• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পা পড়েনি কোনো প্রার্থীর

প্রকাশ:  ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:৪৫
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরে ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের লোকসংখ্যা ১১ হাজার ৩০০। ভোটারসংখ্যা ৩ হাজার ৭০২। ভোট গ্রহণের সময় ঘনিয়ে এলেও কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সাতজন প্রার্থীর কারও পা পড়েনি। তাতে ক্ষুব্ধ এলাকার ভোটাররা। ভোট নিয়ে আগ্রহ নেই কারও।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন প্রার্থী। তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর (ঈগল), জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরী (মিনার) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব)। এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে নৌকার সঙ্গে ঈগলের। দুই প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা নিয়ে উখিয়া ও টেকনাফ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত। ভোটকেন্দ্রে না যেতে সেন্ট মার্টিনেও ঘরে ঘরে গিয়ে নারী-পুরুষ ভোটারদের নিষেধ করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিলি করছেন প্রচারপত্র। দ্বীপের অর্ধেকের বেশি ভোটার বিএনপি সমর্থক। এ আসনে ভোটারসংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭১। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৪১।

নির্বাচন উপলক্ষে ৬ থেকে ৮ জানুয়ারি টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছে জেলা প্রশাসন। গত বুধবার দুপুরে সেন্ট মার্টিন বাজারের একটি দোকানের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলেন দ্বীপের কয়েকজন ভোটার। আলোচনায় সাগরে মৎস্য শিকার নিয়ে কথা হচ্ছিল। আড্ডায় উত্তর পাড়ার জেলে রহিম উল্লাহ (৪৮) বলেন, নির্বাচনে কারা প্রার্থী হয়েছেন, তা তিনি জানেন না। তবে দ্বীপের বাজারে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের পোস্টার দেখেন তিনি।

কাকে ভোট দেবেন, এই সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়নি জানিয়ে আড্ডার আরেক জেলে সলিম উল্লাহ (৫০) বলেন, ‘ভোট তো আগেও দিয়েছিলাম। গরিব মানুষের লাভ হয়নি। সাগরে দুই মাস ধরে মাছ ধরা পড়ছে না। দ্বীপেও কাজকর্ম নেই। অধিকাংশ মানুষের পেটে ভাত জুটছে না। এখন ভোট নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই।’

গত পাঁচ বছরে সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারকে দ্বীপের মানুষ চোখে দেখেননি জানিয়ে মাঝরপাড়ার কৃষক আবদুল নবী বলেন, সেন্ট মার্টিনের ৯০ শতাংশ মানুষ পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। চাল, তেল, মাছ, মাংস, মুরগি, তরিতরকারি-সবজির দাম অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেক বেশি। দ্বীপের কোথাও পোলট্রি ফার্ম নেই। চাষাবাদের জমিও কমে গেছে। আয়–রোজগারের বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতারা গরিবের খোঁজ নেন না। নির্বাচন এলেই কদর বাড়ে ভোটারের।

বাজারের ব্যবসায়ী ও সেন্ট মার্টিন ট্রাভেলসের পরিচালক মৌলভি নুর মোহাম্মদ (৫০) বলেন, ডিসেম্বর মাসে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার পর্যটক দ্বীপ ভ্রমণে আসেন। তখন দ্বীপের কিছু মানুষের আয়–রোজগার হয়, দোকানপাটে বেচাবিক্রিও ভালো হয়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন উপলক্ষে পর্যটকের আগমন কমে গেছে। গত বুধবার তিনটি জাহাজে এসেছেন প্রায় ৫০০ জন, গতকাল বৃহস্পতিবার ৩০০ জনের মতো এসেছেন। আগামীকাল ৬ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিন জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে। তখন পুরো দ্বীপ পর্যটকশূন্য হয়ে পড়বে। মানুষের অভাব–অনটন আরও বাড়বে। নির্বাচন নিয়ে মানুষের তেমন আগ্রহ নেই।

পশ্চিম পাড়ার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন (৪৮) বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের জন্য ভোট চাইছেন। তারপরও দ্বীপের অর্ধেকের বেশি ভোটার কেন্দ্রে যান কি না সন্দেহ আছে। সেন্ট মার্টিন বাজারে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের পৃথক নির্বাচনী কার্যালয় রয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চেয়ার-টেবিল খালি পড়ে থাকে।

নৌকা প্রতীকের পক্ষে দ্বীপে প্রচারণা চালাচ্ছেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলমের নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মীসহ ইউনিয়ন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঈগল প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৯ জন ইউপি সদস্য ও সাবেক ইউপি সদস্যরা নৌকা ও ঈগল প্রতীকের পক্ষে দ্বিধাবিভক্ত।

ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, নৌকার সঙ্গে ঈগলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও এগিয়ে থাকবেন শাহীন আক্তার। কারণ, তাঁর স্বামী ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির জনপ্রিয়তা বেশি এই দ্বীপে। প্রচারণার শুরুর দিকে বদি একবার দ্বীপে এসেছিলেন।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম বলেন, প্রহসনের এই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক কোনো ভোটার কেন্দ্রে যাবেন না। ইতিমধ্যে ভোটারদের ঘরে ঘরে প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে।

কক্সবাজার-৪,সেন্ট মার্টিন,কক্সবাজার,নির্বাচনী প্রচারণা,দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন,টেকনাফ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close