• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ভাইরাস: যে গল্প আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে

প্রকাশ:  ১২ আগস্ট ২০২৩, ১২:৪৯
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিনোদন শিল্পে যেন এক নতুন জোয়ার এসেছে। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে ভিন্নধর্মী সব গল্পে নির্মাণ হচ্ছে নাটক, সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজ। আর এক্ষেত্রে অন্য সব মাধ্যমের চেয়ে ওটিটি (ওভার দ্য টপ স্ট্রিমিং) প্ল্যাটফের্ম যে একটু বেশিই এগিয়ে, সেটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এই প্ল্যাটফর্মে গত দুই তিন বছরে নির্মিত হয়েছে অনবদ্য কিছু ওয়েব সিরিজ, যা সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এবার সেই তালিকায় নিঃসন্দেহে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরেকটি নাম, আর সেই নামটি হলো “ভাইরাস”।

সম্প্রতি দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি’তে মুক্তি পেয়েছে অনম বিশ্বাস পরিচালিত ওয়েব সিরিজ “ভাইরাস”। সিরিজটির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন অনম বিশ্বাস এবং আশরাফুল আলম শাওন।

অনম বিশ্বাস এর আগে “দেবী” ও “দুই দিনের দুনিয়া”তে তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। তাই ভাইরাস নিয়ে দর্শকদের আগ্রহের পারদ একটু বেশিই ছিল। ভাইরাস মুক্তির আগে অনম বিশ্বাস বলেছিলেন, সিরিজটিতে তিনি ডিজিটাল এই সময়ের মানুষদের জন্য এমন এক গল্প বলতে চেয়েছেন; যা তাদের একটু হলেও ভাবায়। বাস্তবে হলোও তাই, “ভাইরাস” সত্যিই দর্শকদের মস্তিষ্কে ভাবনার এক নতুন জায়গা তৈরি করেছে।

সিরিজটিতে বাস্তবতা এবং কল্পনার মিশেলে সমাজের বর্তমান পরিস্থিতিই যেন তুলে ধরেছেন অনম বিশ্বাস । যেখানে মানুষ প্রতিদিনই হয়ে পড়ছে আত্মকেন্দ্রিক, চোখের সামনে অহরহ অন্যায় দেখেও কেউ “রা” শব্দটি করছে না। হুজুগের তালে গা ভাসানোর পাশাপাশি ধীরে ধীরে ভেজালের আসক্তিতে ডুবে যাওয়া এক পরম বাস্তবতা রুপকের ছলে তুলে ধরেছেন গুণী এই নির্মাতা।

সিরিজটিতে “ভেজাল”, “আমার কী?”, “হ হ ঠিক্ ঠিক্”, “Lie কে লাই”, “V ভাইরাস” নামে পাঁচটি পর্ব রয়েছে। প্রতিটি পর্বের সঙ্গে আরেকটি পর্বের গাঁথুনি দর্শকদের একটি মুহূর্তের জন্য গল্পের বাইরে যেতে দেবে না।

গল্পের শুরু অদ্ভুত এক ভাইরাসে আক্রান্ত আফজালকে দিয়ে। ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে কবিরাজের খোঁজে থাকা আফজালের সঙ্গে দেখা হয় মাঝি নিরঞ্জনের। ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কারণ বলতে গিয়ে নিরঞ্জনকে পাতালিয়া নামের এক অদ্ভুত গ্রামের গল্প শোনায় আফজাল। সেই গ্রামের শিশু, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ সবাই এক ফরমালিনে আসক্ত। আর তাদের এই আসক্তি এতোটাই প্রকট যে ফরমালিনের স্বাদ পেতে তারা ভয়ংকর এক অঘটন ঘটিয়ে বসে। সেই ঘটনাকে চাপা দিতে দৃশ্যপটে আসেন মি. গ্রিন নামে এক সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার। মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করার এক নির্মম বাস্তবতা ওঠে আসে সেখানে।

একপযার্য়ে নিরঞ্জনও বলেন তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা। নিরঞ্জন এমন এক মহল্লার গল্প শোনায় যেখানে স্বার্থপরতা আর আত্মেকেন্দ্রিকতায় ভোগা প্রতিটা মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে অন্যায়ের প্রতিবাদ না করার এক অলিখিত নিয়মে।

আফজাল, নিরঞ্জন এবং তার গ্রামের মানুষ তাদের প্রতিবাদহীনতার শাস্তি পেয়েছেন। তবে নিরঞ্জন সেই ভয়ংকর অভিশাপ থেকে কীভাবে মুক্তি পেলেন, তা বলতে গিয়ে তুলে ধরেন এক অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন মেয়েশিশুর গল্প। সব শুনে আফজালও চায় প্রায়শ্চিত করতে, আর সেজন্য শহরে ফিরে অপহরণ করে মি. গ্রিনকে। সব মিলিয়ে প্রতিটি পর্বে টানটান উত্তেজনা।

অনবদ্য গল্পের সঙ্গে নান্দনিক উপস্থাপন দর্শকদের মনে এমন ভাবনার জায়গা তৈরি করে যাবে যে, ভাইরাস শুধু মানুষের শরীরে নয়, মনেও সংক্রমন ঘটায়। বিবেচনা বোধ আর শুভবুদ্ধির বিলুপ্তির এক অশনিসংকেতেরও গল্প “ভাইরাস”। সবমিলিয়ে গল্প এবং চিত্রনাট্যের জন্য দশে দশ পাবেন অনম-শাওন জুটি।

গল্পের প্রাসঙ্গিক লোকেশনও মুগ্ধ করবে দর্শকদের। সেই সঙ্গে প্রতিটি চরিত্রের বাস্তব উপস্থাপন সিরিজটির এক বড় প্রাপ্তি। ছোটপর্দার বড় তারকা শ্যামল মাওলা নিজেকে একজন ভার্সেটাইল অভিনেতা হিসেবে এর আগেই প্রমাণ করেছেন। তিনি যে একজন “মেথড-অ্যাক্টর” আফজাল চরিত্রে সেটিই আরেকবার দেখিয়ে দিয়েছেন। সমানতালে অভিনয় করেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা তারিক আনাম খানের সঙ্গে। নিরঞ্জন চরিত্রের মাধ্যমে তারিক আনাম খানও দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি কেন দেশের সর্বকালের সেরা অভিনেতাদের কাতারে।

সেই সঙ্গে হাবিব চরিত্রে বরাবরের মতোই নিজেকে দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন শরীফ সিরাজ। মি. গ্রিন চরিত্রে রাশেদ মামুন অপু যেন একাবারেই মিলিয়ে গিয়েছেন।

গোলাম ফরিদা ছন্দা, ইকবাল হোসাইন,রেজওয়ান পারভেজ, তন্ময় ঘোষ,মেঘলা টাপুর,সহ সকলেই যার যার চরিত্রকে দারুণভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছেন। তবে সিরিজটিতে পরিচিত অভিনেতাদের পাশাপাশি দারুণভাবে দর্শকদের মনোযোগ কাড়তে বাধ্য করেছে পাতালিয়া গ্রামাবসী চরিত্রে অভিনয় করা প্রত্যেক শিল্পী। ডায়লগ এবং খুব বেশি স্ক্রিনটাইম ছাড়াও যে দুর্দান্তভাবে নিজেদের দক্ষতা ফুটিয়ে তোলা যায়, সেটাই যেন দেখিয়েছেন তারা। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক মানুষের ভিড়ে প্রত্যেকের শিহরণ জাগানো অভ্যিবক্তি যে কাউকেই মুগ্ধ হতে বাধ্য করবে। যতদূর জানা গেছে, এইসব চরিত্রের একটা বড় অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা ছাড়াও গ্রামবাসী চরিত্রে অভিনয় করা প্রত্যেকে টুপিখোলা অভিবাদনের যোগ্য।

সর্বোপরি অসম্ভব ভালো লাগার একটি গল্প উপহার দেওয়ার জন্য অনম বিশ্বাস, আশরাফুল আলম শাওন, সিরিজের প্রযোজক রেদোয়ান রনি এবং পুরো চরকি টিম প্রশংসায় নত হতে বাধ্য দর্শকদের করেছে।

বিনোদন,সিরিজ,ওটিটি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close