• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

রাশিয়া কীভাবে আফ্রিকায় সাবেক উপনিবেশগুলি থেকে ফ্রান্সকে হটিয়ে দিচ্ছে

প্রকাশ:  ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৩৩
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

কর্নেল আসিমি গোইটা যখন ২০২১ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মালির ক্ষমতা দখল করেন, তখন তার সমর্থকদের হাতে দেখা গিয়েছিলো রাশিয়ার পতাকা। এর এক বছর পর ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ট্রাওরে বুরকিনা ফাসোতে একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তার অনুসারীদের হাতে কোন দেশের পতাকা ছিলো? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন: রুশ পতাকা। খবর: বিবিসি বাংলা।

সাদা, নীল আর লাল রঙের রুশ পতাকা এখন সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে খুবই চোখে পড়ে, এবং চাদ কিংবা আইভরি কোস্টের বিক্ষোভেও এ পতাকা দেখা গেছে।

রাশিয়া এখন আফ্রিকার দিকে নজর দিয়েছে এবং তার ভাড়াটে সৈন্যদের জন্য উর্বর ভূমি খুঁজে পেয়েছে। আফ্রিকার প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের শক্তি সেখানে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

ওয়াগনার গ্রুপ, রুশ সৈন্যদের সাথে ইউক্রেন যুদ্ধে উপস্থিতির জন্য যারা মূলত পরিচিত, তারা বেশ জোরেশোরেই মালি এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ঢুকে পড়েছে, বুরকিনা ফাসোতে তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে এবং মোজাম্বিক বা মাদাগাস্কারের মতো দেশেও তাদের কিছু কার্যকলাপ রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

এর শাখা-প্রশাখা অবশ্য শুধু ফরাসি-ভাষী আফ্রিকার মধ্যেই সীমিত না। উত্তরে লিবিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ওয়াগনার গ্রুপের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অঞ্চলের কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এরা সেখানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা উসকে দিতে সহায়তা করছে এবং, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে, নিজেরাই সরাসরি এসব কাজে জড়িয়ে পড়েছে।

এদের কার্যকলাপে প্রায়ই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটছে। জাতিসংঘের মতো নানা প্রতিষ্ঠান এদের কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছে।

‘রাশিয়া একটি পরিপূর্ণ প্যাকেজ উপহার দেয়: তারা যা অফার করে তার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা পরিষেবা, রাজনৈতিক পরামর্শ, মিডিয়া সহায়তা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচার এবং অস্ত্র বিক্রি,’ ব্যাখ্যা করছিলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর সিনিয়র গবেষক পল স্ট্রোনস্কি।

এর বিনিময়ে ওয়াগনার গ্রুপ রাজনৈতিক প্রভাব অর্জন করে এবং এসব আফ্রিকান দেশের সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ করার অধিকার পায়।

তবে, রাশিয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সীমানা সেখানেই শেষ না।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশ্বাস করে যে মস্কো ‘আফ্রিকাতে পশ্চিমা-বিরোধী রাষ্ট্রগুলির একটি কনফেডারেশন’ তৈরি করতে চাইছে, এবং নিরাপত্তার ফাঁক-ফোকরের ভেতর দিয়ে স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেসব দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।

প্রভাবশালী সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট বেশ কিছু গোপন সরকারি দলিল দেখতে পেয়েছে যেখানে এই দাবি করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের জবাব পেতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রধান কূটনীতিক সের্গেই লাভরভ বেশ ক’টি আফ্রিকান দেশ সফরের পর তাদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে, ‘ওয়াশিংটন, লন্ডন এবং ব্রাসেলসের রুশ-বিরোধী মহোৎসব সত্ত্বেও আমরা প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করছি এবং, ব্যাপক অর্থে, আন্তর্জাতিক সংখ্যাগরিষ্ঠের পাশে রয়েছি’।

বিয়েট্রিস মেসা হলেন মরক্কোর রাবাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে পূবে হর্ন অফ আফ্রিকা পর্যন্ত সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা, যাকে বলা হয় সাহেল, তার ওপর তিনি একজন বিশেষজ্ঞ।

‘সাহেল এখন নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার এক পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে, শীতল যুদ্ধের এক নতুন মঞ্চে পরিণত হয়েছে,’ বলছেন তিনি।

এই অঞ্চলটি আফ্রিকার অন্যতম এক অস্থিতিশীল এলাকা, বিভিন্ন সশস্ত্র জিহাদি গোষ্ঠী, বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং অপরাধী গোষ্ঠীর হাতে এলাকাটি বিপর্যস্ত এবং অভ্যুত্থান, দুর্নীতি ও কুশাসনের আবর্তে এই অঞ্চলটি আটকা পড়ে আছে।

ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য

উনিশশো ষাটের দশকে স্বাধীনতার সময় এরা উত্তরাধিকার সূত্রে যেসব প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক সীমানা পেয়েছে সেগুলিকে শাসন করা কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর ফলে সেখানে অসংখ্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষও বেড়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকে প্রাক্তন ফরাসি-ভাষী উপনিবেশ, যাকে ফ্র্যাঙ্কোফোন আফ্রিকা বলা হয়, তার সাথে ফ্রান্স সম্পর্ক এবং প্রভাব বজায় রাখতে চেয়েছিল। তাদের যোগাযোগ ঐতিহ্যগতভাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং মানব উন্নয়ন সংস্থার বিষয়গুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। পাশাপাশি, একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়িক উপস্থিতিও ফ্রান্স বজায় রেখেছিলো।

দু’হাজার বারো সালের শেষের দিক থেকে এ পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে।

সে বছর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলি উত্তর মালির নিয়ন্ত্রণ দখল করে এবং বামাকোর সরকার এই ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক শক্তি-রক্ষী বাহিনীর জন্য জাতিসংঘের কাছে সাহায্যের অনুরোধ করে। ফ্রান্স এই আহ্বানে সাড়া দেয় এবং জাতিসংঘের সমর্থন নিয়ে ফ্রান্স ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ‘অপারেশন সার্ভাল’ শুরু করে।

এক বছর পর এই অভিযান ‘অপারেশন বারখেন’ নামে আরো সম্প্রসারিত হয় এবং সাহেল অঞ্চলে তৎপরতার ম্যান্ডেট পায়। সে সময় সেখানে ৫,১০০ জন ফরাসি সৈন্য মোতায়েন করা হয়।

সেই অভিযান অবশ্য ব্যর্থ হয়েছে।

জিহাদি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্যে ‘ফ্রান্স সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির একটি সেক্টর, তুয়ারেগ ও আরব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে মিত্রতা করেছিলো,’ জানালেন মিজ মেসা, যিনি সাহেল অঞ্চলের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর একটি বই লিখেছেন।

এর ফলে, মালির উত্তরাঞ্চলে একটি ডি ফ্যাক্টো রাজ্য তৈরি হয়েছে এবং দেশের মধ্যাঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে বলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি। এরা বামাকোর সরকারের সমান্তরাল।

এদের কাছে মালি তার ভূখণ্ডের একটি খুব বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, ফ্রান্সের সমর্থন এবং সম্মতি নিয়েই। শুধু তাই নয়: সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিও খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে সংখ্যাতেও বেড়েছে। এই মুহূর্তে সেখানে ২০টিরও বেশি গোষ্ঠী রয়েছে, ব্যাখ্যা করছিলেন বিয়েট্রিস মেসা।

এই সামরিক ব্যর্থতা, লড়াইয়ের কঠোরতা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলির ধ্বংস জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

ফ্রান্সের নৃশংস ঔপনিবেশিক অতীতের জন্য স্থানীয় জনগণের মধ্যে আগেই অসন্তোষ ছিলো এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের মনোভাবের সাথে যুক্ত হয়েছে ফরাসীদের প্রতি এই বিরাগ।

গবেষক পল স্ট্রোনস্কি উল্লেখ করছেন, ২০২০ ও ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর ঐ এলাকার মানুষ ২০২২ সালের আগস্টে ফ্রান্সকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিলো।

ঐ ঘটনার পর প্যারিস সরকার তার নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রতিবেশী দেশ নিজেরে সরিয়ে নেয়। তাদের প্রতি রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বাজুমের সমর্থন রয়েছে, কিন্তু নিজেরের জনসংখ্যার সমর্থন তাদের নেই। কারণ জনগণের আশঙ্কা, তাদের দেশেও মালির মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।

অসন্তোষের এই সুযোগে রাশিয়া তার ভাড়াটে সৈন্যদের ঐ এলাকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে।

‘রাশিয়া তার নিরাপত্তা তৎপরতার মাধ্যমে আফ্রিকার মূল খেলোয়াড়দের হটিয়ে দেয়ার একটি উপায় খুঁজে বের করেছে,’ বলছিলেন বিয়েট্রিস মেসা৷

বামাকোর সরকার এজন্য সঙ্গী পরিবর্তন করেছে এবং আশা করছে যে মস্কো তাকে সেই স্থিতিশীলতা দিতে পারবে যা দিতে ফ্রান্স ব্যর্থ হয়েছে।

মালিতে ওয়াগনার গ্রুপের সৈন্যরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে এবং যদিও দেশটির কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কথাটা স্বীকার করেনি।

মালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুলায়ে ডিওপ স্পষ্ট করে বলেছেন, কোন ধরনের কৈফিয়ত দেয়ার দরকার তদের নেই: ‘মালির অনুরোধে রাশিয়া এখানে এসেছে এবং আমাদের কৌশলগত প্রয়োজনে কার্যকরভাবে সাড়া দিয়েছে,’ গত বছর তিনি বলেছেন।

একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হয়েছে বুরকিনা ফাসোতে, যেখানে ফ্রান্সের ৪০০ জন স্পেশাল ফোর্সের সদস্য বুরকিনার সেনাবাহিনীকে ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করছিলো।

কিন্তু বেশ ক’বছর লড়াইয়ের পর ওয়াগাডুগুর সরকার এখন কোনমতে ৬০% অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। সে দেশের জনগণের মধ্যে ফরাসি-বিরোধী মনোভাব এতোটাই গভীর যে কর্তৃপক্ষ প্যারিস সরকারকে বলেছিলো চলতি বছরের শুরুতে তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে।

ওয়াগনার গ্রুপ সে দেশে তৎপর, ওয়াগাড়ুগুর সরকারও একথা অস্বীকার করে। তবে তারা নিশ্চিত করেছে যে, মস্কোর সাথে সহযোগিতার বিষয়টি রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা অস্ত্রের ওপর সৈন্যদের প্রশিক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

কিন্তু মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সন্দেহ, ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের গ্রুপটি বুরকিনা সরকারের সাথে তার সৈন্য মোতায়েন করার জন্য আলাপ-আলোচনা করছে।

তবে গানার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো বিশ্বাস করে যে, ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে সৈন্যদের বুটের ছাপ ইতোমধ্যেই বুরকিনার মাটিতে পড়েছে।

অস্থিতিশীলতার অভিযান

বিভিন্ন আফ্রিকান, ইউরোপীয় এবং আমেরিকান সূত্র অনুযায়ী, ওয়াগনার গ্রুপের সৈন্যরা চাদেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাহেল অঞ্চলের কেন্দ্রে এই দেশের অবস্থান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, লিবিয়া এবং সুদান, যেখানে ওয়াগনারের ভাড়াটে সৈন্যরা তৎপর, তার সাথে চাদের রয়েছে তুলনামূলকভাবে খোলা সীমান্ত।

পল স্ট্রোনস্কি মনে করছেন, ওয়াগনার গ্রুপ সম্ভবত চাদের স্থানীয় বিদ্রোহীদের রসদ-পত্র এবং অপারেশনাল সহায়তা প্রদান করছে। এই বিদ্রোহীরা মহামাত ইদ্রিস ডেবি ইটনোর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা উৎখাত করতে চাইছে।

সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকেও এদের জোরালে উপস্থিতি রয়েছে। কার্নেগি সেন্টারের এই গবেষকের মতে, বহু বছর ধরে হস্তক্ষেপের পরও ‘স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে বঙ্গি সরকারকে সাহায্য করতে ব্যর্থ’ হয়ে ফ্রান্স ২০১৭ সালে সেখান থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করে।

সেই থেকে ওয়াগনার গ্রুপ ফস্টিন-আর্চেঞ্জ টোয়াডেরার সরকারকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং ২০১৩ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু করা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির আগ্রাসন বন্ধ করতে সহায়তা করেছে।

ওয়াগনার ‘সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে রাশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্সি হিসেবে কাজ করছে, সেখানে নিরাপত্তা প্রদান করছে, সেখানে রুশ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারকে সহজতর করছে এবং মূল্যবান খনিজ সম্পদ হাত করছে,’ বলছিলেন স্ট্রোনস্কি।

যদিও এই স্থিতিশীলতা আপেক্ষিক, এই গবেষক ব্যাখ্যা করছেন: ‘তারা অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিষেবা প্রদান করছে এবং তারা সংঘাতের গতিপথ পরিবর্তন করতে সক্ষম, কারণ তারা কোনো একটি পক্ষকে বেছে নেয়। ফরাসিদের সাথে তুলনা করলে, তারা নিজেদেরকে এমনভাবে তুলে ধরে যারা স্থিতিশীলতা আনতে সক্ষম।’

বিশ্লেষক বিয়েট্রিস মেসার মতে, ওয়াগনার গ্রুপের সৈন্যরা ‘সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারিতা’ নিয়ে কাজ করে, এবং প্রায়ই তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে থাকে।

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মালির সেনাবাহিনী এবং ওয়াগনারের ভাড়াটে সৈন্যদের সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের নিন্দা করা হয়েছে, যেখানে বহু মানুষ ‘ভয়াবহ মৃত্যুদণ্ড, গণকবর, নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা এবং লুটপাট, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং জোরপূর্বক গুম’ হয়েছে।

‘বিশ্বাসযোগ্য কিছু রিপোর্টে আমরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন যেখানে ২০২২ সালে মার্চের শেষের দিকে বেশ কিছু দিন ধরে মালিয়ান সশস্ত্র বাহিনী, ওয়াগনার গ্রুপের সদস্য বলে বিশ্বাস করা হয় এমন সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে, মধ্য মালির একটি শহর মৌরাতে আটক কয়েকশ লোকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে,’ জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে বলেছে।

সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, লিবিয়া এবং সুদানের মতো অন্যান্য দেশেও, যেখানে তাদের উপস্থিতি রয়েছে, সেখানে নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

‘এই দেশগুলি এধরনের আধাসামরিক গোষ্ঠীগুলিকে সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে পাঠাতে আগ্রহী কারণ মানবাধিকার বা অন্য কোনো কনভেনশনের প্রতি এসব গোষ্ঠীর কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই। অন্যদিকে, এসব সাহেলো-সাহারান রাষ্ট্রগুলো নিজেরাও এগুলো মানে না। ফলে, তারা সব সময়ই মিলিশিয়া ব্যবহার করতে পছন্দ করে,’ যুক্তি দিয়ে বলেন গবেষক বিয়েট্রিস মেসা।

ফ্র্যাঙ্কোফোন আফ্রিকার বাইরে

লিবিয়ায় ওয়াগনারের ভাড়াটে সৈন্যরা প্রথম উপস্থিত হয় ২০১৯ সালে, সেখানে তারা বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতারকে ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকারের ওপর আক্রমণ চালাতে সহায়তা করে। ২০২১ সালে এক তদন্তে দেশটিতে ওয়াগনার গোষ্ঠীর হাতে নির্যাতনের চিত্র প্রকাশ করা হয়েছিলো, যে দেশে তারাই ছিলো অস্থিতিশীলতার মূল উৎস।

সুদানে বর্তমানে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেলের বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির ২০১৭ সালে রাশিয়ার সাথে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলো লোহিত সাগরে পোর্ট সুদানে একটি নৌঘাঁটি নির্মাণ, পাশাপাশি সুরা এম ইনভেস্ট কোম্পানির সাথে সোনার খনির ব্যবসা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এই কোম্পানির পেছনে রয়েছে ওয়াগনার গ্রুপ।

সিএনএন টেলিভিশনের এক তদন্ত অনুযায়ী, এই সোনা সুদানী কাস্টমসে নিবন্ধিত না করেই স্থলপথ দিয়ে সরাসরি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

যদিও সুদান সে দেশে ভাড়াটে সৈন্যদের উপস্থিতি স্বীকার করে না, কিন্তু তখন থেকেই ওয়াগনার গ্রুপের সাথে সম্পর্কিত টেলিগ্রাম মেসেজিং চ্যানেলগুলিতে প্রকাশিত বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, ওয়াগনার সৈন্যরা সুদানী সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, বা বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে সাহায্য করছে। তবে বিবিসি এসব ছবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

সুদান ট্রিবিউনের মতো স্থানীয় মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, সে দেশে ওয়াগনারের প্রায় ৫০০ লোক কাজ করছে - প্রধানত দক্ষিণ-পশ্চিমে, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের সীমান্তের কাছাকাছি জায়গায়।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

ফ্রান্স,আফ্রিকা,রাশিয়া
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close