• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ভ্যাট সুবিধা নিয়েও দাম বাড়াতে চাইছে আমদানিকারক-মিলাররা

প্রকাশ:  ০১ মে ২০২২, ১২:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীসহ সারা দেশে এখন সয়াবিন ও পাম তেলের টান। ক্রেতারা তেলের খোঁজে ঘুরছেন বাজারে কিংবা অলিগলি বা পাড়ামহল্লার মুদি দোকানে, কিন্তু সেসব দোকানে মিলছে না কোনো তেল।

১০ দোকান ঘুরে কোনো একটিতে পাওয়া গেলেও সেখানে মিলছে শুধু ৫ লিটারের বোতল। সেটিও কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের (৭৬০ টাকা) চেয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। সরবরাহ তলানিতে নেমেছে এক-দুই লিটারের বোতলজাত তেলের।

খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের সরবরাহ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। এরপরও যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তাও লিটারপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রায় বিক্রেতাদের বাগ্‌বিতণ্ডা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ মুদি দোকানি এখন দোকানে তেলই তুলছেন না।

মিলারদের দাবি, লিটারপ্রতি ৫০ টাকা লোকসান দিয়ে তারা আর ব্যবসা করতে চান না। সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে বাড়াতে হবে তেলের দাম। তার আগ পর্যন্ত ঘাটতি দূর হবে না।

রমজানের আগে সরকারের সঙ্গে বৈঠকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত বাজারে ভোজ্যতেলের নির্ধারিত দাম মেনে চলা এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মিলাররা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথা রাখেননি তারা। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।

ভোজ্যতেলের মাত্রাতিরিক্ত দাম এবং ঘাটতি পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এখন ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতিতে দেশ।

দেশে সয়াবিন ও পাম তেলসহ সব ধরনের ভোজ্যতেলের দৈনিক সরবরাহ দরকার প্রায় ৭ হাজার টন, কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানি কারখানা পর্যায় থেকে সরবরাহ দিচ্ছে দৈনিক ৩ থেকে ৪ হাজার টনের মতো।

এ মুহূর্তে দেশে ভোজ্যতেলের কোনো ঘাটতি নেই; বরং সয়াবিন ও পাম তেল চাহিদার চেয়ে বেশি মজুত রয়েছে। মজুত তেল আছে আমদানিকারক ও পরিশোধন কোম্পানিগুলোর গুদাম, কারখানায় এবং তাদের পরিবেশকদের হাতে।

বন্দরেও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে সয়াবিন ও পাম তেল। এর বাইরে বন্দরে ভেড়ার অপেক্ষায় সমুদ্রপথে রয়েছে আরও কয়েকটি তেলবাহী জাহাজ।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানি হয়েছে, তা দিয়ে কমপক্ষে আরও দুই মাস চলার কথা। অপরদিকে বিশ্ববাজার থেকে বর্তমানে যে তেল আমদানি হবে, তা দেশে আসতে আরও দুই মাস লাগার কথা। আবার তা দেশে আসার পর কারখানায় পরিশোধিত হয়ে বাজার পর্যায়ে সরবরাহ হতে আরও দেড়-দুই মাস লেগে যাবে।

ক্রেতাদের অভিযাগ, দেশে মজুত তেলের দাম সরবরাহ পর্যায়ে এখনই বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা হিসেবে মিলাররা সরবরাহ চেইনেই পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি অনুবিভাগ) এ কে এম আহাদ আলী বলেন, ‘এ মুহূর্তে দেশে কোনোভাবেই ভোজ্যতেলের সরবরাহে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। কেন এমনটি হচ্ছে, আমরা নানাভাবে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছি। ঈদের পর ভোজ্যতেলের দাম পুনর্নির্ধারণী বৈঠক রয়েছে। আমরা ওই বৈঠকেই এসবের জবাব চাইব।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভোজ্যতেলের বিশ্ববাজার খুব অস্থিতিশীল অবস্থায় যাচ্ছে। প্রতিদিনই সেখানে দাম বাড়ছে। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়া তাদের পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। বিকল্প বাজার থেকে আমদানির পথ তৈরি না করা পর্যন্ত আমরা এখনই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপে যেতে পারছি না।

‘কারণ তেলের আমদানিকারক ও পরিশোধন কোম্পানি দেশে খুব সীমিত। এদের বেশি চাপাচাপি করতে গেলে আমদানি বন্ধ করে দিলে বাজারে তখন আরও খারাপ অবস্থা তৈরি হতে পারে।’

পূর্ব পশ্চিম/জেআর

তেল
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close