• রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতি, ১৩ মিশন প্রধানকে ডেকে ক্ষোভ জানাল ঢাকা

প্রকাশ:  ২৭ জুলাই ২০২৩, ০০:২১
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানানোয় যুক্তরাষ্ট্রসহ ১১টি দেশ এবং ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে অসন্তোষ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বুধবার (২৬ জুলাই) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা বিবৃতিতে মৌলিক ত্রুটি তুলে ধরেছি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলেছি।”

তিনি বলেন, “আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমরা এটাকে সমন বলছি না... আমরা এর আগে জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তাকেও ডেকেছিলাম।”

তিনি আরও বলেন, “তাদের বিবৃতির আগেই পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তবে তারা সেটি বলেননি। বিবৃতিতে অনেক ত্রুটি রয়েছে।”

শাহরিয়ার বলেন, “এটি এমন কোনো ঘটনা নয় যা দিয়ে পুরো নির্বাচনের বিচার করা যায়। ভোটের সময় অনিয়মের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ তোলেনি। এমনকি হিরো আলম পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন এবং পুলিশের প্রতিক্রিয়ায় খুশি বলে জানিয়েছেন।”

প্রতিমন্ত্রী এ বিবৃতিকে অপ্রয়োজনীয় বলেও অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, “আমরা আশা করি তারা এটি উপলব্ধি করবে এবং এই ধরনের অকূটনৈতিক আচরণ থেকে বিরত থাকবে।”

কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তাদের মধ্যে কয়েকজন ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন, এটি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করা হয়নি। তারা আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করার জন্য করেছেন। তারা মনে করেছেন যে, এটি আমাদের সাথে কন্টিনিউয়াস এঙ্গেজমেন্ট আছে, এটাই ধারাবাহিকতার অংশ।”

“এর জবাবে তাদের ভিয়েনা কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৪১ মনে করিয়ে দিয়েছি তাদের অবস্থানকারী দেশের আইন মানতে হবে ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা চলবে না,” যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “তাদের যোগাযোগের প্রথম জায়গা পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় হওয়া উচিত ও আমাদের কর্মকর্তারা সর্বদা তাদের প্রয়োজনে সাড়া দিতে প্রস্তুত।”

“আমরা মিডিয়ার সাথে তাদের যোগাযোগের প্রশংসা করি, কিন্তু ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, যোগাযোগের প্রথম জায়গা হওয়া উচিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।”

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, “নির্বাচিত সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত এ হামলার নিন্দা করেছেন ও সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।”

এ ব্রিফিং পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলবে না বলেও জানান তিনি।

এর আগে গত ১৯ জুলাই যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতরা একটি যৌথ বিবৃতি দেন। এতে তারা, ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী আশরাফুল আলমের ওপর ১৭ জুলাই হামলার নিন্দা জানান।

এরপর ১৯ জুলাই আরেক বিবৃতিতে নিন্দা জানান ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল।

এ বিবৃতির জেরে রাষ্ট্রদূতদের তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার বিকেল ৩টার দিকে রাষ্ট্রদূতরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আসেন। সেখানে তারা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে সেখানে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে টুইট করার জেরে মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইসকে তলব করার কয়েকদিন পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হল।

তলবের বিষয়ে সে সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, “আমি এ বিষয়টি জানি না। কিন্তু জাতিসংঘের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হলো— তারা আমাদের উন্নয়নের অংশীদার। তারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না।”

তিনি আরও বলেন, “দুনিয়ার বহু জায়গায় লোক মারা যায়। ভারতে প্রায় ৪৮ জন মারা গেছে। বিভিন্ন দেশে মারা যায়। অন্য দেশে যখন লোক মারা যায়, তখন কি জাতিসংঘ টুইট করে? আমাকে সেই দৃষ্টান্ত আগে দেখাক।”

বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের তলবের বিষয়টি কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ আগেও নানা ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের তলব করেছে। তবে জাতিসংঘের কোনো প্রতিনিধিকে তলব করে অসন্তোষ প্রকাশের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেনি।

হিরো আলম,পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close