• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

পর্যটক বরণে প্রস্তুত সাগরকন্যা কুয়াকাটা

প্রকাশ:  ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৩৮ | আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৫৬
বরিশাল প্রতিনিধি

এবার কোরবানি ঈদে সরকারি ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সৈকতে অনেক বেশি পর্যটক সমাগম ঘটতে পারে বলে আশা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। আর এ কারণে ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেলসহ স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা তাদের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করেছেন।

পর্যটকদের ঈদ আনন্দ আরো বড়িয়ে দিতে স্থানীয় মার্কেটের রাখাইন তরুণীরা বিভিন্ন সামগ্রীর পসরা নিয়ে বসে গেছেন। সৈকতে বসার বেঞ্চ ও ছাতায় এখন নতুনত্বের ছোঁয়া।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও গঙ্গামতি, সীমাবৌদ্ধ মন্দির, মিশ্রীপাড়া বৌদ্ধবিহার, লেম্বুর চরসহ কুয়াকাটায় অন্তত ১০টি পর্যটন স্পট রয়েছে যা পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরিফ জানান, বর্ষা মৌসুমে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকলেও এবারের ছুটি বেশি থাকায় পর্যটকেদের আগমন ঘটবে। এতে বাড়তি আয় করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ ইন্সপেক্টর মো. খলিলুর রহমান জানান, বাড়তি পর্যটকদের সামাল দিতে জেলা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও নৌ পুলিশের সমন্বয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

এদিকে মামলা জটিলতায় বছরের পর বছর পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের ১১ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজ আটকে থাকায় যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল সড়কটি। কিন্তু আসন্ন ঈদ মৌসুমে পর্যটক টানতে সড়কটি সংস্কার করে চলচলের উপযোগী করছে সড়ক বিভাগ।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ২০ কোটি টাকা চুক্তি মূল্যে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাখিমারা বাজার থেকে কুয়াকাটা শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ পায় ‘দি রুপসা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’। ২০১২ সালে সড়কের কাজ শেষে হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তাদের কাজের মান যাচাই করে ১৫ কোটি টাকা বিল প্রদান করে।

তবে কাজের মান ঠিক না হওয়ায় বাকি পাঁচ কোটি টাকা আটকে দেয় কৃর্তপক্ষ। কিন্তু কাজ না করেই টাকার দাবি করে ২০১৪ সালের নভেম্বরে আদালতে মামলা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। নিম্নমানের কাজের কারণে সেই থেকে বেহাল অবস্থা সড়কটির।

সড়ক বিভাগের শ্রমিক নিজাম মৃধা জানান, দু’দিন বাদে ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে সড়কটি সংস্কার করে চলচলের উপযোগী করছেন তারা।

পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, মামলা জটিলতা শেষ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। তবে বর্তমানে সড়কটি চলাচল উপযোগী করতে কাজ চলমান রয়েছে।

পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের মোট ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে এই ১১ কিলোমিটার সড়ক ছাড়া বাকি সড়কের মান মোটামুটি ভালো। তাই এ সড়কটি পুনঃনির্মাণ করা হলে কোনো ধরনের বিড়ম্বনা ছাড়াই পর্যটকরা নির্বিঘ্নে কুয়াকাটায় যাতায়াত করতে পারবেন।

কিভাবে যাবেন কুয়াকাটা

ঢাকা থেকে সড়কপথে এর দূরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার, বরিশাল থেকে ১০৮ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি বাস এখন সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকা থেকে সরাসরি দ্রুতি পরিবহন, সাকুরা পরিবহনসহ একাধিক পরিবহনের গাড়ীতে গাবতলী কিংবা সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে কুয়াকাটায় আসতে পারবেন। আপনি এসব বাসে গেলে আপনাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ২০০ মিটার দূরে নামিয়ে দিবে। ভাড়া ৫০০-৫৫০। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা বাসে যেতে মোট সময় লাগে প্রায় ১২/১৩ ঘন্টা। খুলনা থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে সকাল ৭ টায় একটি বিআরটিসি বাস ছাড়ে। খুলনা থেকে যেতে সময় লাগে প্রায় ৭/৮ ঘন্টা। আর উত্তরবঙ্গ থেকে আসতে চাইলে সৈয়দপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত রূপসা অথবা সীমান্ত আন্তঃনগর ট্রেনে করে আসতে পারবেন। রাত্রের টেনে আসলে সকাল ৭ টার বিআরটিসি বাসে করে কুয়াকাটা যেতে পারবেন।

তবে বরিশালের পর সড়ক যোগে কুয়াকাটায় পৌঁছাতে আপনাকে লেবুখালী, কলাপাড়া, হাজীপুর ও মহিপুর ফেরী পারাপার হতে হবে। তবে যে সকল পর্যটকরা ঢাকা থেকে নৌ পথে কুয়াকাটায় আসতে চান, তারা ২ টি ফেরীর দূর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে পারেন। ঢাকা সদরঘাট থেকে বিলাস বহুল ডাবল ডেকার এম.ভি পারাবত, এম.ভি সৈকত, এম.ভি সুন্দরবন, এম.ভি সম্পদ, এম.ভি প্রিন্স অব বরিশাল, এম.ভি পাতারহাট, এম.ভি উপকূল লঞ্চের কেবীনে উঠে সকালের মধ্যে পটুয়াখালী কিংবা কলাপাড়া নেমে রেন্ট-এ-কার যোগে এবং পটুয়াখালী-কুয়াকাটা রুটের বাসে চড়ে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা পৌঁছাতে পারেন। ঢাকা থেকে উল্লেখিত রুট সমূহের লঞ্চ গুলো বিকাল ৫ থেকে সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে লঞ্চ ঘাট ত্যাগ করে থাকে। লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ৬০০ টাকা। কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটার ২২ কি.মি. রাস্তার চরম বেহাল দশা আর ফেরীর ঝামেলায় এক ঘন্টার রাস্তা যেতে ৪ ঘন্টা সময় লাগে যায়।

কুয়াকাটায় থাকার ব্যবস্থা

কুয়াকাটায় আছে দুইটি ডাক বাংলো এবং সাগর কন্যা পর্যটন হলিডে হোমস। এলজিইডির রয়েছে দুটি, সড়ক ও জনপথের একটি, জেলা পরিষদের দুটি রাখাইন কালচার একাডেমীর একটি রেস্ট হাউস। এসকল স্থানে থাকতে হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পূর্ব অনুমতি নিতে হয়। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগে এ পর্যটন নগরীতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল। আধুনিক মান সম্মত হোটেল গুলোর মধ্যে রয়েছে- হোটেল নীলঞ্জনা, হোটেল বি-ভিউ, হোটেল গোল্ডেন প্যারেজ, হোটেল বীচ-ভেলী, হোটেল ফ্যামিলী হোমস, কুয়াকাটা গেষ্ট হাউজ, হোটেল সাগর কন্যা, হোটেল আল হেরা, হোটেল আকন, হোটেল সি-গার্ডেন, হোটেল স্মৃতি সহ আরো বেশ কিছু হোটেল ও মোটেল।

১. হলিডে হোমস (পর্যটন করপোরেশন), কুয়াকাটা

ফোন : ০১৭১৫-০০১১৪৮৩

ভাড়াঃ নন এসি টুইন : ১১০০ টাকা ও ইকোনমি : ৮০০ টাকা

২. ইয়োথ ইন (পর্যটন করপোরেশন), কুয়াকাটা

ফোন : ০৪৪২৮-৫৬২০৭

ভাড়াঃ নন এসি টুইন : ১৫০০ টাকা ও এসি টুইন : ২৫০০ টাকা

৩. হোটেল স্কাই প‌্যালেস, পর্যটন এরিয়া, কুয়াকাটা

ফোনঃ ০১৭২৭-৫০৭৪৭৯, ০১৭২৭-০৩০২৪৮, ০১৭১৬-৭৪৯০২৭

ভাড়াঃ নন এসি কাপল : ১২০০ টাকা ও নন এসি টুইন : ১৪০০ টাকা

৪. হোটেল বনানী প‌্যালেস, পর্যটন এরিয়া, কুয়াকাটা

ফোনঃ ০১৭১-৩৬৭৪১৯২, ০১৯১১-৬৭২১৩৫, ০১৭১২-৮৪৯৩৭৩

ভাড়াঃ নন এসি টুইন/কাপল : ১২৫০ টাকা (নীচতলা), ১৬৫০ টাকা (উপরের তলা), ডরমেটরী : ৪০০০ টাকা (৮ বেড)

৫. হোটেল নীলাঞ্জনা, রাখাইন মার্কেট, কুয়াকাটা

ফোনঃ ০১৭১২-৯২৭৯০৪

ভাড়াঃ নন এসি সিঙ্গেল : ৮৫০ টাকা, নন এসি টুইন : ১৪৫০ টাকা

৬. বিশ্বাস সি প‌্যালেস হোটেল, বেড়ি বাধ, কুয়াকাটা

ফোনঃ ০১৭৩-০০৯৩৩৫৬

ভাড়াঃ নন এসি টুইন : ১৮০০ টাকা, ৩ বেডেড রুম : ২০০০ টাকা

৭. সাগর কণ্যা রিসোর্ট লিমিটেড, পশ্চিম কুয়াকাটা, কুয়াকাটা

ফোনঃ ০১৭১১-১৮১৭৯৮

ভাড়াঃ নন এসি কাপল : ১২০০ টাকা (নীচতলা), ১৫০০টাকা (উপরের তলা) , নন এস টুইন : ১৮০০ টাকা

৮. হোটেল কুয়াকাটা ইন, সদর রোড, কুয়াকাটা

ফোনঃ ০১৭৫-০০০৮১৭৭

ভাড়াঃ ইকোনমি টুইন/কাপল : ১৫০০ টাকা , ইকোনমি ফ্যামিলি রুম : ১৮৫০ টাকা (১ ডাবল, ১ সিঙ্গেল)

৯. কিংস হোটেল, সাগর পাড়, কুয়াকাটা

ফোনঃ ০১৭১৩-২৭৭৬৩০

ভাড়াঃ ইকোনমি ডাবল : ৬০০ টাকা, নন এসি ডিলাক্স : ৮০০ টাকা

কোথায় খাবেন

ঘরোয়া পরিবেশে মান সম্মত খাবারের জন্য হোটেল সেফার্ড, খাবার ঘর-১, খাবার ঘর-২, এসব খাবারের হোটেল গুলো আপনার আবাসিক হোটেলে খাবার সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া পর্যটন এলাকায় ছোট ছোট অনেক খাবারের হোটেল রয়েছে- কলাপাড়া হোটেল, হোটেল মান্নান, হোটেল বরিশাল ইত্যাদি। এসব হোটেলে কম খরচে মান সম্মত খাবার পাওয়া যায় ও সরবরাহ করা হয়।

/পি.এস

বরিশাল,কুয়াকাটা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close