• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মিয়ানমারে মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে সীমান্তের ঘরবাড়ি

প্রকাশ:  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:২৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদ সীমান্তে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়েছে। ওই সংঘর্ষে মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দে বাংলাদেশের সীমান্তের বাড়িঘর কেঁপে উঠেছে। এতে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা, সাবরাং ও সেন্টমার্টিন সীমান্তে ভারী মর্টার শেলের শব্দ শুনতে পেয়েছেন স্থানীয়রা।

টেকনাফ পৌরসভার নাফ নদের কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, “শুক্রবার ভোর থেকে থেমে থেমে মিয়ানমার সীমান্তে বড় ধরনের গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। শব্দে আতঙ্কে অনেকের ঘুম ভেঙেছে। গতকাল আমারও ভেঙেছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বশিপাড়া (বকশিপাড়া) গোলার বিকট শব্দ হচ্ছে। যার কারণে আমাদের ঘরবাড়ি কাঁপছে। অনেক সময় মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে।”

টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, “সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলির খবর পেয়েছি। ফলে আমরা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ-সেন্টমার্টিনসহ সীমান্তে টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি নজরদারি বাড়িয়েছি।”

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার স্থানীয়দের মাধ্যমে শাহপরীর দ্বীপের ওপারে মিয়ানমারের মংডুতে হেলিকপ্টার ওড়ার খবর পেয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “সীমান্তের ওপারের গ্রামগুলোতে দেশটির জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। দুপক্ষই ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করছে। এতে সীমান্তে থাকা বাড়িঘর কেঁপে উঠছে। তবে সীমান্তে আমাদের বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে।”

সীমান্তে নজর রাখেন এমন এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “টেকনাফ সীমান্তের ওপারে জান্তা সরকার এবং আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাড়ছে। এতে সীমান্তের লোকজনের মধ্যে ভয় কাজ করছে। সকালে মর্টার শেলের ভারী শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে। মনে হচ্ছে আমাদের অফিসের ছাদের ওপর পড়েছে। কারণ ওপারের বিকট শব্দে এপারে ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠছে।”

শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, “ভোর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষে গোলাগুলির বিকট শব্দ পাচ্ছি। দ্বীপের সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। এর আগে কখনও সীমান্তে এভাবে গোলার শব্দ শোনা যায়নি। ওপারের গোলার আঘাতে এপারের ঘরবাড়ি কাঁপছে। এখন পর্যন্ত নতুন কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেনি তবে নতুনভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা বেশি।”

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “ওপারে গোলার শব্দ আমার বাড়ি পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্তে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এটা সত্য, সীমান্তের মানুষের মাঝে ভয় কাজ করছে। তবে আমরা সীমান্তের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি।”

চলমান সংঘাতের মধ্যে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৩৩০ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য বৃহস্পতিবার তাদের দেশে ফিরেছে।

গত ৪-৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে ৩৩০ জন মিয়ানমারের নাগরিক পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। দুই দেশের মধ্যে আলোচনার পর তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।

বাহিনীগুলো হল- তা’’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ।

এরই মধ্যে এই জোট মিয়ানমারের বহু অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

মিয়ানমার,যুদ্ধ,টেকনাফ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close