• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

হজের শেষ দিন, শয়তানকে পাথর মারছেন হাজিরা

প্রকাশ:  ২৮ জুন ২০২৩, ২১:১৪
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতায় বুধবার (২৮ জুন) ভোর থেকে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করছেন হাজিরা।

মঙ্গলবার সারাদিন আরাফাতের ময়দানে থাকার পর রাতে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত থেকেছেন তারা। এরপর মক্কা নগরীর মিনায় আসেন হাজিরা।

বুধবার ভোর থেকে শয়তানের প্রতীকী তিনটি স্তম্ভ লক্ষ্য করে ছোট ছোট নুড়ি পাথর নিক্ষেপ করা শুরু করেন তারা।

তবে সৌদির তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হাজীরা। দেশটিতে ৪৮ ডিগ্রি (১১৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট) তাপমাত্রা সহ্য করছেন তারা।

২৬ বছর বয়সী তিউনিসিয়ান ফারাহ বলেন, “হজ হয় চন্দ্র ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে। এবারে এটি তীব্র গরমের সময়ে পড়েছে। শীতকালে না হওয়া পর্যন্ত আমি আর হজ করার কথা ভাবব না।”

তিনি বলেন, “আমার শরীর গলে যাচ্ছে।”

সৌদি আরবের পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, এ বছর প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ মুসলিম হজ পালন করেছেন। যার বেশিরভাগই বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে এসেছেন।

যদিও দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় হজ শুরুর আগে জানিয়েছিল, এবার ২৫ লাখের বেশি হাজির সমাগম হবে। তবে যে ধারণা করা হয়েছিল, সেটির তুলনায় সংখ্যাটি অনেকটাই কম।

তেল নির্ভর অর্থনীতির দেশ সৌদি আরবের অর্থ উপার্জনের অন্যতম বড় আয়ের উৎস হজ। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি তেল ছাড়াও অন্য খাতে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আনতে পর্যটনে বিনিয়োগ করছে।

এদিকে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে শুরু হয় মুসলিমদের দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে আজ ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, সামর্থবানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানি করছেন।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার হাজিরা তাদের মাথা মুণ্ডন বা চুল কেটে ফেলবেন। এরপর তারা ফিরে যাবেন মক্কার কাবা শরীফে। সেখানে কাবা প্রদক্ষিণ শেষে আবারও শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন। এরপর আরেকবার কাবা প্রদক্ষিণ করবেন। যার মাধ্যমে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

হাজিদের সুরক্ষায় বহুতল সেতু

হজের শেষ পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতা মিনার বড় জামারাকে (বড় শয়তান) লক্ষ্য করে কঙ্কর মারতে যাওয়ার পথে প্রতিবছরই পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

২০১৫ সালে পদদলিত হয়ে ২,৩০০ হাজির মৃত্যু হয়েছিল, যেটিকে সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ হজ বিপর্যয় বলা হয়ে থাকে। ২০০৬ সালে মৃত্যু হয়েছিল ৩৬৩ জনের।

১৯৯০ সালে মক্কায় পদদলিত হয়ে ১,৪২৬ জন হাজির মৃত্যু হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে মিনায় (বড় শয়তান) লক্ষ্য করে কঙ্কর ছুড়ে মারার সময় পদদলিত হয়ে ১৮০ জন হাজির মৃত্যু হয়। ২০০১ সালে মিনায় পদদলিত হয়ে মারা যান ৩৫ জন। ২০০৬ সালে মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় দুর্ঘটনায় ৩৬০ জনের বেশি হাজির মৃত্যু হয়।

২০১৫ সালের পরে তেমন বড় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। মূলত হাজিদের চলাচলের পথ প্রশস্ত ও বহুতল সেতু নির্মাণ করায় পরিবেশ বদলেছে।

বুধবার মিনায় চলার পথে হেলিকপ্টারের টহল দেখা গেছে। এছাড়া সহস্র পুলিশ সদস্য মিনারের সড়কে নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন।

এ বছর বয়সসীমা তুলে দেওয়ায় অনেক বৃদ্ধ হজ করতে এসেছেন। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।

পৃথিবীর উষ্ণতম অঞ্চলের একটিতে গ্রীষ্মকালে বাইরে মানুষের যাতায়াত খুবই বিপদজনক। এতে ডিহাইড্রেশন ও হৃদরোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে। এমনকি গরমের কারণে সৌদি আরবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাইরে শ্রমিকদের কাজ করাও নিষিদ্ধ থাকে।

উপসাগরীয় জলবায়ু এতোটাই খারাপ অবস্থায় আছে যে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল জানায়, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের কিছু অঞ্চল বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, হিটস্ট্রোক ও অন্য অসুস্থতায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় ৩২,০০০ জনের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। বিনামূল্যে পানির বোতল সরবরাহ করা হচ্ছে।

সরাসরি সূর্যের আলোর গরম থেকে বাঁচতে অনেকেই মাথার ওপর ছাতা ধরে হাঁটছেন। কেউ কেউ জায়নামাজ ও অন্যান্য কাপড় মাথার ওপর ধরে রাখছেন।

মঙ্গলবার আরাফাত থেকে বের হওয়ার সময় ৫৬ বছর বয়সী মিশরীয় হাজি সোভি সাঈদ বলেন, “প্রচণ্ড গরম থাকলেও তিনি হজের আনুষ্ঠানিকতা পূরণ করছেন।”

তিনি বলেন, “আমি খুব ক্লান্ত। আমি খুব পানিশূন্যতা বোধ করছি।”

রবিবার ইসলামের পবিত্রতম স্থান মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে হজ শুরু হয়েছিল। রাতে তাবুতে রাত্রিযাপন ও তারপর আরাফাত পর্বতে প্রার্থনা করেন হাজিরা। যেখানে নবী মোহাম্মদ তার চূড়ান্ত খুতবা দিয়েছেন বলে বিশ্বাস করা হয়।

পবিত্র হজ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close