• শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১
  • ||

গ্রিড বিপর্যয়ের পর লোডশেডিং বেড়ে দিগুণ, দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশ:  ০৭ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৫২
অনলাইন ডেস্ক

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। শুক্রবার সকাল ১১টা, বেলা ১টা ও বিকেল ৪টায় তিনদফা লোডশেডিং হয়। প্রতিবারই বিদ্যুৎ ছিল না ঘণ্টা বা তার বেশি সময়।

গত তিনদিন ধরে এমন লোডশেডিং হচ্ছে জানিয়ে দক্ষিণ সুরমার কুশিঘাট এলাকার বাসিন্দা আজমল হোসেন বলেন, ‘মাসখানেক ধরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। লোডশেডিং অনেকটা কমেছিল। তবে গত দিনদিন ধরে তা আবার বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা হচ্ছে লোডশেডিং।’

সম্পর্কিত খবর

    লোডশেডিং বাড়ার কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারাও। তাদের দাবি, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর থেকেই লোডশেডিং বেড়েছে। বিপর্যয়ের পর এখনও সবগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু না হওয়া এবং গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

    এতে করে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে জানিয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে লোডশেডিং প্রায় দিগুণ বেড়েছে। তবে দুই তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

    গত মঙ্গলবার বিদ্যুতের পূর্বাঞ্চল জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। এতে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ পাঁচটি বিভাগ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। প্রায় ৬ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ ফিরলেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি।

    গ্রিড বিপর্যয়ের পর এর সঙ্গে সংযুক্ত সব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ধাপে ধাপে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তবে কয়েকটি এখনও চালু করা যায়নি। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেটের কুমারগাওয়ের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা যায়নি।

    বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে সরকার গত জুলাই থেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সময়সূচি নির্ধারণ করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯ জুলাই থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করা হয়। দিনে এক-দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও তা মানা হয়নি তখন। সিলেটের অনেক জায়গায় দিনে ১২-১৩ ঘণ্টাও লোডশেডিং হতো সেসময়।

    তবে অক্টোবর থেকে অনেকটাই উন্নতি হতে থাকে এ পরিস্থিতির। কমে আসছে লোডশেডিং। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর তা আবারও ফিরে এসেছে।

    বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জোনের ৮টি গ্রিডে শুক্রবার দুপুরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪২০ মেগাওয়াট। তবে সরবরাহ ছিল ২৬০ মেগাওয়াট। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ছিল পল্লী বিদ্যুতে। শুক্রবার পল্লী বিদ্যুতের সিলেট অঞ্চলে ২৩৮ মেগাওয়াট চাহিদার বদলে সরবরাহ ছিল ১৩৮ মেগাওয়াট।

    পল্লী বিদ্যুতে ঘাটতি বেশি থাকায় শহরের চাইতে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং হচ্ছে বেশি।

    সিলেটের জকিগঞ্জের আটগ্রাম এলাকার বাসিন্দা কল্লোল দাস বলেন, ‘বুধবার থেকে দিনে ৯-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। কিছুক্ষণ পরপর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। রাতে লোডশেডিং হচ্ছে বেশি।’

    বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির শুক্রবার বলেন, ‘গ্রিড লাইনে বিপর্যয়ের পর থেকে বিদ্যুতের ঘাটতি বেড়েছে। আগে যেখানে দিনে ঘাটতি ছিল ২০ শতাংশ এখন তা ৪৫ শতাংশের মতো হয়ে গেছে।’

    তিনি বলেন, ‘ঘাটতির কারণ সম্পর্কে আমাদের নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। তবে যতদূর জানতে পেরেছি, গ্রিড বিপর্যয়ে বন্ধ হওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবগুলো এখনও চালু হতে পারেনি। সিলেটের কুমারগাওয়ের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রও এখনও বন্ধ আছে। এ ছাড়া গ্যাসের চাপও অনেক কমে গেছে। এসব কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যেতে পারে।’

    ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে কাদির বলেন, ‘দুই একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’

    কুমারগাওয়া ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গ্রিড বিপর্যয়ের পর আমার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এতে এখানে কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফলে এখনও এটি চালু করা যায়নি। তবে আশা করছি শনিবারের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে।’

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close