• সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

তেজগাঁওয়ের সড়কটি ফের ট্রাকের দখলে, জনভোগান্তি চরমে

প্রকাশ:  ০২ অক্টোবর ২০২২, ২২:৩০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আনিসুল হক মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উন্নয়নে যুগান্তকারী বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেসবের মধ্যে অন্যতম ছিল তেজগাঁওয়ে অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে প্রশস্ত সড়কটি দখলমুক্ত করা। তাতে ফার্মগেট থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত সড়কে নিত্যদিনের যানজট দূর হয়। পুরো এলাকা হয়ে ওঠে দৃষ্টিনন্দন।

আনিসুল হক প্রয়াত হয়েছেন। আর তেজগাঁওয়ের সদা ব্যস্ত সড়কটিও বেদখল হয়ে গেছে। সেখানে আবারও স্থায়ী স্ট্যান্ড বানিয়ে নিয়েছেন ট্রাক চালকরা। সড়কটির বেশিরভাগ জায়গা চলে গেছে ট্রাকের দখলে। এর ফলে সংকুচিত হয়ে পড়া সড়কে ফিরেছে যানজটের সেই পুরনো চেহারা। এই সড়কে চলতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। এ নিয়ে গণমাধ্যমে অসংখ্যবার লেখালেখি হলেও কর্তৃপক্ষ সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করছে।

সম্পর্কিত খবর

    ট্রাক চালকেরা বলছেন, রাজধানীতে ট্রাক রাখার কোনো জায়গা না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে সড়কটি ব্যবহার করছেন। সরকার ট্রাক স্ট্যান্ড তৈরি করে দিলেই তারা আর সড়কে ট্রাক রাখবেন না।

    অপরদিকে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, একটা আধুনিক ট্রাক স্ট্যান্ড তৈরির জন্য জায়গা চেয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। সরকার জায়গা বরাদ্দ দিলেই কাজ শুরু করা হবে।

    বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, আনিসুল হক সড়কের রেল গেট এলাকার শুরুতেই বসেছে লেগুলা স্ট্যান্ড। রাস্তার বেশিরভাগ জায়গা দখল করে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য লেগুনা। প্রায় আড়াআড়িভাবে লেগুনা দাঁড় করিয়ে তোলা হচ্ছে যাত্রী। আর ফার্মগেট-কারওয়ান বাজার থেকে আসা যানবাহনগুলো যানজটে আটকা পড়ে রেললাইনের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে। ফলে সেখানে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

    দখলের শুরুটা এখানে হলেও এর বিস্তৃতি সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত। পুরো সড়কের দু’পাশে লাইন করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সারি সারি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ। চার লেন সড়কের প্রশস্ততা নেমে এসেছে দুই লেনে। তার ওপর মাঝে মাঝে ট্রাক পার্কিং বা ঘুরানোর সময় পুরো সড়কই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে এই সড়কে সারাক্ষণ লেগে আছে ভয়াবহ যানজট।

    এছাড়া ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানগুলো আড়াআড়িভাবে রাখায় গাড়ির পেছনের অংশ উঠে থাকছে ফুটপাতের ওপর। ফলে ফুটপাত দিয়ে পথচারীরাও হাঁটাচলার সুযোগ পাচ্ছেন না।

    সড়ক দখল করেই ক্ষান্ত হননি ট্রাক চালকেরা। সেখানেই তারা বসিয়েছে গাড়ি মেরামতের অস্থায়ী ওয়ার্কশপও। সেখানে চলছে ট্রাক মেরামতের কাজ।

    শুধু আনিসুল হক সড়ক নয়; সাতরাস্তা থেকে বেগুনবাড়ি অভিমুখী আকিজ পেট্রোল পাম্পের পাশ দিয়ে যাওয়া সড়কগুলোও এখন ট্রাক, কার্ভাড ভ্যান আর মিনি ট্রাকের দখলে। মোট কথা দিনের বেশির ভাগ সময়ই তেজগাঁওয়ের প্রায় সব সড়ক কম-বেশি এই অবৈধ পার্কিংয়ের শিকার। শুধু দিনে নয়, রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো তেজগাঁওয়ের সব সড়কই দখলে চলে যায় ট্রাক ও বাসের দখলে।

    আব্দুর রহমান নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে চালাচল করতে এখন ভয় হয়। কোনো কোনো সময় রাস্তা ফাঁকা থাকলেও বেশিরভাগ সময়ই অনেক জ্যাম থাকে। তখন অনেকক্ষণ রাস্তায় বসে থাকতে হয়। আর রাস্তা জ্যাম মানে আমাদের ইনকাম বন্ধ।’

    ওবায়দুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, ‘আমার বাসা ফার্মগেটে আর অফিস গুলশানে। তাই আমাকে প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সকালের দিকে প্রায় প্রতিদিনই এই রাস্তায় জ্যামে আটকা পড়ে থাকতে হয়। কোনো কারণ ছাড়াই সেই জ্যাম তৈরি হয়।

    ‘দেখা যায় কোনো ট্রাক আড়াআড়িভাবে রাখায় রাস্তা সরু হয়ে জ্যাম তৈরি হয়। আবার কখনও কখনও ট্রাক ঘোরানো বা পার্কিংয়ের সময় পুরো রাস্তায়ই জ্যাম তৈরি হয়। হেঁটে যাব সেই সুযোগও নেই। কারণ ফুটপাত দখল করে থাকে ট্রাকগুলোর পেছনের অংশ। আর রাতে ছিনতাইয়ের ভয় তো আছেই।’

    সড়ক দখল করে কেন ট্রাক রেখেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এক ট্রাকচালক বলেন, ‘এই রাস্তা ছাড়া আর কই গাড়ি রাখমু? ঢাকা শহরে অন্য কোনো জায়গায় গাড়ি রাখলেই তো পুলিশ মামলা দিব। এইখানে গাড়ি রাখলে মামলার ভয় নেই। তাই আমরা ঢাকায় এলেই এখানে এক-দুই দিন গাড়ি রাখি।’

    বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার মো. মনির বলেন, ‘ভাই, আমরাও বুঝি এই সড়ক ট্রাক দিয়ে দখল করে রাখলে মানুষের দুর্ভোগ হয়। রাস্তায় জ্যাম হয়। চলাচল করতে গিয়ে আমরাও যানজটের ভুক্তভোগী হই। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।

    ‘পুরো ঢাকা শহরে আর কোনো ট্রাক স্ট্যান্ড নেই। তাই এই জায়গা ছাড়া আর কই ট্রাক রাখব বলেন? ঢাকা শহরে মালামাল আনার জন্য প্রতিদিনি হাজার হাজার ট্রাক শহরে আসে। এর মধ্যে কিছু চলে যায়। বাকিগুলো বিভিন্ন রাস্তায় থাকে। আমাদের এখানে একসঙ্গে আড়াই হাজার গাড়ির জায়গা আছে। এর বেশি হয়ে গেলেই রাস্তার ওপর গাড়ি রাখা হয়।’

    তেজগাঁওয়ে অন্যান্য সড়কও তো আপনারা গাড়ি পার্ক করে দখল করে রাখেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই রাস্তা ছাড়া আমরা আর কোনো রাস্তায় গাড়ি রাখার অনুমতি দেই না। অন্য রাস্তায় যেসব পার্ক করা দেখেন সেগুলো ড্রাইভাররা ব্যক্তিগতভাবে পুলিশকে ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে রাখে। ওই দায় আমাদের না।’

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close