• রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

এগারো বছরেও উদঘাটন হয়নি সাগর-রুনি হত্যার রহস্য

প্রকাশ:  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ১১ বছর শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি)। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে এখনো মামলাটি তদন্তই শেষ হয়নি। যা একটি মামলার প্রাথমিক ধাপ! সেই মামলার বিচার শুরু কবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বাদীর।

১১ বছর আগে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২ বাড়ির ৫ তলার এ-৪ ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি। খুনের পর তৎকালীণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরের দিন রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা।

১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। তবে এর দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় র‌্যাবকে। সেই থেকে ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এদিকে, সাগর-রুনি দম্পতি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে সাংবাদিকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালীন নোমানী, মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ, বার্তা সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ প্রমূখ।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, গত এক বছরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে চারবার দেখা করেছি। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলো সুরাহা করতে বলেছি। তিনি বারবার কথা দিয়েছেন। আমরা আসার পরই তিনি সাংবাদিকদের দাবি ভুলে গেছেন। এটা ঠিক না। আপনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) ভাইবেন না, সাংবাদিকদের হাত থেকে রেহাই পাবেন। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য আপনাকে ঘেরাও করা হবে।

নিহত বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে ওমর ফারুক বলেন, সাগর-রুনিসহ আরো যারা হত্যার শিকার হয়েছেন, তাদের সবার হত্যার বিচার চেয়েছি। আপনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলতে পারবেন, একটা হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? কেন একটা বিচারও করছেন না? আপনাদের আমলে সাংবাদিকেরা সবচেয়ে বেশি হত্যা, নির্যাতন, বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।

মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ১১ বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই, আর কবে হবে। কোনো অগ্রগতি হবে না। আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু এতোটুকু বলতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে কাজ করছেন না। আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ প্রতিবছর তারা নিয়ম মাফিক বলে আসছেন, দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। বাস্তবে কিছুই নয়।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতও যেখানে বারবার সময় দিচ্ছেন, সেখানে আমাদের আর কী বলার আছে! তবে, জট খোলার চেষ্টা না করলে জট খুলবে না, এটাই স্বাভাবিক।

এ ব্যাপারে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, সাগর-রুনি হত্যার বিচার যে পাইনি তা নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এ বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বিচার দাবি জানিয়ে যাবে। বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপি দিয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নেমে তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ খোঁজেন। এরপর আসামি শনাক্তকরণের চেষ্টা করেন, কোনো ধরনের ক্লু পেতে জব্দকৃত আলামত পরীক্ষা ও হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তির খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এসব একটি মামলা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম, ১১ বছর তদন্তের পরও সাগর-রুনি হত্যা মামলা ঠিক এরূপ প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দকৃত আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছে তদন্ত সংস্থা।

র‌্যাব মামলার তদন্তে নেমে গ্রেফতারকৃত ৮ আসামি, নিহত দুইজন এবং স্বজন মিলে ২১ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) পরীক্ষার রিপোর্টগুলো হাতে পেয়েছে র‌্যাব। সে রিপোর্ট ও অপরাধচিত্রের প্রতিবেদন (ক্রাইম সিন রিপোর্ট) পর্যালোচনায় দুইজনের ডিএনএর পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পাওয়া গেছে। তবে এসব পরীক্ষায় সন্দেহভাজন খুনি শনাক্ত হয়নি। এই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ৮ জনের মধ্যে পাঁচজন- রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণ মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তার দেখানো হয় পারিবারিক বন্ধু তানভীর এবং বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও হুমায়ূন কবীরকে। এদের সবাই হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।

হত্যা মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মামলাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল মামলা। এই মামলা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি। এর জন্য বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়েছি। বিদেশে ডিএনএ টেস্টের সহযোগিতা নিয়েছি। এখন পর্যন্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করছি। তদন্তে একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন দোষী না হয়। প্রকৃত দোষীরা শনাক্ত করার জন্য একটু সময় লাগছে। আমাদের যিনি তদন্ত কর্মকর্তা তিনি অত্যন্ত সুষ্ঠভাবে তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

রহস্য,সাগর-রুনি হত্যা,উদঘাটন,সাংবাদিক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close