• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

দিনভর বসিয়ে রেখে বিকেলে অর্ধেক বেতন দেওয়া হলো পোশাক শ্রমিকদের

প্রকাশ:  ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:১৮
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

কথা ছিল ঈদ-উল-ফিতর আগেই বেতন-বোনাস দেওয়া হবে। কিন্তু কোনো পাওনা না দিয়েই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। পুলিশের মধ্যস্থতায় কর্তৃপক্ষ সময় চেয়ে নেয় চার দিন।

সোমবার (৮ এপ্রিল) বেতন-বোনাস দেওয়ার কথা থাকলেও দিনভর কারখানার কাছে বসে থেকে বিকেলের দিকে অর্ধেক বেতন পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ঢাকার ধামরাই উপজেলার ওডিসি ক্রাফট প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের।

এর আগে, সকালের দিকেই শ্রমিকরা বেতন-বোনাসের আশায় কারখানায় আসেন। আশপাশে অবস্থান নেন।

শ্রমিকরা বলছেন, সকালের দিকে তারা জানান, ঈদ চলে এলেও মার্চের বেতন ও ঈদের বোনাস দিচ্ছিল না ওডিসি ক্রাফট প্রাইভেট লিমিটেডের দুই হাজারের বেশি পোশাক শ্রমিক। তাদের অভিযোগ, এ বছরের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার আন্দোলন করে বকেয়া বেতন আদায় করতে হয়েছে। এবার তারা আন্দোলন করেছেন গত মার্চ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকদের অনেকে দাঁড়িয়ে আছেন কারখানার মূল ফটকের সামনে। বিক্ষিপ্তভাবে জটলা করে বসে আছেন সামনের সড়কের পাশে গাছের ছায়ায়, চায়ের দোকান, খোলা মাঠে। সহকর্মীদের সঙ্গে অর্থাভাব নিয়ে আলোচনা করছেন কয়েকজন। এছাড়া কারখানার সামনে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।

একই দাবিতে গত ছয়দিন ধরে আন্দোলন করছেন কারখানার শ্রমিকরা। শ্রমিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার মালিকপক্ষ সোমবার বেতন-বোনাস পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও দুপুর পর্যন্ত (১২টা) বেতন-বোনাস দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন একাধিক শ্রমিক। বিকেল ৪টার দিকে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে অর্ধেক বেতন পাঠায় কর্তৃপক্ষ।

আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, এ বছরের জানুয়ারি ও গত বছরের ডিসেম্বর মাসের অর্ধেক বেতন বকেয়া থাকায় ফেব্রুয়ারি মাসে আন্দোলন করেন শ্রমিকরা। ওই সময় কারখানাটি ১৩ দিন বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে একই মাসে দুই দফায় পুরো বকেয়া বেতন পরিশোধ করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

তারা জানান, ঈদের বোনাস এ মাসের ৪ তারিখে এবং মার্চের বেতন ১০ তারিখের মধ্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তবে এর আগেই ২ এপ্রিল রাতে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পরদিন কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়। নোটিশ দেখে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। বন্ধের পরদিন কাজে এসে আরও একটি নোটিশ দেখতে পান তারা।

কারখানার মূল ফটকে টাঙানো নোটিশে বলা হয়, “মার্চ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস বিকাশে না ঢোকা পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। যেদিন বেতন-বোনাস ঢুকবে তার পরদিন কারখানা খুলবে। এছাড়া ৮ মার্চের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হবে।”

এদিকে সোমবার আরেকটি নোটিশ কারখানার টাঙায় কারখানা কর্তৃপক্ষ। সেখানে বলা হয়, ঈদ উপলক্ষে ৯ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। ১৬ এপ্রিল থেকে কারখানা খোলা থাকবে।

সুইং সেকশনের সন্তানসম্ভবা এক শ্রমিক বলেন, “পেটে বাচ্চার বয়স আড়াই মাস। এমনিতে সমস্যা হয় না। ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার, পারি না। টেকা-পয়সা দেয় না। কী করুম!”

কারখানার মূল ফটকে দাঁড়িয়ে এক সহকর্মীকে সুইং সেকশনের এক শ্রমিক বলছিলেন, “ফ্যাক্টরি ভাঙলে তো আমাগো লস, সরকারের লস। ভাংচুর করা যাইব না। সরকারও এলাও করবো না। আমাগো বেতন দিলেই হয়।”

সুইং সেকশনের এক অপারেটর জানান, কারখানা চালুর পর প্রায় পাঁচ বছর ধরেই বেতন নিয়া সমস্যা হচ্ছে। গত ৩-৪ মাস ধরে বকেয়া বেতন চাইলেই বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বেতন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন শ্রমিকরা।

এ বিষয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এবিএম রাশেদুল বারী বলেন, “কারখানার মালিকপক্ষ জানিয়েছে, আজ (সোমবার) বকেয়া বেতনের কিছু অংশ পরিশোধ করা হবে। আমরা শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণভাবে অপেক্ষা করতে বলেছি।”

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, “মালিকপক্ষ বলেছে দুপুর ১টার মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের কিছু টাকা পরিশোধ করবে। শ্রমিকদেরকে সেভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

ওডিসি ক্রাফট প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

পোশাক,ধামরাই,ঈদ-উল-ফিতর,গার্মেন্টস শ্রমিক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close