• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

দেশে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে ৭০ শতাংশ কিশোরী

প্রকাশ:  ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৯
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

দেশে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে আছে ৭০ শতাংশ কিশোরী। প্রটেকশন (সেলপ) কর্মসূচির আওতায় ‘বর্ন টু বি আ ব্রাইড’ শিরোনামে করা এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে দেশের ২৭ জেলার দুই হাজার ৮০টি গ্রামের ৫০ হাজার পরিবারের ওপর জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বুধবার (১১ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসকে কেন্দ্র করে এ আয়োজন করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, ১৬-১৭ বছর বয়সী মেয়েরা বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। স্কুল থেকে ঝরে পড়া মেয়েদের চেয়ে পড়াশোনায় থাকা অবস্থায় বেশি বাল্যবিবাহ হয়েছে, যা মোট বাল্যবিবাহের ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ বাল্যবিবাহ হওয়া মেয়েদের কেউ ছয় মাস, কেউ এক থেকে সাত বছরের বেশি সময় স্কুলে পড়েছে। আবার অনেকে কখনো স্কুলেই যায়নি।

বাল্যবিবাহের পেছনে দারিদ্র্যকে বড় কারণ বলা হলেও জরিপে উঠে এসেছে, ধনী ও মধ্যবিত্ত পরিবারেও বাল্যবিবাহের হার ৫০ শতাংশের ওপরে।

জরিপের আওতায় আসা ২৭ জেলার মধ্যে পিরোজপুরে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৭৩ শতাংশ বাল্যবিবাহ হয়েছে। পরের অবস্থানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাল্যবিবাহের হার ৬৫ শতাংশের বেশি। একইভাবে নওগাঁয় ৬৫ শতাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ে প্রায় ৬৩ শতাংশ এবং জয়পুরহাটে ৬১ শতাংশের বেশি বাল্যবিবাহ হয়েছে। সবচেয়ে কম বাল্যবিবাহ হয়েছে নেত্রকোনায়, ২৪ শতাংশ।

পরের অবস্থানে আছে যথাক্রমে মৌলভীবাজার ২৯ শতাংশ, বাগেরহাট ২৯ শতাংশের কিছু বেশি, ময়মনসিংহ প্রায় ৩০ শতাংশ এবং মানিকগঞ্জ ৩২ শতাংশের কিছু বেশি।

গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, এ জরিপে শুধু মেয়েদের কথা বলা হয়েছে। মেয়েরা না হয় বাধ্য হয়। ছেলেদের কথা কেন বলা হচ্ছে না। একটা ছেলে কেন বাল্যবিবাহ করে? ছেলেদের নিয়ে কেন স্ট্যাডি হচ্ছে না। ছেলেরা কেন অল্প বয়সের মেয়ে বিয়ে করতে চায়?

স্ট্যাডিগুলো ভিন্ন ধাঁচে আনার আহ্বান জানিয়ে মেহের আফরোজ বলেন, যে ছেলেরা অল্প বয়সের মেয়েদের বিয়ে করতে চায়, তাদের লজ্জা দেন। মেয়েদের কেন খালি জ্ঞান দিচ্ছেন। ছেলেদের কেন ধরছেন না। শুধু মেয়েদের সচেতন করলে হবে না।

জরিপের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাল্যবিবাহের পেছনে পরিবারগুলো উপযুক্ত পাত্র পাওয়া; দারিদ্র্য; কম বয়সে বিয়ে দিলে বরপক্ষের যৌতুকের চাহিদা না থাকা বা কম থাকা; সামাজিক নিরাপত্তাবোধের অভাব; মেয়ে পড়াশোনায় ভালো না হওয়াকে উল্লেখযোগ্য কারণ বলে জানিয়েছে।

আলোচনায় অংশ নিতে ময়মনসিংহ থেকে এসেছে কিশোরী ফাতেমা-তুজ-জোহরা লামিয়া। নিজ বক্তৃতায় লামিয়া বলে, বাল্যবিবাহ একটি অপরাধ। গ্রামাঞ্চলের মানুষ এটাই জানে না। গ্রামে গ্রামে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সে বলে, অল্প বয়সে বিয়ে হলে জামাইয়ের বাড়িতে কিছু হলে স্বামী বলে বাপের বাড়ি যা। বাপের বাড়ি থেকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আবার স্বামীর বাড়ি পাঠানো হয়। মেয়ের কোনো নিজের বাড়ি নেই। প্রতিটা মেয়ের বাড়ি থাকা দরকার।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, যে পরিবারে একটিমাত্র মেয়ে, সেখানে বাল্যবিবাহের হার ৮৯ শতাংশ। মুসলিম মেয়েদের তুলনায় হিন্দু মেয়েদের বাল্যবিবাহ বেশি হচ্ছে। বেশি শিক্ষিত অভিভাবকের চেয়ে কম শিক্ষিত অভিভাবকরা বাল্যবিবাহ বেশি দিচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, বাল্যবিবাহ রোধ করতে হলে আরো সচেতনতা বাড়ানো দরকার। কাজীদের ডাটাবেইস করতে হবে। সরকারও অনেক কাজ করছে। সেগুলোও তুলে ধরতে হবে। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে অবশ্যই বাল্যবিবাহ রোধ হবে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

কিশোরী,শতাংশ,দেশ,বাল্যবিবাহ,ঝুঁকি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close