• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

এটিএম বুথ নিয়ে ব্যাংক গ্রাহকদের ৫৫ শতাংশ অভিযোগ

প্রকাশ:  ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ২০:৪৫
পূর্ব পশ্চিম ডেস্ক

দেশের ব্যাংকখাতে সমাপ্ত অর্থবছরে গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অভিযোগ জমা পড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট অভিযোগ জমা পড়েছে ৫০ হাজার ৭০৩টি। এর মধ্যে এটিএম বুথ-সংক্রান্ত অভিযোগ ছিল ৫৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বা ২৮ হাজারেরও বেশি।

সম্পর্কিত খবর

    বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) ‘অটোমেশন টু হ্যান্ডেল কাস্টমার কমপ্লেইন্টস ইন ব্যাংক: কারেন্ট স্ট্যাটাস, ক্লায়েন্টস স্যাটিসফেকশন অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

    গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে এক সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল।

    এটিএম বুথে টাকা তুলতে গিয়ে প্রায় নানা রকম বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গ্রাহককে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাটি হলো এটিএম বুথে কার্ড আটকে যাওয়া। এছাড়া টাকা আটকে যাওয়া, নেট সমস্যা, পর্যাপ্ত টাকা না থাকা, সার্ভারে সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে ব্যাংকগুলোর কাছে।

    গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন বিষয়ে গ্রাহকদের মোট অভিযোগ জমা পড়ে ১৪ হাজার ২৮৬টি। তবে ছয় বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজারের বেশি। গড়ে প্রতি বছর অভিযোগ বৃদ্ধির হার প্রায় ২৯ শতাংশ। তবে আশার কথা হলো দেরিতে হলেও এসব অভিযোগ নিষ্পত্তির হার ৯৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। ব্যাংকের কল সেন্টারেও বেড়েছে গ্রাহকের অভিযোগের হার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কল সেন্টারের মাধ্যমে অভিযোগ এসেছে ২ কোটি ৬১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯০টি, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। আলোচ্য অর্থবছরে অ্যাপস নিয়ে ১৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, জেনারেল ব্যাংকিং নিয়ে ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ইন্টারনেট ব্যাংকিং নিয়ে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, কার্ড নিয়ে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে অভিযোগ করেছেন ১ দশমিক ১১ শতাংশ গ্রাহক।

    গবেষক দলের সদস্য বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, ‘গবেষণার কাজ করতে গিয়ে প্রত্যেক ব্যাংকের ওয়েবসাইট দেখেছি। আমারই খুব কষ্ট হয়েছে কমপ্লেইন সেন্টার কোথায় আছে, তা বের করতে। কমপ্লেইনের বিষয়টা মেইন মেনুতে থাকা উচিত। একটি ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে অভিযোগ ফরম খুঁজে বের করতে আমারই সময় লেগেছে ৪৫ মিনিট। অভিযোগ করা ও নিষ্পত্তির বিষয়টি সহজতর হতে হবে। সবকিছুই অটোমেশন করা সম্ভব। ৯৯ শতাংশ কাজই অটোমেশনে সম্ভব, বাকি ১ শতাংশের ক্ষেত্রে মানুষের সহায়তা নিতে হবে। গ্রাহকদের সব তথ্য ও অভিযোগের ব্যাপারে ব্যাংকারদের সচেতন থাকতে হবে।’

    সেমিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের গবেষণা, উন্নয়ন ও পরামর্শ পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মো. শিহাব উদ্দীন খান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বিআইবিএম এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান কাজী ছাইদুর রহমান। প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক আলী হোসেন প্রধান, পূবালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক সাইফুল ইসলাম খান, আইএফআইসি ব্যাংকের ডিএমডি মো. মনিতুর রহমান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

    আইএফআইসি ব্যাংকের ডিএমডি মো. মনিতুর রহমান বলেন, ‘‌দ্রুত অভিযোগ নিষ্পত্তির সমাধান একমাত্র প্রযুক্তি। আইএফআইসি ব্যাংকে বিগত পাঁচ বছরে ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়নে। কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্টের জন্য অটোমেশনের বিকল্প নেই। এ গবেষণা পেপারটি আমাদের নতুন চিন্তার খোরাক জোগাবে। আমরা কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্টে যাদের বসাই, তারা দক্ষ না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা এইচআরের সঙ্গে সংযুক্ত।’

    বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, পরিচালক ও আমার মেইল এবং ডাকযোগেসহ প্রায় ৭০০ থেকে ৭৫০টি অভিযোগ আসে প্রতিদিন। ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার আছে। সেখানে সব অভিযোগ রেজিস্টার্ড হয়ে যায়। সীমাবদ্ধ মানবসম্পদ দিয়ে এগুলো হ্যান্ডেল করা কঠিন। বাংলাদেশ ব্যাংকে লোন কেস-সংক্রান্ত যেসব অভিযোগ আসে, তার বেশির ভাগই ফেক। এ গবেষণায় গ্রাহকদের অভিযোগ নিয়ে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে একটি কমিটি করব।’

    পূবালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্রধান সমস্যা হলো কমপ্লেইন গভর্ন্যান্স। কিছু জায়গায় এআই ও চ্যাট জিপিটি দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এআই ই-মেইলের রিপ্লে দিতে পারে, ডকুমেন্টস পড়তে পারে। আমরা ভাবছি এমন একটি টুল ডেভেলপ করব। প্রতি দুই বছর পরপর আমরা গ্রাহকদের ফিডব্যাক নিয়ে থাকি। এখানে যেসব অভিযোগ বা পরামর্শ আসে সেগুলো আমলে নেয়া হবে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close