• শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১
  • ||

এবার সেই প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাখ্যা দিলো ঢাকার মার্কিন দূতাবাস

প্রকাশ:  ১৩ এপ্রিল ২০২২, ২৩:৩৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। বিষয়টি নিয়ে বুধবার (১৩ এপ্রিল) ঢাকার মার্কিন দূতাবাস একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে।

যেখানে বলা হয়েছে, আজ (মঙ্গলবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট ২০২১ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিস প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এই বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। । প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে মানবাধিকারকে রেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি বিশ্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেখানে মানবাধিকার সুরক্ষিত হয়, এর রক্ষকদের প্রশংসা করা হয় এবং যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদের জবাবদিহি করা হয়।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, ‘মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়াতে আমাদের অবশ্যই নিজেদের নিবেদিত করতে হবে, একসঙ্গে কাজের মাধ্যমে। আমরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হব সে সম্পর্কে সততার সঙ্গে কথা বলতে হবে। মানবাধিকার পরিস্থিতির অগ্রগতি শুরু হয় তথ্য দিয়ে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা এবং তদপরবর্তী মানবাধিকার চুক্তিগুলোতে দেখানো পথ অনুসরণ করে, কান্ট্রি রিপোর্টগুলোতে (দেশভিত্তিক প্রতিবেদন) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকারের পরিপালন ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতাকে তুলে ধরা হয়। দেশভিত্তিক প্রতিবেদনগুলো আইনি উপসংহার টানে না, দেশগুলোকে রেট করে না, বা তারা মান পূরণে ব্যর্থ হয়েছে কিনা তা-ও ঘোষণা করে না।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন এমন একটি পররাষ্ট্রনীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আমাদের কূটনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যুথবদ্ধ করে, এবং যা গড়ে উঠেছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সুরক্ষাকে কেন্দ্রে রেখে। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এই ৫০তম বার্ষিকীতে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের উন্নয়ন সবার ওপরে থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ নানা ধরনের নিপীড়নে জড়িত থাকলেও এর জন্য তাদের জবাবদিহি করা হয় না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিপীড়ন ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি ভোগ করে আসছে বলে খবর রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ন, হত্যা ও দুর্নীতির খুব কম সংখ্যক ঘটনাতেই তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলছে, বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে, যেখানে অধিকাংশ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ন্যস্ত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ। তবে ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও র‌্যাব ছাড়াও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) দায়িত্ব পালন করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। এই বাহিনীর ওপরে বেসামরিক কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নানা ধরনের নিপীড়ন চালিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব বিষয়ের গ্রহণযোগ্য খবর রয়েছে সেগুলো হলো, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনি হত্যাকাণ্ড; গুম; সরকারের পক্ষে নাগরিকদের নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ; কারাগারে জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী পরিবেশ; নিবর্তনমূলক গ্রেফতার বা আটক; রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার; অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তির ওপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ; বিচারবিভাগের স্বাধীনতার জন্য বাধা; ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর বেআইনি হস্তক্ষেপ; কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ উঠলে তাঁর পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেওয়া; বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, যার মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা ও হুমকি, অন্যায়ভাবে গ্রেফতার বা বিচারের মুখোমুখি করা; ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ; শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সমিতির স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ, যার মধ্যে রয়েছে সংগঠন, তহবিল বা বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজ সংগঠনের ওপর বিধিনিষেধমূলক আইন।

এ ছাড়া শরণার্থীদের চলাচলের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ; শরণার্থীদের নিপীড়ন; ব্যক্তির রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর গুরুতর ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধ; সরকারি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি; দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে হয়রানি বা সেগুলোর ওপর বিধিনিষেধ; লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার তদন্ত ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে ঘাটতি, যার মধ্যে গৃহনির্যাতন, যৌন নির্যাতন, শিশু নিপীড়ন, বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়েসহ অন্যান্য ক্ষতিকর চর্চা রয়েছে; ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর সহিংসতা ও হুমকি; হিজড়াসহ ভিন্ন লৈঙ্গিক আচরণের মানুষের ওপর সহিংসতা; ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিকদের সমিতি করার স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ এবং ব্যাপক মাত্রায় শিশু শ্রম।

পূর্ব পশ্চিম/জেআর

মার্কিন প্রতিবেদন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close