• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আমেরিকার ভিসা কাহিনী, ও আমার আমেরিকা রে

প্রকাশ:  ২৬ আগস্ট ২০২২, ১৭:৩৪
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

তানবীর সিদ্দিকী

ও আমার আমেরিকা রে ..... আমেরিকার B1B2 Visit Visa কাহিনী।

সম্পর্কিত খবর

    ঘটনা ১ : বছর দুই আগের ঘটনা। একটা হোটেলের রিসেপশনে কাজ করে আমার পরিচিত এমন একটা ছেলে আসলো আমার কাছে। খুব উত্তেজিত। জানালো সে চাকরী নিয়ে আমেরিকা যাচ্ছে। ভালো বেতন। বিশেষ ব্যাবস্থায় ভিসা হয়েছে। খটকা লাগলো। কোন কাগজপত্র আছে কিনা দেখতে চাইলে একটা নেটিফিকেশন এর প্রিন্ট দেখালো যা DS 160 বা আমেরিকার ভিসা ফর্ম অনলাইনে পূরন করে সাবমিট করলে ছবি, বারকোড, নাম্বার, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর লোগোসহ একটা কনফার্মেশন নোটিশ আসে যেটা নিয়ে যেতে হয় ভিসা ইন্টারভিউ এর সময়। যে কেউ যে কোন সময় এটা করতে পারে। এর পর ভিসা ফি জমা, অনলাইনে এ্যাপয়েনমেন্ট, ইন্টারভিউ এসব আছে।এটাকেই ভিসার কনফার্মেশন হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে। বুঝলাম ছেলেটা টোপ গিলে ফেলেছে। কোন টাকা দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে বললো এখনো কোন টাকা দেয়নি। সব মিলিয়ে ২০ লাখ টাকা খরচ হবে। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না দিলে ভিসা বাতিল হয়ে যাবে।ইন্টারভিউ ছাড়া আমেরিকার ভিসা! সব বুঝিয়ে তাকে বললাম যে সে প্রতারক চক্রের খপ্পড়ে পড়েছে।ছেলেটা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। টাকা কিভাবে যোগাড় করবে সেই টেনশনে ছিল। মালয়েশিয়ায় বসে এক বাংলাদেশী এই কাজ করে তার দালালদের মাধ্যমে। জানালো, আরো কিছু ছেলেকে যোগাড় করেছে আমেরিকা যাওয়ার জন্য।

    ঘটনা ২ : মাস দুই আগে ইউরোপ থেকে একজনের ফোন; বস, আমেরিকার ভিসা করতে কত টাকা লাগে? বললাম ১৬০ ডলার। বললো, আরে ওটা না, টাকা দিয়ে ভিসা করাতে কত লাগে? বুঝলাম কেস খারাপ। ধরা খাওয়া কেস। ঘটনা হলো তার পরিচিত এক ব্যাবসায়ী দুই বাচ্চাসহ তার পরিবারের ভিজিট ভিসার জন্য এক দালালের সাথে ৩০ লাখ টাকায় চুক্তি করেছেন। ইতিমধ্যে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে দিয়েছেন। দালাল বাকী ৫ লাখ টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। আমেরিকা থেকে ‘বিশেষ ইনভাইটেশন’ এনে ভিসার ব্যাবস্থা করা হবে। কোথায় ভিসা ফর্ম পূরন, কোথায় ইন্টারভিউ কিছুই ঠিক নেই কিন্তু ২৫ লাখ টাকা দেয়া হয়ে গেছে।

    ঘটনা ৩ : পেশাগত কারনে কেউ কেউ হয়তো আমেরিকান দূতাবাসে যাতায়াত করেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যান। আমেরিকান রাষ্ট্রদূত বা অন্যান্য আমেরিকান কুটনীতিকদের সাথে ছবি, সেলফি করেন বা করার সুযোগ হয়। এদের মধ্যে কেউ হয়তো থাকতে পারেন যিনি মানুষকে এমন ধারনা দেন যে তিনি অর্থের বিনিময়ে ভিসা করিয়ে দিতে পারেন। এমন আশ্বাস দিয়েছেন এমন কথা আমি শুনেছি কয়েকজনের কাছে। এখানে বলে রাখি স্বয়ং আমেরিকান রাষ্ট্রদূতও কারোর ভিসার জন্য নিজে সুপারিশ করতে পারেন না। এ ব্যাপারে প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত James F. Moriarty স্টেট ডিপার্টমেন্টে Ambassadorial Waiver চেয়ে যে চিঠি লিখেছিলেন সেটা দেখতে পারেন যা উইকিলিকস ফাঁস করেছিল।

    ঘটনা ৪ : ভাই, আপনার সাথে তো আমেরিকান দুতাবাসের ভালো সম্পর্ক। আপনি ইচ্ছা করলে ভিসা করিয়ে দিতে পারবেন। টাকা যা লাগে দেব। এমন প্রস্তাব প্রায়ই পাই। ২০০১ সাল থেকে আমেরিকা, কানাডা যাতায়াত করি। সাতটা আমেরিকান ভিসা আছে যার তিনটা ৫ বছরের B1B2 মাল্টিপল এন্ট্রির, J1 ভিসাও আছে। অর্থাৎ ২০০১ সাল থেকে খুব কম সময় গেছে আমার আমেরিকান ভিসা ছিল না।আমেরিকান দুতাবাস তথা স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর সাথে কাজ করি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কারও দিয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এর পরও আমার ভিসার জন্য কোন ছাড় পাই না। যেগুলো অফিসিয়াল বা দুতাবাসের আমন্ত্রনে আমেরিকা গিয়েছি সেগুলোসহ বাকীগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া আর ইন্টারভিউ দিয়েই আমাকে ভিসা নিতে হয়েছে। আমেরিকান দুতাবাসে কর্মরত সব বাংলাদেশী কর্মকর্তা কর্মীর জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য। অনেক সময় তাদের ভিসার আবেদনও প্রত্যাখ্যান করা হয়, হয়েছে এটা আমি জানি।

    আসলে অত্যন্ত জনপ্রিয় আমেরিকান এই B1B2 ভিজিট ভিসা পাওয়া তেমন কঠিন কোন ব্যাপার না। তার মানে এই নয় যে আবেদন করলেই সবাই ভিসা পাবেন। যিনি পাওয়ার যোগ্য বা যার ভিসা দরকার তিনিই পান। ভিসা অফিসার কিসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন কাকে ভিসা দেবেন আর কাকে দেবেন না? খুব সহজ, আপনার সামাজিক অবস্থান অর্থাৎ আপনি কে? কি করেন আপনি? কি আপনার পরিচয় বা পেশা? প্রত্যেক ভিসা আবেদনকারীই ইউনিক। আপনার বাবা চাচা মামা কি করেন সেটা ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়। আপনাকেই প্রমান করতে হবে আপনি ভিসা পাওয়ার যোগ্য। কিভাবে সেটা প্রমান করবেন? ভিসা অফিসারকে সন্তুষ্ট হতে হবে যে আপনার আমেরিকা যাওয়ার দরকার আর আপনি নির্ধারিত সময়ে ফিরে আসবেন। আর হ্যা, আমেরিকার ভিজিট ভিসার জন্য ব্যাংকে আপনার বিশাল ব্যাল্যান্স, বাড়ী বা গাড়ী থাকার কোনই দরকার নেই। ওনারা আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখতেও চান না কখনো। আপনার মাসিক আয়ের পরিমানই বলে দেবে আমেরিকায় যাওয়ার মতো সামর্থ্য আপনার আছে কিনা। ভিসা অফিসাররা বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। আপনি কোন মিথ্যা বললে বা মিথ্যা তথ্য দিলে উনারা বুঝতে পারেন। কিভাবে? আপনার চেহারার মধ্যে তা ফুটো ওঠে। যতো স্মার্টই আপনি হোন না কেন মিথ্যা বলে বা কোন মিথ্যা তথ্য দিয়ে আপনি ভিসা অফিসারের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না। নিজের মিথ্যার জালে নিজেই জড়াবেন।

    কোন দালাল কিংবা আমেরিকান দূতাবাসের কেউই আপনার ভিসার নিশ্চয়তা এমনকি সুপারিশও করতে পারেন না। সুতরাং যা করবেন সাবধানে করবেন। পরে হায় হায় করে কোন লাভ হবে না। একটা গল্প দিয়ে আজ শেষ করি। আমেরিকান দুতাবাসের কনস্যুলার বা ভিসা সেকশনের এক প্রধানকে একবার বললাম আমার অফিসে তোমাদের ভিসা ইন্টারভিউ হয়। একটু অবাক হয়ে বললেন সেটা কিরকম! বললাম আমার পরিচিত যারা ভিসার জন্য আবেদন করে তাদের নার্ভাসনেস কাটানোর জন্য মক ভিসা ইন্টারভিউ করি। তাদেরকে বলি ইন্টারভিউতে আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে তোমার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। উনি হো হো করে হেসে বললেন তুমি তো দারুন কাজ করো! উনি আরো বললেন অনেকে শুধু নার্ভাস না, রীতিমতো ভয় পায় কাউন্টারে আসলে। কেউ কেউ গরমের মধ্যে স্যুট প্যান্ট করে আসে আর কিছু মহিলা এমন সেজেগুজে আসে যেন বিয়ে করতে এসেছে। এগুলোর কোনই দরকার নেই। অনুযোগের সুরে বললাম, আমার কাছে পাশ করেনি এমন কাউকে কাউকে তোমরা ভিসা দিয়েছো। মৃদু একটা চড় দিয়ে হাসতে হাসতে তিনি বললেন, মনে হচ্ছে ভিসা অফিসার হিসেবে আমার অফিসারদের থেকেও তুমি বেশ কড়া!

    (ফেসবুক স্টাটাস)

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close