• রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

নওগাঁয় হিজাব পরায় ২০ শিক্ষার্থীকে পেটালেন শিক্ষক আমোদিনি পাল

প্রকাশ:  ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৫০ | আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৪:১৪
নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর মহাদেবপুরের দাউল বারবারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হিজাব পরে স্কুলে আসার অপরাধে ২০ ছাত্রীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমোদিনি পাল।

বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পিটুনি খেয়ে ছাত্রীরা স্কুল ছেড়ে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তারা অভিভাবকদের জানালে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় অভিভাবকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর জের ধরে শতাধিক অভিভাবক বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই স্কুলে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। এ সময় অভিযুক্ত শিক্ষককে না পেয়ে তারা স্কুলের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের দুটি ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নির্যাতনের শিকার ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আফরিন অভিযোগ করে বলেন, বুধবার দুপুরে জাতীয় সঙ্গীতের পর লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমোদিনি পাল কেন হিজাব পরে স্কুলে এসেছি, এ কথা জিজ্ঞাসা করে ইউক্যালিপ্টাস গাছের ডাল দিয়ে তাদেরকে প্রহার করেন। শিক্ষক তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, ‘স্কুলে কোনো পর্দা চলবে না। ঢং করে আসছো। বাসায় গিয়ে বোরখা পরে থাকো। যখন তোমরা মহাদেবপুর বাজারে যাবে, তখন পর্দা করবে। স্কুলে আসলে মাথার কাপড় ফেলে আসবে।’ তিনি ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার জন্য টানাটানি করেন। এমনকি যারা হিজাব ছাড়া শুধু মাস্ক পরে এসেছিল তাদের মাস্কও খুলে দেন। তিনি হুমকি দেন যে, ‘কাল থেকে যদি হিজাব ও মাস্ক পরে আসো তাহলে পিটিয়ে তোমাদের পিঠের চামড়া তুলে নেওয়া হবে।’

শিক্ষার্থী সাদিয়া আরও জানান, লাইনের কয়েকজন ছাত্রীকে মারতে মারতে তার কাছে এসে তাকে মারতে থাকলে লাঠি ভেঙে যায়। অন্যদের মধ্যে দশম শ্রেণির ছাত্রী ঐশি, সুমাইয়া, তিথি, লাকি, নবম শ্রেণির মোনাসহ কমপক্ষে ২০ জন ছাত্রীকে পেটানো হয়।

সাদিয়ার মা সাবেরা বেগম বলেন, তার মেয়ে স্কুল থেকে এসে কান্নাকাটি করে হিজাব পরার জন্য ম্যাডাম মেরেছে বলে জানায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা বড় হয়েছে। তারা তো পর্দা করবেই। স্কুলে গিয়েই ভদ্রতা শিখবে। তা না শিখিয়ে যদি এরকম মারপিট করে তাহলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়?’ তিনি তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযুক্ত শিক্ষকের অপসারণ দাবি করেন।

দশম শ্রেণির আরেক ছাত্রী উম্মে সুমাইয়া আকতারের মা মরিয়ম নেছাও জানালেন একই কথা। তার মেয়ে সুমাইয়া ও তার ক্লাসমেট। তিথি জাতীয় সঙ্গীতের পর স্কুলে গেলে তারা কেন হিজাব পরে স্কুলে গেছে সেই অপরাধে শিক্ষক আমোদিনি পাল তাদেরকে পেটানোর জন্য শিক্ষক বদিউল আলমকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে বাদিউল মাস্টার সুমাইয়া ও তিথিকে লাঠি দিয়ে পেটায়। এই ঘটনার পর তার মেয়ে ক্লাস না করে বাড়ি এসে কাঁদতে থাকে।

অভিভাবকেরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা স্কুল ঘেরাও করেন। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক এ দিন স্কুলে আসেননি। একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে ছাত্রীদের হেনস্থা করার বিষয় প্রমাণ হলেও তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা অবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

অভিযুক্ত শিক্ষক আমোদিনি পালের মুঠোফোনে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পাবার পর তিনি ফোন কেটে দেন। পরে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অভিযুক্ত অপর শিক্ষক বদিউল আলম জানান, হিজাব না পরায় ছাত্রীদেরকে শিক্ষক আমোদিনি পাল মারধর করেছেন। তিনি নিজে কাউকে মারেননি বলেও দাবি করেন।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্ম্মণ বলেন, স্কুলে হিজাব পরে আসায় শিক্ষক আমোদিনি পাল ৫/৬ জন ছাত্রীকে মারধর করেছেন। ঘটনার দিন তিনি স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে এসে বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এ বিষয়ে তাকে শোকজ করা হবে বলেও জানান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান হিজাব না পরায় স্কুলছাত্রীদের অন্যায় ভাবে বেধড়ক পেটানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আগে তাকে শোকজ করি। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পূর্বপশ্চিম/এআর/এনএন

নওগাঁ,হিজাব

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close