• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ডামি নির্বাচনে শেষ রক্ষা হবে না: নজরুল ইসলাম

প্রকাশ:  ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১:২১
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমি আর ডামি নির্বাচন করে লাভ নেই। জনগণ তা কখনোই মেনে নেবে না। সরকারের শেষ রক্ষাও হবে না।

শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন: বর্জন, অংশগ্রহণ ও ডামি ভোটাভুটি শীর্ষক নির্দেশনামূলক’ সভার আয়োজন করে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।

নজরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী ইতিহাসে আমরা প্রথম শুনলাম ডামি প্রার্থী। এই প্রার্থীদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে সেজন্য ক্ষমতাসীন দলের প্রধান নেতারা বক্তৃতাও করেন। ক্ষমতাসীন দল ছাড়া যারা নির্বাচন করতে যাচ্ছে, এর মধ্যে একটাও বিরোধী দল নাই। জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করছে। তারা ২৬টি আসনে আপস করেছে। জাসদ ৩টা, ওয়ার্কার্স পার্টি ২ এবং মঞ্জু ১টা সহ আরো কয়েকটা আছে। তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে খাতির হয়েছে। আরো যারা দল আছে তাদের কাকে কী বণ্টন করা যায় তার একটা চেষ্টা চলছে। হলো এটা নির্বাচন? আমি আর ডামির নির্বাচন।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে নির্বাচন কমিশনার বলছেন, ভোট কেমন হচ্ছে তা দেখতে বিদেশিরা গুপ্তচর লাগিয়েছে। সেজন্য ভয় পাচ্ছেন। কারণ এবার যদি আগের মতো চুরি করতে যায়, তাহলে ধরা পড়তে পারে। এজন্য বহু চেষ্টা করছে যাতে কিছু ভোটার ভোটকেন্দ্রে আনা যায়। এক শতাংশও যদি ভোট পড়ে, তাহলে তাকে নির্বাচিত করতে হবে। এটা আইন? এই অর্থহীন নির্বাচনে জনগণকে ভোট না দেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমরা আগে দেখেছি চুরি বা জালিয়াতি হয় গোপনে। কিন্তু ১৮ সালে যা হয়েছে তা নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন আর আওয়ামীলীগ মিলে জনসমক্ষে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। এবারও যে প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন চলছে তা অত্যন্ত হাস্যকর। সিন্ডিকেট করে বাজার লুট, ব্যাংক লুট, শেয়ারবাজার লুটের যে মহোৎসব আওয়ামী লীগ চালিয়েছে, সেই লোভেই তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিরা যে হলফনামা দিয়েছে তা আগে দেখলে মানুষ আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোন পার্টি করতো না। এইভাবে মানুষ টাকার মালিক হতে পারে তা কল্পনাও করা যায় না। পত্রিকায় দেখলাম একজনেরই তিনশো ফ্ল্যাট, যার সবই নাকি ইউরোপ আমেরিকায়। এখন একটাই উপায়, সরকারকে সকল সহোযোগিতা বন্ধ করতে হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চালাতে হবে।

গণফোরামের (মন্টু) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, এ দেশ স্বাধীনভাবে আর চলছে না। বিগত ২০১৪ সাল থেকে দেশের নির্বাচন পরিচালিত হচ্ছে ভারতের পরিকল্পনায়। এবার আর কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না।

মানবাধিকার সংগঠক ড. শহীদুল আলম বলেন, আর আমরা রাতের ভোট চাই না। এই জালিম সরকার মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও বদলে ফেলেছে। আজ যারা আওয়ামী লীগের পদলেহন করছে না, তাদেরকেই এখন রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই অবস্থা আর চলতে পারে না।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ৭ জানুয়ারী নির্বাচন নির্বাচন খেলার আয়োজন করা হয়েছে। মানুষ ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করতে চায়, খেলা দেখতে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে না। শুক্রবারের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ তিনি বলেছেন বিএনপি রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। এ ধরনের কথা আমরা আমরা বাকশাল কায়েমের আগে শুনেছি।

এবি পার্টির আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে কোন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজিত নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ১৯৯১, ৯৬, ২০০১ এর নির্বাচন ছিল প্রশ্নের বাইরে, কারণ ভোটার উপস্থিতি, ভোট গ্রহণ পদ্ধতি, প্রার্থীদের প্রচার প্রক্রিয়া ছিল স্বচ্ছ। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবই প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীজোট ভোট পায় ৮২ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা অবিশ্বাস্য। অন্যদিকে ১৩৭টি আসনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট কোন ভোটই পায়নি। এটাই দেশজুড়ে হাজার হাজার ভোট কেন্দ্র থেকে বিরোধী দলের অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়ার প্রমাণ। যা দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা ও বিরোধীদল নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া।

আমার বাংলাদেশ পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু’র সঞ্চালনায় সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আ.ক.ম. ওয়ারেসুল করিম।

এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ড. রেজা কিবরিয়া, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার , অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও বিএম নাজমুল হক, নাগরিক ঐক্যের সেক্রেটারি শহীদুল­াহ কায়সার, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন প্রমুখ।

নজরুল ইসলাম,ডামি নির্বাচন,বিএনপি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close