• বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

একযুগেরও বেশি পরে ঠাকুরগাঁও চেম্বার নির্বাচন, অনিয়মের ছড়াছড়ি

প্রকাশ:  ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:১১
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

দীর্ঘ একযুগ পর ঠাকুরগাঁও চেম্বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনকে নির্বাচন না বলে প্রহসন বলে দাবি করছেন ঠাকুরগাঁওবাসী। গত ১৬ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন দোকান কর্মচারি, গৃহবধূ, ঝাড়দার সহ নানা পেশার মানুষ। যারা কেউ কখনই আয়কর দেননি, আয়কর কী তাও জানেন না অনেকেই। যাদের নেই ট্রেড লাইসেন্স। নেই টি আই এন নম্বর।

এমনকি নির্বাচনও হয়েছে একতরফা। নির্বাচনে অংশ নেয়া তিনটি প্যানেলের দুটি ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি নির্বাচনে দায়িত্বরত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভোট বর্জন করেছেন।

জেলার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর বিভিন্ন জটিলতার কারণে দীর্ঘ প্রায় একযুগেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচন স্থগিত ছিল। অবশেষে গত ১৬ এপ্রিল নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়। শুরু থেকেই নির্বাচনকে প্রভাবিত এবং একতরফা করার জন্য একটি মহল তৎপরতা শুরু করে।

বিষয়টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আলমগীর-মুরাদ-সুদাম প্যানেল ও একক প্যানেলের সৈয়দ আব্দুল করিম ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি নির্বাচনের আহবায়ক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। এরপরেও কোন কাজ না হওয়ায় নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে আলমগীর-মুরাদ-সুদাম প্যানেলের নেতারা ও সৈয়দ আব্দুল করিম নির্বাচন বর্জন করেন ও আদালতে মামলা দায়ের করে অবৈধ সদস্যদের নিয়ে নির্বাচন স্থগিত করণের আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত উক্ত নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন। এর পরই দুলাল-বাবলু প্যানেলের সদস্যরা অন্য বিজ্ঞ আদালতে মামলা করে। বিকেল চারটায় আদালত স্থগিতাদেশ বাতিল করেন।

নির্বাচন বর্জনকারী ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন এ নির্বাচনকে ঘিরে বিপুল সংখ্যক নতুন সদস্য করা হয়েছে। যাদের অনেকেই সেলুন কর্মী, ঝাড়ুদার, গৃহিনী, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, কাঠ মিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি, হিমাগার ও জুটমিলের শ্রমিক। যাদের কেউ আদৌ কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক না। এমনকি চেম্বারের আইন অনুযায়ী সদস্য পদ পাওয়ার যোগ্যও না। এদের মধ্যে কেউ কেউ কখনই আয়কর দেননি, আয়কর কী তাও জানেন না অনেকেই। অনেকেরই নেই ট্রেড লাইসেন্স। নেই টি আই এন নম্বর। এদের অনেকের আবার সদস্য হওয়ার পর করা হয়েছে টিন সার্টিফিকেট, যা নিয়ম বহির্ভূত। শুধু মাত্র একটি পক্ষকে সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এমনটা করা হয়েছে।

১৯৯৯ সালে ২৪ জন সদস্য নিয়ে ঠাকুরগাঁও চেম্বারের যাত্রা শুরু হয় সে সময় নির্বাচনে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোদাচ্ছের হোসেন সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে আব্দুস সালাম এবং ২০০৫ সালে ওসমান মিয়া সভাপতি নির্বাচিত হন। ওসমান মিয়ার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক অনিয়ম যা এখনও চলমান।

ঠাকুরগাঁও চেম্বারের এক তথ্যে দেখা যায়, ডিসেম্বর ২৩ সালে ভোটার ছিল ৭০৪, জানুয়ারি ২৪ এ ৪৯১০ আর এখন ৫৩৩৮ জন ভোটার। জেলার ব্যবসায়ী ও সচেতন মহল মনে করেন ৭০৪ জনই ঠাকুরগাঁও চেম্বারের প্রকৃত ভোটার এবং সদস্য। এর বাইরে যাদের ভোটার করা হয়েছে তাদের সবাইকে একটি ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেটের স্বার্থে অবৈধ পন্থায় করা হয়েছে এবং এদের কেউই ব্যবসায়ী নন।

নির্বাচন বর্জনকারী সৈয়দ আব্দুল করিম এবং আলমগীর-মুরাদ-সুদাম প্যানেলের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে পক্ষপাতমূলক, বে-আইনি, একতরফা, অনিয়মের নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করে সুষ্ঠ ও স্বচ্ছ প্রকৃত ব্যবসায়ীদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রনয়ন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানান।

ভোট বর্জনকারী ব্যবসায়ীগণ আরো বলেন, একতরফা প্রতিদ্বন্দ্বি ছাড়া নির্বাচনে বিজয়ী বলে দাবিদার চেম্বার নেতারা কার নেতৃত্ব দেবেন ব্যবসায়ীদের না কি সেলুন কর্মী/কারিগর, গৃহিনী, ঝাড়ুদার, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, কাঠ মিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি, হিমাগার ও জুটমিলের শ্রমিকদের।

নির্বাচন,ঠাকুরগাঁও,অনিয়ম

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close