• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্বে ধ্বস: ৪ মাসে ৩১৩ কোটি টাকার ঘাটতি

প্রকাশ:  ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:১৩
বেনাপোল প্রতিনিধি

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ব্যাপক কড়াকড়ি, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হয়রানির কারণে কমেছে আমদানি বাণিজ্য। ফলে বড় ধরনের ধস নেমেছে রাজস্ব আদায়ে। গত চার মাসে ৩১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিগত কয়েক বছর যাবত এ অবস্থা চলে আসলেও কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হোক আর না হোক নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা ঠিকই পূরণ হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বর্তমানে অতীতের তুলনায় এত বেশি কড়াকড়ি আরোপ, নিত্য নতুন হয়রানি ও মনগড়া এইচ এস কোড পরিবর্তনের কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দরের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কতিপয় কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও হয়রানির কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রভাবে সরকারের রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা নিশ্চিত হলে বাণিজ্যে আবারও গতি ফিরবে বন্দরে। ক্ষোভের সাথে তারা বলেন, উচ্চ পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে ২-৩ কেজি বেশি হলেও ডিউটি না দিয়ে ছাড়ছে না। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সরকারের ও নিজেদের দিকটাই শুধু দেখছে, ব্যবসায়ীদের কোনো ছাড় দিচ্ছে না। এছাড়া যে সব পণ্যের ডিউটি উচ্চতর সে সব পণ্য বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছেন, শুল্ক ফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধাগুলো বড়াতে তারা আন্তরিক ভাবে কাজ করে চলেছেন।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ওয়্যারহাউজিং কর্পোরেশনের অধীনে বেনাপোল দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রফতানির কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০২ সালে মর্যাদা পায় স্থলবন্দরের। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানির বাণিজ্যে সরকারের বড় অংকের রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় মোটরপার্টস, ফেব্রিকস, আয়রন, স্টিল, মোটরগাড়ি, ফল আমদানিতে মুখর থাকতো বেনাপোল স্থলবন্দর। কিন্তুু এখন এসব আমদানিকারকদের আনাগোনা নেই এ বন্দরে। আমদানি কমে যাওয়ার পাশাাশি কমেছে সরকারের বিপুল রাজস্ব আয়।

আমদানিকারকদের অভিযোগ ডকুমেন্ট ঠিকমতো সারমিট করছেন তারা। কিন্তুু পণ্যে এইচ এস কোড ও আমদানি মূল্য নিয়ে প্রতিনিয়ত জটিলতা তৈরি করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। যার ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি মাছ ও ফুলমূলের মতো উচ্চ পচনশীল পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। আগে আপেল আমদানিতে শুল্ক ছিল ৬১.৬৫ টাকা যা চলতি অর্থ বছরে দাঁড়িয়েছে ৮৯.২২ টাকা। তাদের মতে এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে আমদানি কমেছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ছয় হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। গত ৪ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। তার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র এক হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২৪১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩১৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি রয়েছে এখন পর্যন্ত।

সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী জুয়েল রানা বলেন, ভারতের নাসিক থেকে আসা আপেলসহ অন্যান্য উচ্চ পচনশীল পণ্যের চালান আসতে প্রায় তিন দিন সময় লাগে। এর ফলে অধিকাংশ কার্টুনেই ২-৫ কেজি ফল পচে যায়। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে এ পচামালেরও রাজস্ব দিতে হয়। যা আগে ছিল না। এ ধরণের পচনশীল পণ্যের রাজস্ব আদায় করায় অধিকাংশ আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ও বেনাপোল সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে বড় ধসের কারণ হলো কাস্টমস হাউজে অতিরিক্ত হয়রানি। কাস্টমস হাউসে ডকুমেন্ট সাবমিট করার পর নিচের অফিসারদের অতিরিক্ত হয়রানির কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়। ঘোষনা ঠিক থাকলেও পণ্যের এইচএস কোড, ভ্যালু ও টেস্ট করা নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয় তাদের। মনে হয় আমদানিকারকরা আমদানি করে যেন দায় ঠেকেছে। বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব ঘাটতির এটাই মূল কারণ।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো: শাফায়েত হোসেন বলেন, রাজস্ব আদায়ের মূলত ঘাটতি হয়েছে, উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায়। বিশেষ করে মোটরগাড়ি ও মোটরপার্টস থেকে ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। আপেল আমদানিতে ২৪ কোটি ও ফেব্রিকস আমদানিতে ২১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। সর্বমোট ৩১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধাগুলো বাড়াতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আন্তরিক ভাবে কাজ করে চলেছেন।

বেনাপোল কাস্টমস
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close