• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের দায়ভার নেবে না

প্রকাশ:  ১৯ জুলাই ২০২২, ২১:১৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

এখন থেকে ঋণের ভালোমন্দের দায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকেই নিতে হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, যে গ্রাহককে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণ দিয়েছে সেটি ভালো হলেও পর্ষদের, খারাপ হলেও তার দায় পর্ষদের ওপর পড়বে। যেহেতু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, খেলাপি সুবিধা পর্ষদ দেবে, রিশিডিউল তারা করবে। তাই ঋণের ভালোমন্দের দিকটাও তাদের নিতে হবে।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজেমি সেন্টারে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। এসময় সহকারী মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জি এম আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও খেলা‌পি ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার যুক্তি দেখিয়ে ঋণখেলাপিদের আবারও বড় ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে মাত্র আড়াই থেকে পাঁচ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে চারবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়া হয়। সোমবার এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা নি‌য়ে অর্থনী‌তিবিদ ও খাত-সং‌শ্লিষ্টদের সমা‌লোচনার মু‌খে প‌ড়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানটি। এর ব্যাখ্যা দি‌তেই মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের হাতে দেয়ার বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘ব্যাংকগুলো তার গ্রাহক সম্পর্কে ভালো জানে। তারা বুঝতে পারবে কোন গ্রাহক ঋণ নিয়মিত পরিশোধ করছে। কাদের আবার ঋণ সুবিধা দেয়া হবে। খেলাপি ঋণের ওপর দেশের ব্যাংকিং খাতের অনেক কিছু নির্ভর করে। খেলাপি ঋণ বেশি থাকলে দাতা সংস্থা তা ভালোভাবে নেয় না। করোনা এবং বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে নতুন নীতিমালা দেয়া হয়েছে।’

এখন থেকে ঋণের ভালো-মন্দের দায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে নিতে হবে জানিয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি দেবে, তবে ঋণের দায়ভার আর নেবে না। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ যে গ্রাহককে ঋণ দিয়েছে, সেটা ভালো হলে কৃতিত্ব পর্ষদের। আবার খারাপ হলেও সেই দায় পর্ষদের ওপর পড়বে।

‘যেহেতু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, খেলাপির সুবিধা পর্ষদ দেবে, রি-শিডিউলও তারাই করবে। ঋণের ভালো-মন্দের দিকটাও তাদের নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ খেলাপিকে সুবিধা দেয়া নয়। কারণ, ব্যাংকের গ্রাহককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেনে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ইনস্পেকশন করবে, অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেবে।’

ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের দায়িত্ব দেয়া হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা তদারকি করবে বলে জানান তিনি।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান-পরিচালকরা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে ঋণ নিতে পারবেন না। তাদেরকে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোকে ঋণ নিতে হবে- যোগ করেন সিরাজুল। এককালীন ডাউন পেমেন্টের হার কমানো প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, ‘বিপদে পড়েই গ্রাহক খেলাপি হয়। পুনঃতফসিলের জন্য ডাউন পেমেন্ট বেশি থাকার কারণে অনেকেই পুনঃতফসিল করতে পারে না। এ কারণে ডাউন পেমেন্টের হার কমানো হয়েছে। এর ফলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে মনে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

কোনো গোষ্ঠীর চাপে ঋণখেলাপিদের এমন সুযোগ দেয়া হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘নতুন গভর্নর মন্ত্রণালয় থেকে এসেছেন। তিনি অনেক বিচক্ষণ। ব্যাংক খাতের জন্য তিনি ভালো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কোনো চাপে এ সার্কুলার করা হয়নি।

‘একটা সময় সব ঋণে ৯ শতাংশ সুদ হার বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ভুল ভাবা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেটা বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। ঋণ পুনঃতফসিলে যে নতুন প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে সেটাও কাজ করবে বলে আমরা আশাবাদী।’

অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না। ব্যাংকগুলোর এ অবস্থা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঋণে বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার পরও ব্যাংকগুলো অনেক মুনাফা করেছে। আশঙ্কা করার কিছু নেই।’

ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে; আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসব ঋণ পাঁচ থেকে আট বছরে শোধ করা যাবে। আগে ঋণ শোধ করতে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেয়া হতো। আবার নতুন করে ঋণও পাওয়া যাবে।

তবে নতুন নীতিমালার মাধ্যমে জাল-জালিয়াতি ও অনিয়ম-প্রতারণার ঋণ এই সুবিধার আওতায় নিয়মিত করা যাবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

পূর্বপশ্চিম/ম

কেন্দ্রীয় ব্যাংক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close