• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ভুয়া নিবন্ধন সনদে চাকরির অভিযোগ, অভিজ্ঞতা ছাড়াই পদোন্নতি

প্রকাশ:  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৫৯
মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের মনিরামপুরে উত্তম কুমার পালিত নামে এক ব্যক্তি ভুয়া নিবন্ধন সনদ জমা দিয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিয়েছেন। সম্প্রতি নতুন অন্য একটি নিবন্ধন সনদ জমা দিয়ে তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে নতুন নিবন্ধনে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির ১০ বছরের অভিজ্ঞতা পূর্ণ না হতে মোটা অংকের টাকায় মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরকে ম্যানেজ করে ৩ মাস ১৪ দিন বাকি থাকতে তিনি সহকারী প্রধান পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

এ নিয়ে জাকির হোসেন বাবু নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তর খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তর খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে পৃথক তদন্তের জন্য চিঠি দিয়েছেন। দুই কর্মকর্তার কেউ এখনো ঘটনা তদন্তে সরেজমিন আসেননি। উত্তম পালিতের বাড়ি উপজেলার খানপুর গ্রামে। গত ১ লা আগষ্ট তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে উপজেলার পৌরসভা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। এরআগে তিনি উপজেলার পাঁচবাড়িয়া পাঁচকাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

গেল মাসেই তাঁর নিয়োগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জমা পড়েছে। ২-৩ দিন আগে এই প্রতিবেদকের কাছে উত্তম পালিতের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য পৌঁছেছে।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ জুলাই পৌরসভা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ছয় প্রার্থীর মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষায় তিন জন অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে উত্তম পালিতকে নিয়োগ বোর্ড চুড়ান্ত মনোনীত করেন।

উত্তম পালিত ২০১১ সালের ১৮ জুন পাঁচবাড়িয়া পাঁচকাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর পহেলা ডিসেম্বর তিনি এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) হন। তাঁর এমপিও শীটে বিষয় হিসেবে প্রাণিবিদ্যার কথা উল্লেখ আছে।

গত ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত পৌরসভা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তম পালিত যে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন সেখানে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ৩২০০৭৮২৯ রোল নম্বরের সনদ জমা দেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে সহকারী প্রধান হিসেবে নিয়োগে উত্তম পালিতের জমা দেওয়া নিবন্ধন সনদটি ২০১৩ সালের। ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর প্রকাশিত নবম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফলে তাঁর বিষয় রসায়ন উল্লেখ আছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, উত্তম পালিত জাল নিবন্ধন সনদ দিয়ে পাঁচবাড়িয়া পাঁচকাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে যোগ দেন। সম্প্রতি শিক্ষকদের নিবন্ধন সনদ যাচাইবাছাই কাজ শুরু করেছে শিক্ষা অধিদপ্তর। উত্তম পালিতের নিবন্ধন ভুয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার সব কিছু জেনেও মোটা অংকের টাকায় নিয়োগ বোর্ড গঠন করে উত্তম পালিতকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়ে এই সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য থাকায় বর্তমানে উত্তম পালিত পৌরসভা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিযোগকারী জাকির হোসেন বাবু বলেন, উত্তম পালিত নতুন কর্মস্থলে জমা দিয়েছেন ২০১৩ সালের নিবন্ধন সনদ। তাহলে ২০১১ সালে কিভাবে তিনি শিক্ষক হিসেবে পাঁচবাড়িয়া পাঁচকাটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেলেন। আর কিভাবে ২০১২ সালে এমপিওভুক্ত হলেন। সম্প্রতি ভুয়া নিবন্ধন সনদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। ধরা পড়ার ভয়ে এখন তিনি পুরনো কর্মস্থল ছেড়েছেন।

জাকির হোসেন বাবু বলেন, গত ৬ আগষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশন, বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ আটটি দপ্তরে উত্তম পালিতের অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগপত্রে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ সরকারের বিরুদ্ধে আড়াই লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছি। অভিযোগ পেয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ঘটনা তদন্তে অভিযুক্ত সেই বিকাশ সরকারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। পরে আমি তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করেছি।

জাকির হোসেন বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তর খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালককে দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তিনিও ঘটনা তদন্তে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে উত্তম পালিতের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখে ফোন রেখে দেন। পরে সরাসরি তাঁর নতুন কর্মস্থল পৌরসভা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে দেখা করতে গেলে তিনি এ প্রতিবেদকের কথা বলতে রাজি হননি।

পৌরসভা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী জলি আক্তার। তিনি বলেন, দলীয় ছেলে হিসেবে উত্তমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার কাগজপত্র সব ঠিক আছে।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, এমপিওর তারিখ দেখে ১০ বছর চাকরির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় উত্তম কুমারকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, গেল বুধবার তদন্তে যাওয়ার কথা ছিল। সভাপতি ঢাকায় থাকায় তদন্ত হয়নি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, পৌরসভা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুরুত্বের সাথে দেখা হবে।

অপরাধ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close