• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

‘পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগকে উচ্ছেদের ঘোষণা’

প্রকাশ:  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:২৮
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

ত্রুটিপূর্ণ ডিজাইনে নির্মিত ও হুমকিগ্রস্ত দাবি করে গড়াই নদীর উপর নির্মিত কুষ্টিয়া- হরিপুর শেখ রাসেল সেতু রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে নদী পাড়ের মানুষজন।

সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও নদী ভাঙন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির আয়োজনে নদী পাড়ে এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। মানববন্ধন শেষে সেতুর নিচে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নদী ভাঙন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব হাসান আলী।

এ সময় হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শম্পা মাহমুদ, জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাহাবুব আলী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অসিত সিংহ রায়, সাংস্কৃতিক কর্মী এ্যাড. লালিম হক ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মিলন মন্ডল উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচী থেকে অবিলম্বে সেতু রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে কুষ্টিয়া থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগকে উচ্ছেদের ঘোষণা দেন নদী ভাঙন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ। নদী ভাঙন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির দাবি অসম্পূর্ণ ডিজাইনে নির্মিত হওয়ায় নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে গড়াই নদীর বাম তীর ভেঙ্গে সেতুর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় হরিপুর ইউনিয়নের ২নং হাটশ হরিপুর ওয়ার্ডের প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বসতভিটাসহ গোটা জনপদের মসজিদ, মাদ্রাসা, সরকারী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাস্তা-ঘাট নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সৃষ্ট ভাঙ্গনে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সেতুর হরিপুর অংশের পশ্চিম পার্শ্বে প্রায় ২শ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাধ ভেঙ্গে শেখ রাসেল সেতুর প্রটেকশন বাধে ঢুকে পড়ে। এতে এক রাতেই সেতু সংরক্ষণে নির্মিত সিসি ওয়ার্ক বাধের প্রায় ৩০মিটার নদীতে গর্ভে তলিয়ে যায়। এদিকে ভাঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ঠেলাঠেলি শুরু করে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বলছেন, সেতুটি ঝুকিতে পড়লেও আমাদের আর কিছু করার নেই। নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি এখন দেখার দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান ব্রীজের প্রটেকটিভ এরিয়ায় ভাঙ্গন হলে সেটা দেখবেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। শুধু সেতুর সংরক্ষণ বাধ নয়, ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে গড়াই নদীর বাম তীর সংরক্ষণ বাঁধেও।

কুষ্টিয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সুত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে গড়াই নদীর ওপর নির্মিত কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতুর সংরক্ষণ বাধ নির্মাণের টেন্ডার আহবান করা হয়। ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর দুই পাড়ে সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশ পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার গ্রুপ। এর মধ্যে কুষ্টিয়া অংশে ১৯০ মিটার এবং হরিপুর অংশে ২৫০ মিটার সংরক্ষণ বাধ নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ করে হস্তান্তর করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদীর উপর কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু নির্মাণ কাজ পায় মীর আক্তার গ্রুপ লিঃ। ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজের শেষ সময় থাকলেও প্রকল্প সম্পন্ন করে ২০১৭ সালের ২৪ মার্চ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়। উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি।

সুত্রে জানা যায়, গড়াইয়ের হরিপুর অংশে নদীর তীর সংরক্ষণে ২০১৪ সালে চার গ্রুপে টেন্ডার আহ্বান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর মধ্যে ঘটনাস্থল ৮৪৫ মিটার বাধ নির্মাণে প্রকল্পের ব্যয় করা হয় প্রায় আড়াই টাকা। দরপত্রের চার গ্রুপের কার্যাদেশেই কত মিটার কাজ করতে হবে, কত টাকা ব্যয়, কি কি দিয়ে এবং কিভাবে নদীর তীর সংরক্ষণ করতে হবে, তার সবকিছুই স্পষ্টভাবে লেখা ছিল। কয়েকদিনে নদীর ওই অংশেই প্রায় ৭০০ মি: বামতীর সংরক্ষণ বাধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। টেন্ডারের ওই কার্যাদেশে কোনো শর্তই পূরণ না করে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ঠিকাদারের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা যোগসাজস করে সে সময় মোটা অংকের টাকা হরিলুট করেছে বলে দাবী স্থানীয়দের।

নদী ভাঙন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব হাসান আলী জানান, কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন গড়াই নদীর উপর নির্মিত কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু ত্রুটিপূর্ণ ডিজাইনে নির্মাণ সম্পন্ন করেছে বাস্তবায়নকারী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। ফলে সেতুর উজান থেকে পার ভেঙ্গে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটেছে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের সাথে আমরা জানতে পেরেছি অসম্পূর্ণ ডিজাইনে নির্মিত হওয়ায় এ পরিনতি হতে যাচ্ছে।

এর আগে গড়াই নদীর পার ভাঙ্গনের কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু ক্ষতিগ্রস্তসহ হুমকিগ্রস্ত এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিগণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি কুষ্টিয়া কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জবাবে কর্তৃপক্ষ ছাপ জানিয়ে দেন নদীর পাড় ভেঙ্গে সেতু ঝুকিতে পড়লেও এলজিইডি’র কিছুই করার নেই।

এবিষয়ে সম্ভাব্য হুমকির কথা জানিয়ে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি এলজিইডি কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর হতে প্রেরিত পত্রে সেতুকে নদী ভাঙ্গন থেকে ঝুঁকিমুক্ত করতে উজান এবং ভাটিতে দুইপাশে মোট ২কি:মি: পাড় রক্ষা বাধ নির্মাণের অনুরোধ করা হয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছাপ জানিয়ে দেন গড়াই নদীর বাম তীরে ভাঙ্গন আক্রান্ত ওই জোনের সেতু রক্ষার দায়িত্ব আমাদের নয়।

সদর উপজেলার ১নং হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শম্পা মাহমুদ বলেন, বিষয়টি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার কর্মকর্তাদের অবগত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোন প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ না করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান জানান, এ ব্যাপারে খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে নিদিষ্ট করে তার কাছ থেকে কোন বক্তব্যে পাওয়া যায়নি।

/পি.এস

কুষ্টিয়া,ঘোষণা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close