতে থাকেন। রেজাউলের এমন ঘুষ বাণিজ্যের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে পরে আমি কোর্টে মামলা দায়ের করি।

আরেক ভুক্তভোগী সদর উপজেলার চকউজির গ্রামের মৃত-মজিবর রহমানের ছেলে কাঠমিস্ত্রি মিজানুর রহমানের করা অভিযোগ থেকে জানা যায় যে, তিনি উপজেলার খট্টেশ্বর রাণীনগরের সাইদুর রহমানের ছেলে স¤্রাট রহমানের বিরুদ্ধে “নামখারিজকৃত সম্পত্তির অবৈধভাবে ভোগদখলের প্রতিকার” চেয়ে গত ২০২৩ সালে আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানী করে তৎকালীন ইউএনও শাহাদাত হুসেইন ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের ৩১ তারিখে বাদীর পক্ষে রায় প্রদান করেন। সেই রায়ের কপি সংগ্রহ করার জন্য রেজাউল করিমের কাছে দিনের পর দিন ধর্না দিয়েও পাত্তা না পাওয়ার কারণে বাদী অনেক কষ্টের পর রায়ের কপি সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে ইউএনও শাহাদাত হুসেইন বদলী হয়ে চলে যান। পরবর্তিতে রেজাউল করিম বিবাদী পক্ষ স¤্রাটের সঙ্গে আঁতাত করে সেই রায়ের কপি যাতে বাদীপক্ষ না পায় সেজন্যে তিনি নানা অপকৌশল চালানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানার পর বাদী আবার নতুন করে স¤্রাট সরদার ও মুদ্রাক্ষরিক রেজাউল করিমসহ চারজনের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর অভিযোগ প্রদান করেন। অভিযোগের নোটিশে রেজাউল করিম নিজেকে বিবাদীর তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখে একটি নোটিশ করেন। আবেদনের বিষয়টি নোটিশে না দিয়ে তিনি বাদীকে ফাঁসানোর জন্যে বিবাদীর সঙ্গে আঁতাত করে নিজের মনগড়া অন্য বিষয়যুক্ত করে নোটিশ প্রদান করেন।

মিজানুর রহমান আরো জানান যে তিনি গরীব মানুষ। রেজাউলের চাহিদা মতো ঘুষ দিতে পারেননি বলেই এমন হয়রানীতে তিনি নাকাল হয়ে পড়েছেন। রেজাউলের মতো দুর্নীতিবাজ মানুষের জন্য আজ মাসের পর মাস সঠিক সমাধান না পেয়ে পথে পথে ঘুরছেন মিজানুর রহমান। তিনি সরকারের কাছে সঠিক বিচার দাবী করছেন।

উপজেলার আতাইকুলা গ্রামের মৃত-ইমাম বক্স প্রামাণিকের ছেলে কনৌজ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন বলেন আমারসহ আরো কয়েকজন কৃষকের কনৌজ মাঠে থাকা প্রায় ১০বিঘা ফসলী জমি সমতল করার প্রয়োজন। অনেক নাটকীয়তার পর জেলা প্রশাসক স্যার বরাবর গত জানুয়ারী মাসে আবেদন করলে ডিসি স্যার সেই আবেদনের যৌক্তিকতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে। ইউএনও স্যার বিষয়টি তদন্ত করার উপজেলা কৃষি অফিস ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভ’মি অফিসের তহশিলদারকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা প্রদান করেন। এরপর স্ব স্ব তদন্তারী কর্মকর্তারা ফেব্রুয়ারী মাসের ৮তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এরপর থেকে রেজাউল করিম সেই প্রতিবেদনটি ইউএনও স্যারের কাছে পৌছাতে তাল বাহানা শুরু করেন। দিনের পর দিন রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নানা বাহানা দেখিয়ে দিন পার করছেন। এদিকে জমির মাটি সমান করে চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধান চাষের সময় চলে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে আমরা যদি ওই জমিতে ধান রোপন করতে না পারি তাহলে আমরা কৃষকরা চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবো। এই বিষয়টি রেজাউল করিমকে বোঝানো যাচ্ছে। গত ১৫ফেব্রুয়ারী শেষ বারের মতো বিষয়টি রেজাউল করিমের সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন তদন্ত করার সময় যে যে কাগজপত্রাদি কর্মকর্তাদের দেখানো হয়েছে সেই কাগজপত্রাদি নিয়ে আগামী রবিবার (১৮ফেব্রুয়ারী) দেখা করতে বলেন।

অপরদিকে বর্তমানে সকল মানুষই ইরি-বোরো ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এমন সময় দিনের পর দিন ওই কৃষকরা কিভাবে উপজেলায় এসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকবে সেই বিষয়টি রেজাউল করিমকে বোঝানোই যাচ্ছে না। আমরা কৃষকরা রেজাউল করিমের কাছে একেবারেই জিম্মি হয়ে পড়েছি। জানি না উপজেলায় সেবা নিতে এসে আমাদের মতো আরো কত মানুষ রেজাউল করিমের কাছে এসে প্রতারিত ও হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। এমন কর্মচারীর জন্যই আজ সরকারী দপ্তরগুলোর কাজ ও সেবার মান নিয়ে সাধারণ মানুষদের মাঝে নেতিবাচক ধারণার জন্ম নিয়েছে।

এই বিষয়ে রেজাউল করিম মুঠোফোনে বলেন আমার বিরুদ্ধে আনিত এই অভিযোগগুলো সম্পন্ন মিথ্যে। বরং আমি ওই সেবাগ্রহিতাদের সার্বিক সহযোগিতা করার চেস্টা করেছি। বর্তমান ইউএনও স্যার জমি সংক্রান্ত কোন অভিযোগ নিতে চান না। তাই তারাসহ অন্যদের আদালতের আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করে আসছি।

এই বিষয়ে বক্তব্য নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম মুঠোফোনে বলেন একাধিকবার ফোন দিলে ফোন রিসিভ না হওয়ার কারণে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

ঘুষ বাণিজ্য,অপরাধ,রানীনগর

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close