• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

আলোচনায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোট

প্রকাশ:  ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:০৫
মনজুর রশীদ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মহাদূর্দিনের মধ্যে এক মহাঘটনা ঘটে গেল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে। ভোট নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে নানা কারচুপির কারণে মাত্র ৪২৮ জন ভোটারের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে মোট ৩৬৫টি ভোট পড়লেও ২৬টি ভোট বাতিল বলে গণ্য হওয়ায় মোট ৩৩৯ ভোটের মধ্যেই জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়।

এই ভোটে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুন প্যানেলের সাথে মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেলের ভোটযুদ্ধ হলেও এর উত্তাপ যেন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। মাত্র এই ক'টি ভোট গণণার জন্য এই ভোটের নির্বাচন কমিশনের সারারাত লেগে যায়! সারাদিন - সারারাত ধরে এফডিসির বাইরে ভক্ত সমর্থকদের ভিড় ঠেকাতে পুলিশকে গলদঘর্ম হতে হয়, একাধিকবার লাঠিচার্জের মত ঘটনাও ঘটে। অনেকে বাসায় বসে রেজাল্ট জানার অপেক্ষায় সারারাত জেগে থাকে। ভোটের সময় ও ভোট শেষে নানারকম গুজবে সরগরম হয়ে ওঠে পুরো দেশ। সোস্যাল মিডিয়ায় স্পষ্টতই দেখা যায় মনগড়া নিউজ পরিবেশনের ছড়াছড়ি। ভোট গণনা শুরু হতে না হতেই একেকটা নিউজপোর্টাল তাদের মত করে ফলাফল জানাতে শুরু করে। এসব দেখে অভিনন্দন জানিয়ে অনেকেই আবার ফেসবুক পেজে নানারকমের পোস্ট দিতেও শুরু করে!

বাস্তবতা হল সারা দিন ভোট গ্রহণ এবং প্রায় সারা রাত ভোট গণনা শেষে আজ শনিবার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহীদুল হারুন।

এই অল্প কিছু ভোটারের ভোট থেকে যে চিত্র উঠে আসে তা হল ভোটারগণ প্রধান দু'টি পদ যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যাদেরকে নির্বাচিত করেছেন তাদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা অন্য সম্পাদকীয় পদের তুলনায় যথেষ্ট কম। যেমনঃ ঢাকাই সিনেমার 'বেদের মেয়ে জ্যোস্না' খ্যাত জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন পেয়েছেন ১৯১ ভোট, আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী মিশা সওদাগর পেয়েছেন ১৪৮ ভোট। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ১৭৬ ভোট পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মত জয়ী হয়েছেন জায়েদ খান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নিপুন পেয়েছেন ১৬৩ ভোট। তার মানে কি শিল্পীরা তাদের মনমতো নেতার মনোনয়ন পান নি? বরং অন্যান্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী প্রার্থীরা বরং তাদের চেয়ে বেশী ভোট পেয়েছেন।

২১৯ ভোট পেয়ে খল অভিনেতা ডিপজল ও ১৯১ ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি পদে নায়ক রুবেল নির্বাচিত হয়েছেন। এ পদে চিত্রনায়ক রিয়াজ ১৫৬ এবং অভিনেতা ডি এ তায়েব ১১২ ভোট পেয়ে হেরেছেন। সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে নায়ক সাইমন সাদিক জয়ী হয়েছেন ২১২ ভোট নিয়ে। তাঁর কাছে সিনিয়র অভিনেতা সুব্রত হেরেছেন ১২৭ ভোট পেয়ে।

আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ২০৫ ভোট পাওয়া জয় চৌধুরীর কাছে নায়ক নিরব হেরেছেন ১৩৪ ভোট পেয়ে। অচেনা অভিনেতা আজাদ খান কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন ১৯৩ ভোট পেয়ে। তার কাছে হেরে গেছেন আরেক অচেনা অভিনেতা ফরহাদ ১৪৬ ভোট পেয়ে। অন্যদিকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নায়িকা শাহানূর ১৮৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। পরাজিত প্রার্থী আলেকজান্ডার বো পেয়েছেন ১৫৫ ভোট।

কার্যকরী সদস্য পদে যারা ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন তারাই বরং বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। যেমনঃ সর্বোচ্চ ২৪০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন নায়ক ফেরদৌস। এ পদে অন্য বিজয়ীরা হলেন অমিত হাসান ২২৭, অঞ্জনা ও মৌসুমী পেয়েছেন ২২৫, চুন্নু ২২০, কেয়া ২১২, জেসমিন ২০৮, আলীরাজ ২০৩, সুচরিতা ২০১, অরুণা বিশ্বাস ১৯২ ও রোজিনা ১৮৫ ভোট।

এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নিজ নিজ প্যানেলের জয় নিশ্চিত করতে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুন এবং মিশা সওদাগর-জায়েদ এর দুটি প্যানেলের সদস্যরা শক্তভাবে মাঠে নামেন। বাতিল হওয়া ১৮৪ জন শিল্পীর ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার হিসাব-নিকাশ, জ্যেষ্ঠ তারকা শিল্পীদের বিভক্ত হয়ে দুই শিবিরে সমর্থন - এসব কারণে শেষ মুহূর্তে এসে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি প্যানেলে বেশ উত্তেজনা ও শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।

চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে জড়িত আমার বন্ধু নায়ক, প্রযোজক ও সাংবাদিকদের কাছে এরকম একটি শিল্পী সংস্থার ভোট নিয়ে জনমনে এতো কৌতুহলের কারণ জানতে চাইলে প্রায় সবাই অভিন্ন সুরে একইরকম কথা বলেন। জাতীয় রাজনীতি ও নির্বাচনে যে পারস্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস ও কুটকৌশল মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, তার প্রভাব প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল দুটির মধ্যে যেমন তৈরি হয়েছে - অন্যদিকে ভোটাধিকার ও ভাল চলচ্চিত্র দেখা থেকে বঞ্চিত জনগণও নিজেদের আক্ষেপ পূরণের স্বপ্ন তারকাদের ভোটযুদ্ধের মাধ্যমে দেখতে উদগ্রীব ছিলেন!

লেখক: উন্নয়ন ও সংস্কৃতি কর্মী।

পূর্বপশ্চিম/এসকে

মনজুর রশীদ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close