• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

রংপুরে নিজেদের দুর্গে কেন ‘শোচনীয় অবস্থা’ জাতীয় পার্টির

প্রকাশ:  ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:০৬
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

জাতীয় পার্টির (জাপা) দুর্গ বলে পরিচিত রংপুরে এবার শোচনীয় অবস্থা দলটির। দিন যত যাচ্ছে, দলটি যেন এখানে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। এবারের দ্বাদশ নির্বাচনে দুটি আসন সমঝোতা হলেও সেই দুটির একটিতে হেরেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরই শুধু রংপুর অঞ্চল থেকে জয়ী হয়েছেন।

জাতীয় পার্টির এই অবস্থা প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে জাতীয় পার্টির কোনো কর্মকাণ্ড নেই। শুধু মুখে প্রচারণা। আবেগতাড়িত হয়ে চলেছেন নেতা-কর্মীরা। মানুষের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততা ছিল না। রংপুর-৩ আসনে দলের চেয়ারম্যান নির্বাচন করলেও আশপাশের আসনগুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে দলের নেতাদের কর্মকাণ্ড ছিল না। মাঠপর্যায়ে কোনো ভূমিকা ছিল না। বড় কথা হলো, আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভরতা তারা কাটিয়ে উঠতে পারছিল না। এসব নানা কারণে দলটির অবস্থা একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ে, যা নির্বাচনে স্পষ্ট হলো।

রংপুরের ৬টি আসনে নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একমাত্র দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের তাঁর আসনে ৫৮ হাজার ৫৩৫ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। আসন সমঝোতায় তাঁর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু অন্য আসনগুলোয় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করলেও জি এম কাদেরের আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীও ছিলেন না। সেই সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিলেন না। এখানে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিজড়া আনোয়ারা ইসলাম রানী। তিনি ভোট পেয়েছেন ২৩ হাজার ৩২৬। জি এম কাদের ভোট পেয়েছেন ৮১ হাজার ৮৬১টি।

সাধারণ ভোটারদের ভাষ্য, অন্যান্য আসনের মতো জি এম কাদেরের আসনে যদি কোনো শক্ত স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতেন, তাহলে এই আসন নিয়েও হয়তো কিছু ঘটে যেতে পারত। এবারের নির্বাচন প্রতীকের নির্বাচন হয়নি, হয়েছে ব্যক্তির। এলাকায় যাঁর অবস্থান ভালো এবং মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও গণসংযোগ আছে, তাঁরাই ভালো করেছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের এলাকার মানুষের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই, এলাকায় তেমন দলীয় কর্মকাণ্ডও নেই।

জাতীয় পার্টি রংপুর অঞ্চলে দুর্বল হয়ে পড়েছে, এ কথা মানতে নারাজ দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি আজ সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘রংপুরে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে, প্রভাব কমে গেছে, জনসমর্থন কমে গেছে—এসব কথা রটনা করা হয়। সরকার-সমর্থকদের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়, জাতীয় পার্টি শেষ। আসলে জাতীয় পার্টি আছে, থাকবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির শীর্ষ এক নেতা বলেন, এলাকায় জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক নেই জাতীয় পার্টির নেতাদের। মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে এলাকার জনগণের সঙ্গে কুশল বিনিময় নেই, এমন নেতা নির্বাচনে দলের প্রার্থী হয়েছেন। ফলে জনগণ সেই আগের মতো তাঁদের বুকে টেনে নেননি।

এই নেতা উদাহরণ হিসেবে বলেন, জি এম কাদেরের ভাতিজা রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার ২০০৮ সালে নির্বাচিত হন। তাঁর মেয়াদকাল পার হওয়ার পর তিনি ওই এলাকায় যাননি। এবার তিনি নির্বাচন করে ভোট পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৯২টি। ভোটের দিক থেকে তাঁর অবস্থান তৃতীয়। এখানে বিজয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া আসাদুজ্জামান ভোট পেয়েছেন ৭৩ হাজার ৯২৭। এমন ভোটই প্রমাণ করছে, আবেগ ও লাঙ্গলপ্রীতি দিয়ে দল আর চলবে না। জাতীয় পার্টিকে নতুন করে ভাবতে হবে।

একই অবস্থা রংপুরের অন্য আসনগুলোতেও। রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে প্রার্থী ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আনিছুল ইসলাম মণ্ডল। তিনি তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও ভোটের সংখ্যা অনেক কম। বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের ব্যবধান অনেক। এখানে জাপার প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ১৫ হাজার ৬২৩। আওয়ামী লীগের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ৬৪ হাজার ৩৩৭ ভোট।

রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা সেলিম আওয়ামী লীগ প্রার্থী টিপু মুনশির কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ভোট ৪১ হাজার ৬২২ আর আওয়ামী লীগের টিপু মুনশি ১ লাখ ২১ হাজার ৮৯৩ ভোট পেয়েছেন।

রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধান জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকারের। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ১০ হাজার ৩৩৪টি আর বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৭০৯ ভোট।

রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর আলম মিয়া। তিনি ভোট পেয়েছেন ৯ হাজার ২৬ ভোট। বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিরীন শারমিন চৌধুরী পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৬৩৫ ভোট।

রাজনীতি,নির্বাচন,রংপুর,রংপুর বিভাগ,জাতীয় পার্টি

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close