• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ঈদের বাজারে ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারছে’ সিএনজি-রিকশা

প্রকাশ:  ০৪ মে ২০২২, ১৭:৩৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদের ২য় দিন বুধবার অনেকটাই ফাঁকা রাজধানীর সড়কগুলো। অল্প সংখ্যক গণপরিবহন নেমেছে সড়কে। ফলে এক স্থান অন্য স্থানে বাসে চড়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এদিকে গণপরিবহন সংকটের কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন যাত্রীদের কাছ থেকে।

বুধবার (৪ মে) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে গেছে প্রতিটি সড়কই এখন ফাঁকা। কর্মজীবী মানুষের সিংহভাগে এখনো কর্মস্থলে না ফেরায় সড়ক সহ প্রতিটি অলিগলিতে মানুষের সংখ্যা অনেক কম। সেই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মানুষের কম উপস্থিতির কারণে সড়কে সেভাবে গণপরিবহনগুলোও নামেনি। সুযোগ বুঝে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আর রিকশা চালকরা যাত্রীদের কাছে বেশি ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের

রাজধানীর শেওড়াপাড়া থেকে মহাখালী আসার জন্য দীর্ঘক্ষণ বাস স্টপজে দাঁড়িয়ে ছিলেন মকিদুর রহমান। তিনি বলেন, স্ত্রী সন্তানসহ নিকেতনে ঘুরতে যাব। তবে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েও বাস পাচ্ছি না। আলিফ নামে একটি বাস যায় মহাখালী কিন্তু আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে একটি বাস গেছে মাত্র। ওই বাসে যাত্রী বেশি থাকায় উঠতে পারিনি। বাস না পাওয়ায় সিএনজি অটোরিকশায় যেতে চাইলাম কিন্তু ১৫০ টাকার ভাড়া সিএনজি চালক চাইল ৩৫০ টাকা। বাস কম থাকার সুযোগ নিচ্ছে তারা।

রাজধানীর গুলশান ১ নম্বর থেকে মোহাম্মদপুর যেতে বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন ঢাকায় ঈদ করা বেসরকারি চাকরিজীবী নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, অন্যদিন ৫ মিনিট পর পর এখান থেকে মোহাম্মদপুরের বাস পাওয়া যায়।আজ ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু বাস আসছে না। সব রুটেই ঈদের পরের দিন বাসের সংখ্যা অনেক কম।

ফার্মগেটে থেকে বনানী পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশায় এসেছেন ফরিদুল ইসলাম ও তার পরিবার। কিন্তু ভাড়া বেশি দিতে হয়েছে জানিয়ে ফরিদুল ইসলাম বলেন, বনানী থেকে আসার জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু পরিবার নিয়ে বাসে উঠতে পারলাম না। তাই বাধ্য হয়ে সিএনজিতে করে এসেছি। বাস কম, মানুষের মুভমেন্ট আছে এই পরিস্থিতি বুঝে ৩০০ টাকার কমে কোনো সিএনজি আসতে চাইল না। তাই বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়ায় আসলাম।

রাজধানীর সায়েন্সল্যাব থেকে রাজাবাজার পর্যন্ত রিকশায় আসা আহসান হাবিব নামে এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ঈদের পরের দিন বলে গণপরিবহন কম, এ সুযোগে কম দূরত্বে বেশি ভাড়া ছাড়া যেতে চাচ্ছেন না রিকশা চালকরা। বেশি ভাড়ার সঙ্গে তারা আবদার জুড়ে দিচ্ছে স্যার ঈদের বকশিশ। রাজাবাজার যাওয়ার জন্য কমপক্ষে ছয়জন রিকশা চালককে বলেছি কিন্তু তারা কেউ ১২০ কেউ ১০০ টাকা ভাড়া চায় বকশিশসহ।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার বেশি ভাড়া প্রসঙ্গে কথা হয় চালক দুলাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের সময় এমনিতেই যাত্রী কম থাকে। কিন্তু জমা খরচ আমাদের কাছ থেকে কম নিচ্ছেন না মালিকরা। ঈদে পরিবারকে সময় না দিয়ে আমরা রাস্তায় নেমে গাড়ি চালাচ্ছি, আর সাধারণ মানুষ বিনোদনের জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরছে তাই তাদের কাছ থেকে এভারেজ ভাড়ার পাশাপাশি ঈদ বোনাস হিসেবে কিছুটা বকশিশ চেয়ে নিচ্ছি। কোন কোন যাত্রী ইচ্ছে করেই ঈদ বকশিশ দিচ্ছে আবার অনেকের কাছে ২০/৫০ টাকা বেশি চেয়ে নিচ্ছি। ভাড়া আসলে বেশি না, কিন্তু বকশিশ দেওয়ার জন্য যাত্রীরা হয়ত বেশি মনে করছেন।

রাজধানীর পল্টন মোড় থেকে মগবাজার যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠে কথা হয় চালক এরশাদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের সময় আমরা গ্রামে ঈদ করতে যাইনি, একটি আশায় ঢাকা পড়েছিলাম। সেটি হলো ঈদের সময় বাড়তি রোজগার হবে। ঈদের তিন দিন রাজধানীতে গণপরিবহন কম থাকে মানুষও রিকশায় ঘুরাঘুরি করে। তাই এসময় আমরা গরিব রিকশা চালকরা একটু বেশি ভাড়া চেয়ে নিই যাত্রীদের কাছ থেকে। যাত্রীরাও খুশি হয়ে বকশিশসহ ভাড়া দেয়। ঈদের আগে দিন থেকে আজ বা কাল পর্যন্তই একটু বেশি ভাড়া চাইবে রিকশাচালকরা। আবার কালকের পর থেকে ভাড়া স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বছরের ঈদের সময়ে বেশি ভাড়া পাব এই আশায় আমরা বছরজুড়েই অপেক্ষায় থাকি।

মহাখালী এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন হওয়ায় আজও সড়কে যানবাহনের সংখ্যা অনেকটাই কম। এখনও স্বাভাবিক হয়নি সাধারণ মানুষের চলাচল। ফলে কোথাও কোন যানজট নেই, সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা। আগামী দুই একদিনের মধ্যে হয়ত রাজধানী পূর্বের রূপে ফিরে আসবে।

পূর্ব পশ্চিম/জেআর

সিএনজি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close