• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আমার আবার কিসের জন্মদিন!

প্রকাশ:  ১২ নভেম্বর ২০১৮, ১২:২৮
পীর হাবিবুর রহমান

সেই ১৯৬৩ সালের ১২নভেম্বর বেলা ১২টায় জলজোছনার শহর সুনামগন্জের বাড়িতে জন্মেছিলাম! কত বছর! কত দ্রুত গড়িয়ে গেলো! হৃদয়ে তিনটি রিং শোভা পাচ্ছে। এতো নিয়ম না মানা জীবন আমার শৈশব থেকে দূড়ন্ত কৈশোর হয়ে উচ্ছল তারুন্যের পথ পেরিয়ে এখন দেখি হঠাৎ মধ্যগগনের সূর্য পশ্চিমে ক্রমশ হেলে পড়ছে! মৃত্যুর পথে হাটছি।

তবু ছোট্ট এই জীবনের বড় সময় লেখাপড়া,ছাত্ররাজনীতি,পেশাগত জীবন,ঘরসংসার,টানাপোড়েন,উত্থান পতন,সাফল্য ব্যর্থতা, আনন্দ বেদনা মিলে কালের আয়নায় মহাকাব্যের চেয়ে কম কই? আপন মনে ভেবেছি, জেনেছি এক মুহুর্তের নাই ভরসা এ জীবনে এক মুহুর্তের আনন্দই অমূল্য সম্পদ! জীবন তাই রহস্যময় হলেও সততই মহা আনন্দের। মৃত্যু মানেই সব শেষ, আর বেচে থাকার আনন্দই নিয়ত উপভোগ আর অভিজ্ঞতা!

পরিবার আমাকে দিয়েছে মানবিক মূল্যবোধ। পরিবার সমাজ দিয়েছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা। পরিবার থেকেই পাঠ নিয়েছি গনতান্ত্রীক চেতনার, জেনেছি শৃঙ্খল ভেঙ্গেই স্বাধীনতাভোগ করতে! মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে গৌরবের কিছু নেই, মানুষকে ভালোবাসার চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু নেই তাও পরিবার থেকেই নেয়া পাঠ।

শহরের বুকচিরে বহমান সুরমা, মেঘালয়ের কোলে শুয়ে থাকা শহরের চারদিকে অথৈ জলরাশির হাওর, আসমান ভেঙ্গে নেমে আসা জোছনা, চন্দনি রাত, তারাভরা আকাশ, আমার শুকতারা, ধ্রুবতারা প্রেমিক হৃদয়ে আবেগ নির্ভর এক রোমান্টিক মানুষ হিসেবে নির্মান করেছে! প্রকৃতির কাছে কি যে জন্মের ঋন আমার!

ছেলেবেলায় কত বাছুর নিয়ে, ঘুড়ি নিয়ে, গুলতি নিয়ে বনে বাদারে ঘুরেছি, খেলেছি কত মাঠে মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট, টেবিল টেনিস, আহা তারও আগে সে কি লুকোচুরি! অবাধ্য দুপুরে পুকুরে সাতার। কত শাসন, অনুশাসন! দমিয়ে রাখতে পারলো কই? বেহিসেবি জীবনে মাথা নির্ভর চলিনি, হিসেব বুঝিনি! হৃদয় বুঝেছি, হৃদয় নির্ভর জীবনে ভালোবাসাই বুঝেছি!

যাকে বুক তাকে নয় পিঠ। যাকে ভালোবাসিনি বিরক্ত দূরে থাক ত্রিসীমানায় যাইনি! যাকে ভালোবেসেছি, আশ্রয় পেয়েছি তার কাছেই বারেবারে গেছি। কাউকে ঠকাইনি, কারো উপকার করতে না পারি ক্ষতি করতে শিখিনি! ক্ষতির পাল্লা নিজেরটাই ভারি করেছি।

সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্পেশালিটি রেখেছি, ঢালাও বাজারি সম্পর্ক করিনি, সবাইকে এক পাল্লায় রাখিনি।

আত্নমর্যাদা নিয়ে সততার জীবন কত কষ্টের, জীবনের পরতে পরতে জেনেছি, তবু হাল ছাড়িনি। লাভ লোকসানের হিসেবে যারতার কাছে নত হতেও পারিনি! যারতার সাথে চলিওনি। আত্নমর্যাদার অহংকার অহম থাকলেও কাউকে ছোট করে দেখিনি। তবে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে যেমন শিখেছি তেমনি অসৎকে অপদার্থকে যেমন মুখের উপর বলেছি, সৎ যোগ্যকে মর্যাদা দিতে কার্পন্য করিনি!

জন্মেছিলাম সে এক উত্তাল সময়ে! উজানে সাতার কেটেই কেটেছে জীবন, জানি উজানেই তার ইতি হবে।

একজীবনে কি করেছি জানিনা, তবে এটা নিশ্চিত মানুষের পাশে হৃদয় দিয়ে ছিলাম বলে মরনে অন্তত মানুষ শেষ দেখা দেখতে আসবে। স্বাধীনচেতা দৃঢ় মনোবল নিয়ে যতোটা লিখতে চেয়েছি ততোটা পারিনি। যতোটা বলতে ততোটাও নয়!

তবে দেশ ও মানুষকে ভালোবেসেছিলাম। যেমন করে ভালোবেসেছিলাম, ফুল পাখি নদী হাওর বৃক্ষ, জোছনারাত, ও বর্ষনমুখর বৃষ্টির সন্ধা তেমন করেই। আমারও অনেক বাস্তব স্বপ্নের মৃত্যু ঘটেছে চারিত্রিক কারণে। আমি অনেক কিছু বদলাতে না পারি, নিজেকে খুব বদলাইনি। বন্ধু ভাগ্য এতো ভালো যাকে তাকে বন্ধু বলতে পারিনি। সস্তা মানুষের জন্য আমার করুণা যেমন চীরকালের, তেমনি মর্যাদাবান মানুষের প্রতি অবিরাম শ্রদ্ধা।

ভালোবাসার চেয়ে বড় কোন শক্তি মানুষের আছে বলে মনে হয়না আমার। আমি ভালোবাসা যেমন দিয়েছি, তেমন পেয়েছি! এটাই আমার অহংকার। ভালোবাসার পথ ধরেই একদিন জীবনের ইতি ঘটুক।

ফিফটিতেই একবার জীবনে স্বজনদের নিয়ে জন্মদিন করেছিলাম। না হয় আমার আবার কিসের জন্মদিন! বেচে আছি এতো কিছুর পর সেটিই বড় আনন্দ ও তৃপ্তির।

কোন শাসকের কাছ থেকে আমি কোন সুবিধা নেইনি। সরকারি প্লটও নয়। দলবাজির পেশাতেও নাই, যদিও আত্নাজুড়ে জাতির মহত্তম নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার মহান আদর্শ। তিনিই আমার সকল শক্তি ও সাহসের উৎস।

আড্ডার চেয়ে প্রিয় কোন আকর্ষন আমার নেই। আর স্বাধীনভাবে লেখার চেয়ে তৃপ্তি। জন্মদিন এলে মনে হয় বাবা, মা আট ভাইবোনের সেই আনন্দমাখা বাড়ির কথা। গাছগাছালির বাড়িতে কত ফলজবৃক্ষ মায়ের হাতের! পেশাগত জীবন আমার কাছে যদিও ইবাদত তবু মাঝে মাঝে খুব আফসোস হয়, যদি ভুল করে জীবনে কুড়ি বছর হলেও পিছিনে যেতে পারতাম! আহারে, আমার ফেলে আসা মধুময় সোনালী জীবন!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

পীর হাবিবুর রহমান
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close